যশোর মেডিকেল কলেজ সংলগ্ন বিল হরিনা এলাকা দিয়ে ২ লাখ ৩০ হাজার ভোল্টেজের বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইন স্থাপনের কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন জমির মালিকেরা। ভূমি অধিগ্রহণ ছাড়াই লাইন স্থাপনের কাজ করায় আজ রোববার দুপুরে মানববন্ধন শেষে শ্রমিকদের ধাওয়া দিয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন তাঁরা। এ সময় শ্রমিকদের মারধরও করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশের (পিজিবি) কর্মকর্তাদের।
জমি অধিগ্রহণ ছাড়াই সঞ্চালন লাইনের খুঁটি স্থাপনের প্রতিবাদে আজ দুপুরে যশোর মেডিকেল কলেজসংলগ্ন বটতলায় মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। বেলেঘাটা ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির ব্যানারে আয়োজিত কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন কমিটির আহ্বায়ক তরিকুল ইসলাম। ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে জমির শতাধিক মালিক অংশ নেন। এ সময় সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ সঞ্চালন লাইন স্থাপনের কাজ করছে। যশোর মেডিকেল কলেজসংলগ্ন হরিণার বিলের মধ্য দিয়ে বৈদ্যুতিক খুঁটি স্থাপনের কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু যেসব জমির ওপর দিয়ে সঞ্চালন লাইনের তার ও খুঁটি স্থাপন করা হচ্ছে, সেসব ভূমির মালিকদের কোনো প্রকার অবহিত করা হয়নি।
আন্দোলনকারীরা বলেন, মেডিকেল কলেজ স্থাপনের পর বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ তাঁদের সঞ্চয় ভেঙে আশপাশে জমি কিনেছেন। বর্তমানে এসব জমির প্রতি শতকের মূল্য ৮ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুতের এ সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হলে লাইনের দুই পাশের শত শত মানুষের মূল্যবান জমি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। এ অবস্থায় সঞ্চালন লাইনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সব জমি বাজারমূল্যে অধিগ্রহণ ছাড়া নির্মাণকাজ বন্ধ করার আহবান জানানো হয়েছে।
কর্মসূচি থেকে ভূমির মালিকেরা ঘোষণা দেন, প্রকৃত বাজারমূল্য অনুযায়ী ভূমি অধিগ্রহণের টাকা পরিশোধ না করে সঞ্চালন লাইনের কাজ করতে দেওয়া হবে না। আগামী বুধবার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও পিজিবির নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে স্মারকলিপি প্রদানের নতুন কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির সদস্যসচিব রফিকুল ইসলাম, উপদেষ্টা জিল্লুর রহমান, সাবেক কাউন্সিলর জুলফিকার আলী, সাংবাদিক জুয়েল মৃধা, শুকুর আলী, বজলুর রহমান, তোতা মিয়া প্রমুখ।
পিজিবি সূত্রে জানা গেছে, ভেড়ামারা থেকে খুলনার মধ্যে ২ লাখ ৩০ হাজার ভোল্টেজের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন আগে থেকে রয়েছে। যশোর জেলা ওই লাইনের সঙ্গে যুক্ত নেই। যশোরে ১ লাখ ৩২ হাজার ভোল্টেজের সঞ্চালন লাইন রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে যশোরে বিদ্যুতের লোড বেশি হওয়ায় ওই লোড টানতে পারছে না। এর ফলে ভোল্টেজ আপডাউন (ওঠানামা) করে। এই সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ২ লাখ ৩০ হাজার ভোল্টেজের সঞ্চালন লাইনে যশোরকে সংযুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে পিজিবি। ওই লাইন হরিণার বিল দিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিজিবির সহকারী প্রকৌশলী জ্যোর্তিময় সরকার বলেন, ‘ওই এলাকার ভূমির মালিকদের অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তাঁরা সঞ্চালন লাইন স্থাপনের বিপক্ষে নন। কিন্তু তাঁরা ভূমির বাজারদর অনুযায়ী মূল্য পরিশোধ করে কাজ করতে বলছেন। কিন্তু মৌজায় ওই এলাকাকে ধানি জমি হিসেবে দেখানো আছে। মৌজা দর অনুযায়ী মূল্য দিতে চাইলে ভূমিমালিকেরা তা মানছেন না।
জ্যোর্তিময় সরকার বলেন, ‘আজ ভূমির মালিকেরা কাজের সাইটে গিয়ে শ্রমিকদের মারধর করেছেন। যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বিষয়টি আমরা মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছি। ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়ে জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে।’