শর্ষেখেতে হলুদের ঢেউ। চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার চানখাঁরকান্দি এলাকায়
শর্ষেখেতে হলুদের ঢেউ। চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার চানখাঁরকান্দি এলাকায়

এ যেন এক টুকরা হলুদের রাজ্য

অতিবৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে কৃষক আবুল কালাম তাঁর বেশ কিছু জমিতে ধানের আবাদ করতে পারেননি এবার। গত সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে তাঁর সেসব জমি শুকিয়ে আবাদযোগ্য হয়। তিনি ৩০ শতাংশ জমিতে আবাদ করেন উন্নত জাতের শর্ষে। তাঁর শর্ষেখেত ছেয়ে গেছে ফুলে ফুলে। ধান আবাদ করতে না পারার ক্ষতি পুষিয়ে শর্ষেখেতেই আর্থিক সচ্ছলতার স্বপ্ন বোনার কথা জানালেন তিনি।

আবুল কালামের বাড়ি চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার আধুরভিটি গ্রামে। তাঁর মতো উপজেলার প্রায় সাত হাজার কৃষক আবাদ করেছেন উন্নত জাতের শর্ষে। সেসব শর্ষেখেত এখন ফুলে ফুলে সাজানো। বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে শর্ষে ফুলের হলুদ ঢেউ, হলুদ হাসি। বাম্পার ফলনের আশায় কৃষকেরা।

মতলব উত্তর উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্র জানায়, চলতি শীত মৌসুমে এবার উপজেলার ১ হাজার ৫৫৫ হেক্টর জমিতে শর্ষে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। গত সেপ্টেম্বর থেকে আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত শর্ষের আবাদ হয় প্রায় ৬০০ হেক্টর জমিতে। আগামী জানুয়ারির মধ্যেই লক্ষ্যমাত্রার সব জমিতে শর্ষের আবাদ শেষ হবে। প্রায় ৭ হাজার কৃষক শর্ষে আবাদ করছেন। বারি ৯, ১১, ১৪, ১৮, ৪ ও ৯ জাতের শর্ষের আবাদ হচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন বিল ও চরাঞ্চলে।

উপজেলার বোরোচর, চরওয়েস্টার, লক্ষ্মীপুর, আমুয়াকান্দা,  জীবগাঁও, আধুরভিটি, ছেঙ্গারচর, বালুচর, ফতেপুরসহ আরও কয়েকটি এলাকায় দেখা যায়, সেখানকার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে শর্ষেখেত। ফুলে ফুলে সাজানো এসব খেতে বয়ে যাচ্ছে হলুদ ঢেউ। শর্ষে ফুলের হলুদ হাসিতে চারপাশ হলুদময়। এ যেন এক টুকরা হলুদের রাজ্যই। ফুলের ঘ্রাণ ও সুগন্ধ ছেয়ে গেছে সর্বত্র। মৌমাছিরা ফুলের ডগায় বসে গুঞ্জন ছড়াচ্ছে জোরেশোরে।

কথা হয় উপজেলার আধুরভিটি গ্রামের কৃষক আবুল কালাম, ছেঙ্গারচরের মো. সেলিম মিয়া, জীবগাঁওয়ের দুলাল মিয়া, ফতেপুরের মিজানুর রহমান, বোরোচরের আকবর মিয়াসহ কয়েকজনের সঙ্গে। দুলাল মিয়া বলেন, এবার জলাবদ্ধতার কারণে তাঁর বেশ কিছু জমিতে ধানের আবাদ করতে পারেননি। শুকালে গত সেপ্টেম্বরে ২৫ শতাংশ জমিতে বারি-৯ জাতের শর্ষের আবাদ করেন। আবহাওয়া ভালো থাকায় ফলন খুব ভালো হবে বলে আশা করছেন। শর্ষেখেত ভরে গেছে ফুলে। ভালো ফলন হলে সেগুলো বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হবেন, এমন আশা তাঁর।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফয়সাল মোহাম্মদ আলী বলেন, গতবারের চেয়ে এবার বেশি জমিতে শর্ষের আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় শর্ষের বাম্পার ফলন হবে। কৃষকেরা শর্ষের দানা বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। শর্ষের আবাদে কৃষকদের নানাভাবে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কৃষকেরাও শর্ষের আবাদে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।