সড়কের এক পাশে গর্ত হয়ে সেখানে জমে আছে পানি। আরেক পাশ দিয়ে কোনো রকমে চলছে যানবাহন। সম্প্রতি ফেনী পৌরসভার সালাউদ্দিন মোড়ে
সড়কের এক পাশে গর্ত হয়ে সেখানে জমে আছে পানি। আরেক পাশ দিয়ে কোনো রকমে চলছে যানবাহন। সম্প্রতি ফেনী পৌরসভার সালাউদ্দিন মোড়ে

যে কারণে ফেনী এখন ভাঙাচোরা সড়কের শহর

শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়ক ফেনী শহরের ব্যস্ততম রাস্তা। এই সড়কের পাশেই শহরের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা। একটু ভারী বৃষ্টিতেই ডুবে যায় সড়কটি। গত বছরের আগস্টের ভয়াবহ বন্যায় সড়কের দুই কিলোমিটার অংশ কোমরপানিতে তলিয়ে ছিল পাঁচ দিন। এতে সড়কের বিভিন্ন স্থান ভেঙে খানাখন্দ তৈরি হয়। পানি নেমে যাওয়ার পর পাথর ও ইটের সুরকি দিয়ে অস্থায়ী মেরামত করা হলেও স্থায়ী সংস্কার হয়নি। এ বছর বর্ষায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় আরও বেহাল হয়েছে সড়কটির দশা। ছোট ছোট গর্তে ভরা এই সড়ক দিয়ে যানবাহন চলে ধীরগতিতে। ফলে সড়কে যানজট লেগেই থাকে।

পৌর শহরের এই প্রধান সড়কে তা–ও যানবাহন চলে কোনোরকমে। শহরের অলিগলি আর অভ্যন্তরীণ সড়কের দশা এর চেয়ে অনেক বেহাল। শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়ক থেকে একটু এগোলে হাসপাতাল মোড় থেকে সালাহ উদ্দিন মোড় পর্যন্ত যে সড়কটি রয়েছে, তাতে আগাগোড়াই বড় বড় খানাখন্দ। সড়কটির সাহেববাড়ি অংশে বড় গর্ত তৈরি হওয়ায় ইট দিয়ে সাময়িক মেরামত করলেও ছোট-বড় গাড়ির চাকা সেসবকে স্থায়ী হতে দেয়নি। এটিসহ পৌরসভার ছোট-বড় প্রায় ৩০টির বেশি সড়ক এখনো বন্যার ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে। ২০২৪ সালের বন্যার এক বছর পার হলেও ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোর দৃশ্যমান কোনো সংস্কার হয়নি। তবে পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো দ্রুত মেরামতের কাজ অচিরেই শুরু হবে।

একসময়ের ছিমছাম ও সাজানো ফেনী এখন ভাঙাচোরা সড়কের শহর। খানাখন্দে ভরা সড়কগুলোতে গাড়ি চলে হেলেদুলে। হালকা বৃষ্টিতেও প্রায় সব সড়কে পানি জমে যায়। পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি হলেই সড়কে পানি জমে। অধিকাংশ সড়কের পিচঢালাই উঠে যাচ্ছে। ক্ষতবিক্ষত সড়ক শহরকে যেমন শ্রীহীন করেছে, তেমনি বাড়িয়েছে জনদুর্ভোগ।

সরেজমিন ঘুরে শহরের পাঠানবাড়ি সড়ক, মাস্টারপাড়া মুন্সিবাড়ি সড়ক, কদল গাজী সড়ক, বিরিঞ্চি প্রাইমারি স্কুল সড়ক, বিরিঞ্চি রতন সড়ক, সুলতানপুর আমির উদ্দিন সড়ক, গাজী ক্রস রোড, সুফি সদর উদ্দিন সড়ক, আবু বক্কর সড়ক, শহীদ ওবায়দুল হক সড়ক, মহিপাল চৌধুরী বাড়ি সড়ক, চাড়িপুর মৌলভী আব্দুস সালাম সড়ক, উত্তর চারিপুর বাইতুশ শরিফ সড়ক, পূর্ব বিজয় সিং ছোট হুদা দিঘি সড়ক, মধুপুর মালেক মিয়া বাজার সড়কের বেহাল দশা দেখা গেছে। সব মিলিয়ে ৩০টি সড়কের সব কটিই এখন বেহাল।

