ফুলটি বুনো হলেও তার নাম আছে, পরিচয় আছে। ফুলটির নাম ‘দাঁতরাঙা’
ফুলটি বুনো হলেও তার নাম আছে, পরিচয় আছে। ফুলটির নাম ‘দাঁতরাঙা’

পথিকের চোখে রং ছড়ায় নির্জনের ফুল ‘দাঁতরাঙা’

তখন সোনার মতন না হোক, সোনালি সকাল সারা গায়ে রোদ মেখে ঝরে পড়ছে গাছেদের পাতায় পাতায়, সবুজ ঘাসে। একটি পাহাড়ি পথ, তার দুই পাশে কোথাও চায়ের বাগান, কোথাও টিলাজুড়ে বুনো গাছ। আষাঢ় এসেছে দেশে, ততটা বর্ষণ হয়তো তখনো নেই। তবু কিছুদিনের তাপপ্রবাহের তাতানো বাতাসকে কিছুটা নরম, শীতল করতে আগের রাতে হালকা বৃষ্টি হয়েছে। সেই আদর আছে বাতাসে। গাছে গাছে পাতারা ঝকঝকে সবুজ হয়ে আছে। বৃষ্টি নেই, তবু সেই সকালের আকাশটিতে তখন মেঘের পাহাড় ভাসছে।

শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতার এই পঙ্‌ক্তিগুলো মনে পড়ে, ‘বৃষ্টি পড়ে এখানে বারো মাস/ এখানে মেঘ গাভীর মতো চড়ে/ পরান্মুখ সবুজ নালিঘাস/ ...।’ চারদিকে এতটা সবুজ, এতটা নীল, মেঘের এতটা নীরব আনাগোনা। হয়তো বর্ষা বলেই আকাশে অমন সঞ্চরণশীল মেঘ, অমন টুকরা-টাকরা নীল, নিচে আঁচল পেতেছে সবুজ চাদর। আর তার মাঝে ঘোমটা খুলে বেগুনি রঙের একদল বুনো ফুল সরল কিশোরী হয়ে দুলছে, হাসছে। ‘মোর পথিকেরে’ বলে এ রকমই যেন ডাকছে।

‘দাঁতরাঙা’ একধরনের গুল্মজাতীয় গাছ

গত সোমবার একদম সাতসকালে মৌলভীবাজার-কুলাউড়া সড়ক ধরে পথ চলতে গ্রীষ্ম-বর্ষার একদল বেগুনি বুনো রূপসীর সঙ্গে দেখা। কোথাও একা, কোথাও দলবলে আছে তারা। ছোট ও মাঝারি উচ্চতার গাছে গাছে অসংখ্য ফুল। বেগুনি ফুলের বন্যা এসেছে। এই ফুলের গাছে কারও হাত পড়েনি, কারও যত্ন-আদরের প্রয়োজন পড়েনি। আদর-যত্ন ছাড়াই এত নীরবে-নিঃশব্দে তারা ফোটে। এত ফুল, চোখ জুড়িয়ে যায়।

ওখানে তখন পথচারী মো. আমির ফুলের ছবি তুলছিলেন। তিনি বলেন, এই পথ দিয়ে যেতে তাঁর অনেক ভালো লাগে। পাহাড়ের ভেতর দিয়ে চলা পথটি খুব সুন্দর। বর্ষায় এই ফুল ফোটে। তখন ফুলেরা পথটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। তখন পথের দুই পাশ সবুজ-বেগুনিতে রঙিন হয়ে ওঠে।

হত্তর সিলেট অঞ্চলে পাহাড়-টিলার মতো এলাকায়, ঝোপঝাড়ে, চা-বাগানের কাছে এই ফুলের দেখা মেলে

এই ফুল বুনো হলেও তার নাম আছে, পরিচয় আছে। ফুলটির নাম ‘দাঁতরাঙা’। এটা একধরনের গুল্মজাতীয় গাছ। বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে পাহাড়-টিলাময় এলাকায়, ঝোপঝাড়ে, চা-বাগানের কাছে এই ফুলের দেখা পাওয়া যায়। একে তো বেগুনি রঙের পাপড়ি, তার মাঝে হলুদ কেশর ফুলের সৌন্দর্যকে আরও উজ্জ্বল করে তোলে, আরও চোখজুড়ানো করে। গ্রীষ্ম-বর্ষা এই সময় হচ্ছে ফুলটি ফোটার উপযুক্ত সময়। বর্ষায় যখন বৃষ্টি নামে, পাপড়িতে বৃষ্টির ফোঁটা জমে থাকে, তখন ফুলটি আরও মায়াময় হয়ে ওঠে। তবে এর কোনো গন্ধ নেই। দাঁতরাঙা ছাড়াও ফুটকি, লুটকি, ফুটুল নামে ডাকে অনেকে। গাছের পাতা দেখতে তেজপাতার মতো হওয়ায় অনেকের কাছে ফুলটি ‘বন তেজপাতা’ নামেও পরিচিত। ফুলটি ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়াতেও দেখা যায়।