
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ প্রকল্পের ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) দ্রুত অনুমোদন ও বাস্তবায়নের দাবিতে এবার যমুনা সেতুর মুখে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত তাঁরা যমুনা সেতু পশ্চিম গোলচত্বর এলাকায় ঢাকা ও উত্তরবঙ্গমুখী মহাসড়কের উভয় লেন অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের ২১টি জেলার যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মহাসড়কে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়। ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রী ও পরিবহনচালকেরা। এক ঘণ্টা পর বেলা একটার দিকে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক ছেড়ে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে এর আগে গতকাল বুধবার সকাল ৯টা থেকে ছয় ঘণ্টা উল্লাপাড়া রেলস্টেশনের সামনে রেলগেট এলাকায় রেলপথ অবরোধ করেন তাঁরা। এতে ঢাকা ও খুলনার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটে। গতকাল বেলা তিনটার দিকে আজকের যমুনা সেতুর পশ্চিমে মহাসড়ক অবরোধের ঘোষণা দিয়ে তাঁরা অবরোধ তুলে নিয়েছিলেন।
গত ২৬ জুলাই রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের কর্মসূচি বর্জনের মধ্য দিয়ে ডিপিপি অনুমোদনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। চলমান কর্মসূচির অংশ হিসেবে কয়েক দিন ধরে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বগুড়া-নগরবাড়ী মহাসড়ক অবরোধ করে পথনাটক, শেকল ভাঙার গান ও প্রতীকী ক্লাসের আয়োজন করা হয়। এরপরও সাড়া না পেয়ে গত বৃহস্পতিবার হাটিকুমরুল গোলচত্বরে মানববন্ধন ও রোববার মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। গতকাল রেলপথ অবরোধের পর আজ যমুনা সেতুর পশ্চিমে মহাসড়ক অবরোধ করা হয়।
আজ দুপুরে যমুনা সেতু পশ্চিম গোলচত্বর এলাকা অবরোধ করে দাবি আদায়ের জন্য বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভে এক শিক্ষার্থীকে কাফনের কাপড় পরে স্লোগান দিতে দেখা যায়।
শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, আগে তাঁরা দুই দফায় ৪৮ ঘণ্টা করে সময়সীমা বেঁধে দিলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। কেউ যোগাযোগ পর্যন্ত করেনি। বাধ্য হয়ে তাঁরা আজ যমুনা সেতুর সড়ক যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন। ১৭ আগস্ট একনেক সভায় তাঁদের দাবি পূরণ না করা হলে গণ–অনশন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। স্থায়ী ক্যাম্পাস না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের এ আন্দোলন চলবে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য ২০১৭ সালে ৯ হাজার ২০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়। এরপর সে প্রস্তাব সাতবার সংশোধন করে ৫১৯ কোটি ১৫ লাখ টাকায় নেমে আসে। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২৫ সালের মার্চ থেকে ২০২৯ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা, সমাজবিজ্ঞান, অর্থনীতি, সংগীত ও ব্যবস্থাপনা নামে পাঁচটি বিভাগে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ২০০। পাশাপাশি ৩৪ জন শিক্ষক, ৫৪ জন কর্মকর্তা ও ১০৭ জন কর্মচারী আছেন। পৌর শহরের শাহজাদপুর মহিলা কলেজ, সাইফুদ্দিন ইয়াহিয়া ডিগ্রি কলেজসহ ভাড়া করা দুটি বাড়িতে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়টির একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম।
নাটোর থেকে ঢাকাগামী ট্রাকের চালক সোহেল রানা বলেন, ‘গত রোববারও শিক্ষার্থীদের অবরোধের মধ্যে পড়ে দুই ঘণ্টা যানজটে ছিলাম। আজ আবার এক ঘণ্টা ধরে বসে আছি। এতে আমাদের চরম সমস্যা। কিসের আন্দোলন আমরা বুঝি না। মহাসড়ক বন্ধ হলে আমরা সমস্যায় পড়ি, এটাই বুঝি।’
বগুড়া থেকে ঢাকাগামী একতা পরিবহনের যাত্রী শামিম খান বলেন, প্রতিষ্ঠার পর এত বছর হলেও এখনো বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাস হয়নি, এটা দুঃখজনক। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে তাঁরা ভোগান্তিতে পড়ছেন। শিক্ষার্থীদের দাবি যৌক্তিক। সরকারের দ্রুত দাবি মেনে নেওয়া উচিত।
যমুনা সেতু পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ১১টা ৫০ মিনিট থেকে যমুনা সেতু গোলচত্বর এলাকায় মহাসড়কে বসে পড়েন। তাঁরা মহাসড়কের দুটি লেনই বন্ধ করে দেওয়ায় যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যানজট তৈরি হয়। ঘণ্টাখানেক পর শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক ছেড়ে দিলে আবার যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ওসি আবদুর রউফ বলেন, যমুনা সেতু হয়ে গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক দিয়ে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের ২১টি জেলার যানবাহন চলাচল করে। এখানে অবরোধ করা হলে অসংখ্য মানুষের ভোগান্তি হয়।