
সাদা রঙের জাল দিয়ে তৈরি ছোট একটি ঘরে ৭১টি টবে রাখা আছে গাঁদা ফুলের গাছ। গাছগুলোতে ফোটা হলুদ ও খয়েরি রঙের ফুলের ওপর ওড়াউড়ি করছে লাল, সবুজ, নীলসহ বাহারি রঙের প্রজাপতি। এসব প্রজাপতির নামও বাহারি—মিঞ্জি, বিন্তি, চিতা, কেশবতী।
আজ শুক্রবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তন এলাকায় অনুষ্ঠিত ১৫তম প্রজাপতি মেলার দৃশ্য এটি। প্রজাপতি সংরক্ষণ ও গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১০ সাল থেকে প্রতিবছর এই মেলার আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের কীটতত্ত্ব শাখা। এবারের প্রজাপতি মেলার স্লোগান ছিল ‘উড়লে আকাশে প্রজাপতি, প্রকৃতি পায় নতুন গতি’।
মেলা উপলক্ষে সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি দর্শনার্থীদেরও ভিড় বাড়তে থাকে। অভিভাবকদের হাত ধরে মেলায় এসেছিল শিশু-কিশোরেরাও। হাতে ছিল নানা রঙের ফেস্টুন। কেউ কেউ পরেছিল মুখোশ। কারও গালে আঁকা প্রজাপতি। তরুণ-তরুণীরা এসেছিলেন শাড়ি-পাঞ্জাবি পরে। বাদ যাননি প্রবীণ ব্যক্তিরাও।
প্রজাপতির ডানার আদলে তৈরি জামা পরে বাবা শহীদুল ইসলামের হাত ধরে মেলায় এসেছিল দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী আনিকা ইসলাম। সে বলে, ‘প্রজাপতি দেখেছি, ভালো লাগছে। অনেক প্রজাপতি দেখেছি। প্রজাপতির ডানা আছে, আমারও ডানা আছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ফারহানা আক্তার বলেন, ‘প্রজাপতি আমাদের সংরক্ষণ করা যে দরকার, সেটা এ মেলায় আসলে আমাদের আবারও স্মরণ করা হয়।’
দিনব্যাপী এ মেলায় আরও ছিল শিশু-কিশোরদের জন্য প্রজাপতিবিষয়ক ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা, প্রজাপতি ও প্রকৃতিবিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতা, প্রজাপতির আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও প্রতিযোগিতা, প্রজাপতিবিষয়ক ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী, প্রজাপতির হাট দর্শন, প্রজাপতির আদলে ঘুড়ি ওড়ানো, বারোয়ারি বিতর্ক প্রতিযোগিতা এবং প্রজাপতি চেনা প্রতিযোগিতা। মেলা উপলক্ষে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, প্রজাপতির গল্প নিয়ে পুতুলনাচের (পাপেট শো) আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া বেলা সাড়ে ১১টায় মেলা উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ কামরুল আহসান।
প্রজাপতি সংরক্ষণে বিশেষ অবদান রাখায় এবারের মেলায় ‘বাটারফ্লাই অ্যাওয়ার্ড’ দেওয়া হয় বিশিষ্ট বন্য প্রাণী বিশারদ ও সংরক্ষণবিদ আলী রেজা খানকে। এ ছাড়া যৌথভাবে ‘বাটারফ্লাই ইয়াং ইনথুসিয়াস্ট অ্যাওয়ার্ড’ দেওয়া হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার রাব্বি ও নূরে আফসারীকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে কমেছে প্রজাপতি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ১১০ প্রজাতির প্রজাপতি ছিল। ২০১৩ সালে প্রজাপতির প্রজাতির সংখ্যা ছিল ১০০। মাত্র ১০ বছরের ব্যবধানে ২০২৩ সালে একটি গবেষণা জরিপে ৭০ প্রজাতির প্রজাপতির অস্তিত্ব পান প্রজাপতি গবেষণায় সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশদূষণ ও প্রজাপতির বাসস্থান ধ্বংসের কারণে প্রজাপতি বিলুপ্ত হচ্ছে বলে মনে করেন প্রাণী গবেষকেরা।
প্রজাপতি মেলার আহ্বায়ক ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘প্রজাপতি মেলার মূল উদ্দেশ্য, প্রজাপতি থাকলে পরাগায়ন হবে এবং আমরা পরিবেশকে ভালো রাখতে পারব। ১৫ বছর আমরা এই মেলা ধরে রেখেছি এবং সর্বস্তরের মানুষ এখানে আসছে। এটি প্রমাণ করে, প্রজাপতি টিকে থাকবে, থাকা উচিত। আমরা সংরক্ষণ করব এবং প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে রাখব।’