মাথার কালো টুপি আকাশে ছুড়ে ছবি তুলছেন সমাবর্তনে আসা গ্র্যাজুয়েটরা। আজ বুধবার সকালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার এলাকায়
মাথার কালো টুপি আকাশে ছুড়ে ছবি তুলছেন সমাবর্তনে আসা গ্র্যাজুয়েটরা। আজ বুধবার সকালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার এলাকায়

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

গাউন পরা শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাসে মুখর ক্যাম্পাস

কেউ বন্ধুদের সঙ্গে ছবি তুলছেন, কেউ ক্যাম্পাসে হাঁটছেন হাসিমুখে। কারও গায়ে, কারও কাঁধে ঝোলানো গাউন। দেখেই বোঝা যায় সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। তাঁদের একের পর এক সেলফি, হাসির ঝলক আর আড্ডায় যেন মুখর পুরো ক্যাম্পাস।

আজ বুধবার সকালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা যায় উৎসবমুখর এই দৃশ্য। উপলক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম সমাবর্তন। প্রায় এক দশক পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই সমাবর্তনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে সম্মানসূচক ডি লিট উপাধি প্রদান করবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

এবারের সমাবর্তনে ২২ হাজার ৫৮৬ শিক্ষার্থী নিবন্ধন করেছেন। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে গত সোমবারই গাউন বিতরণ শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। ওই দিন থেকেই নিজ বিভাগে এসে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা গাউন নিয়ে যাচ্ছেন। গাউন হাতে পেয়েই ক্যাম্পাসে ছবি তোলার হিড়িক তাঁদের। কেউ প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে, কেউবা নিজের সন্তান কিংবা মা-বাবাকে নিয়ে দেখাতে এসেছেন স্মরণীয় এই প্রাঙ্গণ।

সাবেক শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে মুখর ক্যাম্পাস

আজ সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলস্টেশন, দক্ষিণ ক্যাম্পাস, বোটানিক্যাল গার্ডেন, জীববিজ্ঞান অনুষদ, শহীদ মিনার, কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ঝুপড়ি,  সমাজবিজ্ঞান ঝুপড়ি, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠসহ পুরো ক্যাম্পাসেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। তাঁদের একজন রাজনীতিবিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী আসিফ মাহমুদ। বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার ফাঁকে তিনি জানান, প্রায় সাত বছর পর তিনি ক্যাম্পাসে এসেছেন। পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হচ্ছে, খুব ভালো লাগছে। এই দিনটির জন্যই অপেক্ষায় ছিলেন।

১০ বছর পর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক ইউনূস

মুহাম্মদ ইউনূস চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক। তিনি  ১৯৭২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। পরে ১৯৭৫ সালে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান। ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত মুহাম্মদ ইউনূস এই পদেই কর্মরত ছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ও অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর ২০০৬ সালে মুহাম্মদ ইউনূস একবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন। পরে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে অর্থনীতি বিভাগ পরিদর্শনে আসেন। সেই হিসাবে প্রায় ১০ বছর পর তিনি ক্যাম্পাসে আসছেন। আজ অনুষ্ঠানের এক ফাঁকে অর্থনীতি বিভাগে যেতে পারেন।

অনুষ্ঠানসূচি

সমাবর্তনে মূল অনুষ্ঠান হবে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে। সেখানে তৈরি করা হয়েছে বিশাল মঞ্চ। সেখানেই বক্তব্য দেবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। সঙ্গে সরকারের আরও চার উপদেষ্টা উপস্থিত থাকবেন। তাঁরা হলেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক–ই–আজম, বিদ্যুৎ ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ।

সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এসে বিভিন্ন ভঙ্গিতে ছবি তুলতে দেখা যায় সাবেক শিক্ষার্থীদের

অনুষ্ঠানে অতিথিদের আসন গ্রহণ শুরু হবে বেলা দেড়টায়। বেলা ১টা ৪৫ মিনিটে সমাবর্তন শোভাযাত্রা হবে। তবে এতে কোনো গ্র্যাজুয়েট অংশ নিতে পারবেন না। পরে বেলা দুইটায় জাতীয় সংগীতের মধ্যে দিয়ে মূল অনুষ্ঠান শুরু হবে। প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য, ডি লিট গ্রহণ, শিক্ষা উপদেষ্টার বক্তব্য, উপাচার্যের বক্তব্য, দুই সহ-উপাচার্যের বক্তব্য মিলিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হবে বিকেল চারটায়।

দীর্ঘদিন পর সহপাঠীকে কাছে পেয়ে জড়িয়ে ধরেছেন একজন

১৯৬৬ সালের ১৮ নভেম্বর মাত্র ৪টি বিভাগে ২০০ শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের। শুরুতে শিক্ষক ছিলেন মাত্র সাতজন। প্রতিষ্ঠার প্রায় ছয় দশকে সবকিছুরই পরিধি বেড়েছে। বর্তমানে ক্যাম্পাসের আয়তন ২ হাজার ৩১২ একর। ১০টি অনুষদের অধীন বর্তমানে ৪৮টি বিভাগ, ৬টি ইনস্টিটিউট ও ৫টি গবেষণাকেন্দ্র রয়েছে। এখানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৮ হাজার ৫১৫। এর বিপরীতে শিক্ষক ৯৯৬, কর্মকর্তা ৪৪৫ ও কর্মচারী রয়েছেন ১ হাজার ৫২৮ জন। শিক্ষার্থীদের আবাসনের জন্য ১৪টি হল রয়েছে। এর মধ্যে ছাত্রদের ৯টি আর ছাত্রীদের জন্য ৫টি। পাশাপাশি একটি হোস্টেলও রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সনদ ছাড়াও এমফিল, পিএইচডি, এমডি, এমএস (মেডিকেল সায়েন্স) ডিগ্রি দেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় চালুর পর এ নিয়ে পাঁচবার সমাবর্তনের অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পেরেছে কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ সমাবর্তন হয়েছিল ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি। এতে অংশ নিয়েছিলেন ৭ হাজার ১৯৪ জন শিক্ষার্থী। ২০০৪ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত পাস করা শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। তৃতীয় সমাবর্তন হয় ২০০৮ সালে। দ্বিতীয় সমাবর্তন হয় ১৯৯৯ সালে। আর প্রথম সমাবর্তন হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ২৮ বছর পর ১৯৯৪ সালে।