ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায় তারা মিয়ার হাতে 'জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে স্বাস্থ্য কার্ড বিতরণের পর সমালোচনার মুখে ফেরত চেয়েছে প্রশাসন। ছবিটি গত মঙ্গলবারের
ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায় তারা মিয়ার হাতে 'জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে স্বাস্থ্য কার্ড বিতরণের পর সমালোচনার মুখে ফেরত চেয়েছে প্রশাসন। ছবিটি গত মঙ্গলবারের

ময়মনসিংহে ‘জুলাই যোদ্ধা’ স্বাস্থ্য কার্ড বিতরণের পর সমালোচনার মুখে ফেরত চাইল প্রশাসন

ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে স্বাস্থ্য কার্ড বিতরণের পর যুবলীগ নেতাকে সে কার্ড দেওয়া হয়েছে দাবি করে সমালোচনা শুরু হয়। ওই অবস্থায় বিতরণ করা স্বাস্থ্য কার্ড ফেরত চেয়েছে প্রশাসন, যাচাই শুরু করেছে কাগজপত্রও।

এ ঘটনা তদন্তে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে উপজেলা প্রশাসন।

গত মঙ্গলবার বিকেলে গফরগাঁও উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের সহযোগিতায় এবং উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ মধ্যে এই স্বাস্থ্য কার্ড বিতরণ করা হয়। এই অনুষ্ঠানে যাঁদের হাতে স্বাস্থ্য কার্ড তুলে দেওয়া হয়, তাঁদের মধ্যে মো. তারা মিয়া ছিলেন। তিনি উপজেলা মশাখালী ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য দাবি করে গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা শুরু হয়।

গফরগাঁওয়ে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ফাহমি গোলন্দাজের আস্থাভাজন পৌরসভার সাবেক মেয়র ইকবাল হোসেনের সঙ্গে তারা মিয়ার ছবি ছড়িয়ে পড়ে। তারা মিয়া মশাখালী টানপাড়া গ্রামের হক মিয়ার ছেলে।

মশাখালী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম দাবি করেন, তারা মিয়া সাবেক সংসদ সদস্য ফাহমি গোলন্দাজ ও সাবেক পৌর মেয়র ইকবাল হোসেনের কাছের লোক। তাঁর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন মিছিল-মিটিংয়ে অংশগ্রহণের ছবি ও ভিডিও আছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর এক দিন রাস্তা দিয়ে চলাচলের সময় নিজের ছোট ভাইয়ের লাঠির আঘাতে চোখে আঘাত পান। এর সঙ্গে জুলাই আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই।

তবে তারা মিয়া মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। ২০০০ সালের দিকে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদকও ছিলাম। যেসব ছবি ছড়িয়েছে, সেগুলো এডিট (সম্পাদনা) করা। গফরগাঁওয়ে আন্দোলনের সময় পরিবেশ ভালো না থাকায় গাজীপুরের মাওনাতে আন্দোলনে অংশ নিই। সেখানে আমি ডান চোখে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছে। আমি যে জুলাই আন্দোলনে আহত, তা প্রমাণ করব।’

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ময়মনসিংহ জেলা শাখার আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন বলেন, তালিকা তৈরির সময় হয়তো সঠিকভাবে যাচাই করা হয়নি। সে কারণে এমনটি হতে পারে। আন্দোলনে ছাত্রলীগের অনেকে ছিলেন। যুবলীগ নেতা তারা মিয়া প্রকৃতই আন্দোলনে আহত হয়ে থাকলে কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু ভিন্ন ঘটনাকে যদি জুলাই আন্দোলনে আহত দেখিয়ে রাষ্ট্রীয় সুবিধা নেন, তাহলে সেটি যাচাই করি বাতিল করা হোক। তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা হলে গফরগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এন এম আবদুল্লাহ আল-মামুন গফরগাঁও উপজেলা প্রশাসনের ফেসবুকে জানান, কোনো ভুল হয়ে থাকলে বা কেউ মিথ্যা তথ্য দিয়ে তালিকাভুক্ত হলে তা সংশোধন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে তারা মিয়ার আবেদনের সঙ্গে জমা দেওয়া কাগজপত্র সংগ্রহ করে সেগুলো যাচাই–বাছাই করা হচ্ছে।

ইউএনও বলেন, উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) আহ্বায়ক এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার প্রতিনিধিকে সদস্যসচিব করে কমিটি গঠন করা হয়। এতে পুলিশ প্রতিনিধি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি, গফরগাঁও উপজেলার আহত জুলাই যোদ্ধাদের একজন প্রতিনিধিকে সদস্য করা হয়েছে।