
সাতক্ষীরার সুস্বাদু হিমসাগর আম পাড়ার সময়সূচি পাঁচ দিন এগিয়ে আনার পর বাজারে একসঙ্গে বিপুল পরিমাণ আম উঠেছে। তবে প্রত্যাশিত দাম না পেয়ে হতাশার কথা জানিয়েছেন চাষিরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার ও আজ শুক্রবার জেলার বড়বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, এক কিলোমিটারজুড়ে শুধু হিমসাগর আমবোঝাই ভ্যান ও পিকআপের সারি। প্রচণ্ড গরমে আম দ্রুত পেকে যাওয়ায় ও হঠাৎ আমার পাড়ার সময়সূচিতে বদল আনায় একসঙ্গে প্রচুর আম পেড়েছেন চাষিরা। ফলে বাজারে সরবরাহ বেড়ে গেছে। বাজারে মণপ্রতি হিমসাগর আম বিক্রি হচ্ছে ১৫০০ থেকে ২২০০ টাকায়।
চাষিরা জানিয়েছেন, উৎপাদন খরচের তুলনায় দাম না পাওয়ায় তাঁরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন। হিমসাগর আম পাড়ার পর দুই-চার দিন সংরক্ষণ করা সম্ভব হয় না, দ্রুত পচে যায়। সাতক্ষীরায় হিমাগার না থাকায় আম সংরক্ষণের সুযোগও নেই। ফলে লোকসানের শঙ্কা আরও বেড়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, চাষিদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত বুধবার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসক ও কৃষি বিভাগের উদ্যোগে একটি বৈঠক হয়। এতে হিমসাগর আম পাড়ার নির্ধারিত সময়সূচি পাঁচ দিন এগিয়ে ২০ মে থেকে ১৫ মে করা হয়। এরপর রাতেই অনেকে আম পেড়ে বৃহস্পতিবার সকালে বাজারে তোলেন।
সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুর এলাকার আমচাষি হোসেন আলী বলেন, ‘মহাজনের কাছ থেকে দাদন নিয়ে অনেক পরিশ্রম করে আম চাষ করি। কিন্তু এবার দাম পাচ্ছি না। গরমে দ্রুত পেকে যাওয়ায় একসঙ্গে বাজারে আম চলে এসেছে। ফলে দাম পড়ে গেছে।’
একই উপজেলার ছনকা গ্রামের আমচাষি আবদুল হাকিম জানান, তিনি পাঁচ বিঘা জমির একটি বাগান ইজারা নিয়ে আম চাষ করেছেন। আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা খরচ হয়েছে তাঁর। তিনি বলেন, বাজার ধরার আশায় আজ শুক্রবার আম তুলেছেন। কিন্তু বাজারে হিমসাগর আম বিক্রি হচ্ছে মণপ্রতি ১৫০০ থেকে ২২০০ টাকায়। তিনি আশা করেছিলেন, ২৮০০ থেকে ৩২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করতে পারবেন। এই দামে লোকসানে পড়ে যাবেন বলে জানান তিনি।
এদিকে গোবিন্দভোগ ও গোলাপখাস আমের চাষিরাও পড়েছেন বিপাকে। গোবিন্দকাটি গ্রামের চাষি মফিজুল ইসলাম বলেন, হঠাৎ হিমসাগর পাড়ার তারিখ ঘোষণায় তাঁদের আমের বিক্রি বন্ধ হয়ে গেছে। আগে যে আম ২ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি করতেন, এখন সেটাও কেউ নিচ্ছে না।
সাতক্ষীরা বড়বাজার কাঁচা-পাকা মাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রওশন আলী বলেন, বৃহস্পতি ও শুক্রবার মিলিয়ে বাজারে কমপক্ষে পাঁচ হাজার মণ হিমসাগর আম উঠেছে। গত বছরের তুলনায় এবার দাম ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কম।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম জানান, এ বছর জেলায় ৪ হাজার ১৩৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। আম চাষে যুক্ত আছেন ১৩ হাজার ১০০ কৃষক। এ মৌসুমে প্রায় ৭০ মেট্রিক টন আম বিদেশে রপ্তানি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। জেলায় যে পরিমাণ আম উৎপাদিত হয় তার ৪০ শতাংশই হিমসাগর। তিনি মনে করেন, একসঙ্গে প্রচুর আম বাজারে আসায় দাম কিছুটা কমে গেছে। তারপরও চাষিরা লোকসানে পড়বেন না।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, চাষিরা দাম বেশি পাওয়ার আশায় একসঙ্গে আম পেড়ে ফেলেছেন। নিয়ম হচ্ছে একটি গাছ থেকে চারবারে আম পাড়তে হবে। কিন্তু চাষিরা একসঙ্গে সব আম পেড়ে বাজারজাত করায় দাম কমে গেছে।