ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনে বিএনপি অনেক আগেই দলের কেন্দ্রীয় সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য কাজী রফিকুল ইসলামকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করে। মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে তিনি নির্বাচনী এলাকায় দিন-রাত গণসংযোগ, সভা-সমাবেশ, উঠানবৈঠক ও প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
তবে মনোনয়নপত্র দাখিলের নির্ধারিত সময়ের একদিন আগে গতকাল রোববার এই আসনে সোনাতলা উপজেলা বিএনপির সভাপতি এ কে এম আহসানুল তৈয়বকেও দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত দলীয় মনোনয়নের চিঠি রোববার রাতে এ কে এম আহসানুল তৈয়ব নিজেই তাঁর ফেসবুক বিষয়টি শেয়ার করেন।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, কাজী রফিকুল ইসলামকে মনোনয়ন দেওয়ার পর থেকেই এ কে এম আহসানুল তৈয়ব এলাকা ছেড়ে ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। অসুস্থতার কথা বলে তিনি কাজী রফিকুল ইসলামের পক্ষে কোনো নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে অংশ নেননি। তাঁর সমর্থিত নেতা-কর্মীদেরও নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে দেখা যায়নি। রোববার রাতে দলীয় মনোনয়নের চিঠি হাতে পাওয়ার পর তিনি এলাকায় ফিরে আসেন। এরপর দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন।
বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম (বাদশা) দাবি করেন, বগুড়া-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তন হয়নি। কাজী রফিকুল ইসলামই দলের মূল প্রার্থী। তবে কৌশলগত কারণে এ কে এম আহসানুল তৈয়বকেও দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আহসানুল তৈয়ব দলের ‘ড্যামি’ প্রার্থী।
রেজাউল করিম বাদশা আরও বলেন, রোববার গুলশানের দলীয় কার্যালয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করেন এ কে এম আহসানুল তৈয়ব। সে সময় তিনি বগুড়া-১ আসনে দলের প্রার্থী কাজী রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ঋণখেলাপিসহ নানা অভিযোগ তোলেন। পরে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তাঁকে আশ্বস্ত করেন—কোনো কারণে কাজী রফিকুল ইসলামের মনোনয়ন বাতিল হলে তিনিই দলের প্রার্থী হবেন। সে কারণে তাঁকেও প্রাথমিকভাবে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। দলের চূড়ান্ত প্রার্থী কে হবেন, তা জানতে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে ঋণখেলাপির অভিযোগ ভিত্তিহীন। আহসানুল তৈয়বকে ড্যামি প্রার্থী করা হলেও শেষ পর্যন্ত দলীয় প্রতীক তাঁকেই দেওয়া হবে বলে তিনি আশাবাদী।
এ বিষয়ে এ কে এম আহসানুল তৈয়বের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া-১ আসনটি ১৯৭৩ সালের নির্বাচন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের দখলে ছিল। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন বিএনপির প্রার্থী ওয়াজেদ হোসেন তরফদার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনেও আসনটি বিএনপির দখলে ছিল। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি মনোনয়ন দেয় ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শোকরানাকে। তাঁকে হারিয়ে আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক প্রয়াত আবদুল মান্নান বিজয়ী হন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে মোহাম্মদ শোকরানা ২০১৯ সালের ৯ অক্টোবর বিএনপি থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন।
এদিকে ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এবং ২০১৮ সালে বিএনপির প্রার্থী কাজী রফিকুল ইসলামকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আবদুল মান্নান। ২০১৯ সালে তাঁর মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনে তাঁর স্ত্রী সাহাদারা মান্নান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মোহাম্মদ শোকরানা ২ হাজার ৯৮২ ভোট পান। তিনিসহ এ আসনে মোট ১০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তাঁদের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাহাদারা মান্নান নৌকা প্রতীকে ৫১ হাজার ৪৯৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন।