
কেউ খেতে জীবাণুনাশক ছিটাচ্ছেন, কেউ পরিচর্যায় ব্যস্ত। আবার কোথাও তোলা হচ্ছে কাঁচা-পাকা টমেটো। চাষিরাও এসব টমেটো বাছাই করে খেতের পাশেই স্তূপ করছেন। সব মিলিয়ে যেন উৎসবের আমেজ। চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার গন্ডামারা ও সরল ইউনিয়নের গ্রামগুলোর বর্তমান চিত্র এটি। এই এলাকায় ঝুঁকি নিয়ে আগাম টমেটো চাষ করে লাভবান হয়েছেন চাষিরা।
অন্য বছর অক্টোবরে টমেটো চাষ শুরু হতো। কারণ, এ সময়টাতে সাধারণত বৃষ্টি হয় না। তবে এবার আগস্টেই শুরু হয়েছে টমেটো চাষ। বৃষ্টির পানিতে ক্ষতি রোধে চাষিরা রেখেছেন বিশেষ ব্যবস্থাও। পানি জমে যেন টমেটোগাছের ক্ষতি না হয় এ জন্য খেতজুড়ে কেটেছেন সেচের নালা। আর এটিই সাফল্য এনে দিয়েছে।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্র জানায়, গন্ডামারা, সরল, বাহারছড়া, বৈলছড়ী, খানখানাবাদ, কাথরিয়া, শীলকূপ, চাম্বল ও পুইছুড়ি ইউনিয়নে এবার ৪১৫ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হয়েছে। এর মধ্যে গন্ডামারা ও সরল ইউনিয়নেই চাষ হয়েছে ৩৫০ হেক্টর জমিতে। এসব জমিতে ‘প্রফিট আর্লি’, ‘দুর্জয়’ ও ‘বাহুবলী’ জাতের উচ্চফলনশীল টমেটো চাষ করছেন কৃষকেরা। অন্য বছরের তুলনায় ভালো ফলন আর বাজারদর বেশি থাকায় কৃষকের প্রত্যাশাও বেড়েছে।
গন্ডামারা, সরল, বাহারছড়া, বৈলছড়ী, খানখানাবাদ, কাথরিয়া, শীলকূপ, চাম্বল ও পুইছুড়ি ইউনিয়নে এবার ৪১৫ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হয়েছে। এর মধ্যে গন্ডামারা ও সরল ইউনিয়নেই চাষ হয়েছে ৩৫০ হেক্টর জমিতে। এসব জমিতে ‘প্রফিট আর্লি’, ‘দুর্জয়’ ও ‘বাহুবলী’ জাতের উচ্চফলনশীল টমেটো চাষ করছেন কৃষকেরা।
উপজেলার যে এলাকাটিতে আগাম টমেটো চাষ হয়েছে এটি উপকূলীয় অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্ষা পুরোপুরি শেষ হওয়ার আগেই আগস্টের শুরুতে বিশেষ পদ্ধতিতে টমেটো রোপণ শুরু করেন তাঁরা। এর মধ্যে ভারী বৃষ্টিও হয়েছে। তবে চাষিরা বৃষ্টিতে জমা পানি সেচে খেত থেকে বের করেছেন। কারণ, জমিতে পানি জমে থাকলে টমেটোর ফল ভালো হয় না। চার মাস পর এখন ফল পাচ্ছেন তাঁরা। অন্য বছর ছোট আকারে চাষাবাদ হলেও এ বছর হয়েছে বাণিজ্যিকভাবে।
সরেজমিন দেখা যায়, সারি সারি লাগানো গাছে ঝুলছে কাঁচা-পাকা টমেটো। প্রতিটি খেতের মধ্যেই নালা করেছেন চাষিরা। এ নালা যেমন বর্ষায় পানিনিষ্কাশনের কাজে আসে তেমনটি শুষ্ক মৌসুমে নালা থেকে গাছের গোড়ায় পানিও দেওয়া হয়। অনেকের খেতের টমেটো তোলা শেষ হয়েছে। তাঁরা নতুন করে আবার টমেটো চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করছেন।
আমি পাঁচ কানি (৪০ শতাংশে ১ কানি) জমিতে টমেটো চাষ করেছি। ফলন ভালো হওয়ায় অন্তত চার লাখ টাকা লাভ হয়েছে। আগে এ জমিতে ধান চাষ করতাম। তবে তেমন লাভ হতো না। ভবিষ্যতে এ এলাকায় টমেটো চাষ আরও বাড়বে।—আবদুর রশিদ, চাষি, গন্ডামারা ইউনিয়ন।
সম্প্রতি গন্ডামারা ইউনিয়নের কেজি স্কুল এলাকায় কথা হয় চাষি আবদুর রশিদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি পাঁচ কানি (৪০ শতাংশে ১ কানি) জমিতে টমেটো চাষ করেছি। ফলন ভালো হওয়ায় অন্তত চার লাখ টাকা লাভ হয়েছে। আগে এ জমিতে ধান চাষ করতাম। তবে তেমন লাভ হতো না। ভবিষ্যতে এ এলাকায় টমেটো চাষ আরও বাড়বে।’
একই এলাকার আরেক চাষি আজগর আলী ৮ কানি জমিতে টমেটো চাষ করেছেন। জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। চার মাস আগে এসব টমেটো চাষ করা হয়। এ এলাকার জমিতে লবণাক্ততা রয়েছে। এখানে এত টমেটো ফলন হবে ধারণা করতে পারিনি।’
উপজেলার চরপাড়া এলাকায় গিয়ে কথা হয় দশম শ্রেণির ছাত্র সিফাতুল ইসলামের সঙ্গে। সে বাবার সঙ্গে টমেটো চাষ করেছে। জানতে চাইলে সে বলে, ‘আমরা এক কানি জমিতে টমেটো চাষ করেছি। এতে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বিক্রি করে পেয়েছি ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা।’
জানতে চাইলে বাঁশখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শ্যামল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘বাঁশখালী উপকূলে টমেটো চাষে বিপ্লব ঘটিয়েছেন চাষিরা। গ্রামের পর গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে টমেটো চাষ হচ্ছে । প্রতিবছরই চাষাবাদের পরিমাণ বাড়ছে। আমরা নিয়মিত চাষিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছি।’