সিলেটে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের-প্রাক-নির্বাচনী উদ্যোগে ‘আঞ্চলিক পরামর্শ সভা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে বক্তব্য দেন প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। বৃহস্পতিবার নগরের মির্জাজাঙ্গাল এলাকার একটি রেস্তোঁরা মিলনায়তনে
সিলেটে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের-প্রাক-নির্বাচনী উদ্যোগে ‘আঞ্চলিক পরামর্শ সভা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে বক্তব্য দেন প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। বৃহস্পতিবার নগরের মির্জাজাঙ্গাল এলাকার একটি রেস্তোঁরা মিলনায়তনে

নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে সংস্কার অপরিহার্য: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে সংস্কার অপরিহার্য বলে মন্তব্য করেছেন বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘সংস্কার একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এই সরকার কিছু করে যাবে, কিছু করতে পারবে না। যেটুকু বাকি থাকবে, এখন যে সময়টুকু আছে, এই সরকারকে বলতে হবে, আমি চলে যাওয়ার আগে বাকিটুকু কি করে যাব? সেই স্বচ্ছতাটা প্রস্তাব করছি আমরা। ওনারা (অন্তর্বর্তী সরকার) বলুক যে আমরা যাওয়ার আগে এই বাকি কাজটুকু শেষ করে দিয়ে যাব।’

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেট নগরের মির্জাজাঙ্গাল এলাকার একটি রেস্তোরাঁ মিলনায়তনে প্রাক্‌–নির্বাচনী উদ্যোগের অংশ হিসেবে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত আঞ্চলিক পরামর্শ সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এসব কথা বলেন। এর আগে সভায় উপস্থিত নাগরিকেরা ‘আগামী নির্বাচনে কী প্রত্যাশায় ভোট দেবেন?’ এবং ‘নবনির্বাচিত সরকারের কাছে প্রধান দাবি কী’ বিষয়ে নিজেদের মতামত দেন।

বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত চলা সভায় রাজনীতিবিদ, আইনজীবী, উন্নয়নকর্মী, শিক্ষক, সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মী, অধিকারকর্মী, সমাজ সংগঠক, শিক্ষার্থীসহ সিলেটের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। তাঁরা জানান, নাগরিকেরা আগামী সরকারের কাছে সবার আগে দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশ, নিরপেক্ষতা, সুশাসন, জবাবদিহি, দেশপ্রেম, বৈষম্য বিলোপ, কর্মসংস্থান, স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা চান।

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা যে উৎসাহ নিয়ে শ্বেতপত্র ও অন্যান্য টাস্কফোর্সের রিপোর্ট বা অন্যান্য তৈরি করেছিল, আমাদের পরিতাপের জায়গা হলো, প্রধান উপদেষ্টার ওই আকাঙ্ক্ষা, ওনার যে সহযোগীরা এবং যে আমলাতন্ত্র সাথে আছে, ওনারা এতখানি এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে নাই। সে জন্য আমরা মনে করি যে আগামী দিনে নির্বাচনী ইশতেহারের ভেতরে এই প্রতিশ্রুতিগুলোকে স্থান দিতে হবে এবং নতুন যে সরকার আসবে, এটার ধারাবাহিকতাটা রক্ষা করবে।’

নাগরিক প্ল্যাটফর্মের এই আহ্বায়ক আরও বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে, বাংলাদেশকে একটা মধ্যম আয়ের জায়গাতে নিয়ে যেতে হলে এই সংস্কারগুলো অপরিহার্য। সংস্কারবিরোধী জোট যেটা সৃষ্টি হয়েছিল, সেটা ভাঙতে হলে এই ধরনের পদক্ষেপগুলো অপরিহার্য। আমরা এটা প্রত্যাশা করি, রাজনীতিবিদেরা তারা এটা ধারণ করবে ইশতেহারের মধ্যে। সব এই সরকার করে যেতে পারবে বলে আমরা মনে করি না। আগামী দিনের সরকারকেও দায়িত্ব নিতে হবে।’

এর আগে পরামর্শ সভায় সংস্কার, রাজনীতিসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। রাজনীতিবিদ, আমলা ও ব্যবসায়ী মিলে বিগত সময়ে বিশেষ একটা গোষ্ঠী দেশে তৈরি হয়েছিল বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি–বিষয়ক শ্বেতপত্র তৈরির প্রসঙ্গেও কথা বলেন।

সংস্কার প্রস্তাব প্রণয়ন করা যত সহজ, সেটা বাস্তবায়ন করা এত সহজ না বলে মন্তব্য করেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেছেন, ‘আগামী দিনে যাঁরা রাজনীতিতে দেশ চালানোর কথা চিন্তা করেন, তাঁদের এটা সাবধান বাণী। বড় বড় রাজনৈতিক দল যারা নির্বাচনে যাবেন, ঢাকাতে যখন তাদের সঙ্গে আলোচনা করি, তারা সকলেই একটাই কথা বলেন, ইলেকশন তো হলো, সরকার নাহয় হলো, তারপর চালাব কেমন করে? এই চালাব কেমন করে, এমন ভয় কিন্তু অনেকের মধ্যে আসছে।’

নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক বলেন, ‘সামনের দিকে একটা নতুন রাজনৈতিক সমঝোতা বা বন্দোবস্ত রাখতে হবে। সেই সমঝোতা বা বন্দোবস্ত পাওয়ার জন্য সংস্কার লাগবে। এই সংস্কার এই সরকার কিছু করেছে, সব করতে পারবে না। আমাদেরও আক্ষেপ আছে, এটা পাবলিকলি বলেছি। প্রথম দিকে যে উৎসাহ ছিল, এখন অনেক স্তিমিত হয়ে গেছে। তো, এখন এই সংস্কার কার্যক্রম দিয়ে এটা ভাঙতে হবে। আগামী দিনে নির্বাচনের ভেতর দিয়ে আমরা সংস্কারের কাজকে অব্যাহত রাখতে হবে।’

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘সমাজে নাগরিকেরা যদি চাহিদা না দেন, নাগরিকেরা দাবি করবেন, উচ্চ স্বরে কথা বলবেন। নাগরিকেরা যদি কথা না বলেন, তাহলে রাজনীতিবিদেরা কিন্তু ঠিকপথে থাকবে না, আমলারা আমাদের কথা শুনবে না। এই জন্য নাগরিকদের বড় কণ্ঠস্বর নিয়ে আসতে হবে।’

পরামর্শ সভা শুরু হয় জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে। পরে দুটো ভিডিও দেখানো হয়। সভার ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষজন বক্তব্য দেন। এর মধ্যে সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী, মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির নুরুল ইসলাম, সিপিবির সিলেটের সভাপতি সৈয়দ ফরহাদ হোসেন, আইনজীবী ইরফানুজ্জামান চৌধুরী ও সৈয়দ মনির হেলাল, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হীরা আক্তার প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।