নিহত যুবদলকর্মী মুহাম্মদ ইব্রাহিম
নিহত যুবদলকর্মী মুহাম্মদ ইব্রাহিম

রাউজানে দুই দিনের মাথায় আরও এক যুবদল কর্মী খুন, মাথায় ও বুকে গুলি করে সন্ত্রাসীরা

চট্টগ্রামের রাউজানে দুই দিনের মাথায় মুহাম্মদ ইব্রাহিম (৩০) নামের আরও এক যুবদল কর্মী খুন হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার বেলা দেড়টার দিকে উপজেলার গাজীপাড়া গ্রামের বাজারের একটি দোকানের সামনে এ ঘটনা ঘটে। তিনটি অটোরিকশায় করে ১০ থেকে ১২ জনের একদল অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী তাঁর মাথায় ও বুকে গুলি করে। এতে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।

এ সময় তাঁর বাবা মুহাম্মদ আলম ও চাচা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল হালিমকে লক্ষ্য করেও গুলি ছোড়ে সন্ত্রাসীরা। গায়ে গুলি না লাগলেও পালাতে গিয়ে পড়ে তাঁরা আহত হয়েছেন।

নিহত যুবদল কর্মী মুহাম্মদ ইব্রাহিমের বাড়ি আদর্শ গুচ্ছগ্রামে। বাড়ির দেড় কিলোমিটার দূরে তিনি খুন হন। ইব্রাহিম বিএনপির কেন্দ্রীয় পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী। তাঁর ৬ বছর ও ২ বছর বয়সী দুটি শিশুসন্তান রয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, নিহত যুবদল কর্মীর মাথায় ও বুকে গুলি করা হয়েছে। এ কারণে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। ঘটনাস্থল থেকে গুলির খোসা উদ্ধার করেছে পুলিশ। সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে বলে পুলিশ জানায়।

এর আগে গত শনিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের গরিব উল্লাহপাড়া গ্রামের ভান্ডারি কলোনির একটি বাসায় ভাত খাওয়ার সময় সন্ত্রাসীরা যুবদলকর্মী মুহাম্মদ মানিক আবদুল্লাহকে (৩৬) গুলি করে হত্যা করে। নিহত মানিক আবদুল্লাহও গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী ছিলেন। দুই দিনের ব্যবধানের পর পর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এলাকায় আতঙ্কের পরিবেশ বিরাজ করছে।

যুবদল কর্মী ইব্রাহিমের হত্যার খবর বাড়িতে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনেরা। আজ দুপুরে চট্টগ্রামের রাউজানের আদর্শ গুচ্ছগ্রামে

যেভাবে হত্যা

স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ দুপুরে মুহাম্মদ ইব্রাহিম তাঁর বাড়ির দেড় কিলোমিটার দূরে একটি দোকানের সামনে বসেছিলেন। এ সময় হঠাৎ একদল অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী তিনটি অটোরিকশায় এসে কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাঁর মাথা ও বুক লক্ষ্য করে গুলি করতে থাকে। এ সময় ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর মাথার একদিকে গুলি ঢুকে অন্য দিক দিয়ে বের হয়ে যায়। হত্যাকাণ্ডের পর অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলে করে সন্ত্রাসীরা এলাকা ত্যাগ করে।

নিহত ব্যক্তির চাচা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল হালিম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ভাতিজাকে তাঁর সামনেই গুলি করে সন্ত্রাসীরা৷ এ সময় এগিয়ে গেলে তাঁকে লক্ষ্য করেও তিন চারটি গুলি ছোড়ে। তিনি এবং তাঁর বড় ভাই কোনো রকমে পালিয়ে বেঁচে গেছেন। তাঁর ভাতিজা যুবদল করলেও কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন না।

রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, মুহাম্মদ রায়হান নামের একজন সন্ত্রাসীর নেতৃত্বে হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে বলে তাঁরা প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, রাউজানে গত ৫ আগস্টের পর সহিংসতায় মোট ১১টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ৮টি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। বিএনপির দুই পক্ষে সংঘর্ষ হয় অন্তত শতাধিকবার। ৩০০–এর বেশি মানুষ এসব ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হন।