একসময়ের ছিমছাম ও সাজানো ফেনী এখন ভাঙাচোরা সড়কের শহর। খানাখন্দে ভরা সড়কগুলোতে গাড়ি চলে হেলেদুলে। হালকা বৃষ্টিতেও প্রায় সব সড়কে পানি জমে যায়। পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি হলেই সড়কে পানি জমে। অধিকাংশ সড়কের পিচঢালাই উঠে যাচ্ছে। ক্ষতবিক্ষত সড়ক শহরকে যেমন শ্রীহীন করেছে, তেমনি বাড়িয়েছে জনদুর্ভোগ।

ফেনী পৌরসভায় ইজিবাইক চালান সুজাউদ্দিন। ভাঙাচোরা সড়কের কারণে অন্য অনেকের চেয়ে তাঁকে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয় বলে জানিয়েছেন। ফেনীর শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়কে সম্প্রতি সুজাউদ্দিনের সঙ্গে দেখা হয়। কথায় কথায় তিনি বলেন, ছোট-বড় গর্ত থাকায় অতিরিক্ত ঝাঁকুনিতে প্রতিনিয়ত গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে। অনেক সময় যাত্রীরা গাড়ি থেকে পড়ে যাওয়ার দশা হয়। রাস্তা খারাপ হওয়ায় ভাড়াও কমেছে তাঁর।

শাহিন একাডেমি এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ ইব্রাহিম শহরের সড়কগুলোর ড্রেনেজ ব্যবস্থা নিয়ে রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সড়কের পাশে পর্যাপ্ত নালা নেই। এ কারণে একটু বৃষ্টি হলেই পানি জমে। বাড়ির সামনের সড়কের এই হাল হলে আর কাজকর্ম করতে ইচ্ছা হয় না।

ফেনী পৌরসভার বিসিক–মুক্তার বাড়ি সড়কের মাঝে এমন বড় বড় খানাখন্দ

আশার বাণী শোনাচ্ছে পৌর কর্তৃপক্ষ

পৌরসভার সূত্র জানায়, গত বছরের বন্যায় পৌরসভার ২৬৫ কিলোমিটার সড়ক কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রায় ৫০ কিলোমিটার সড়ক মেরামতের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করেছে পৌর কর্তৃপক্ষ। এর জন্য প্রথম পর্যায়ে ৪৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এর মধ্যে ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬ কিলোমিটার নালা নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পে অর্থায়ন করছে বিশ্বব্যাংক। শহরের প্রধান সড়ক শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়কের দুই পাশ মেরামত, নালা ও ফুটপাত নির্মাণ, ডাক্তার পাড়া সড়ক আরসিসি ঢালাই, আড্ডাবাড়ি হাজি ইমাম বক্স সড়ক সংস্কার, ওয়াপদা শিল্পকলা সড়ক সংস্কারসহ আশপাশে কিছু সড়ক সংস্কার এই প্রকল্পে সংযুক্ত রয়েছে। এ ছাড়া ১৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে সড়ক সংস্কারের আরও দুটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।

ফেনী পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাকির হোসেন বলেন, পৌরসভার সড়ক নির্মাণ, ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক সংস্কার, ড্রেন ও ফুটপাত নির্মাণের জন্য দাতা সংস্থা ও সরকারি প্রকল্পের দিকে চেয়ে থাকতে হয়। বরাদ্দ পেলে কাজ করতে সুবিধা হয়। বন্যা–পরবর্তী দাতা সংস্থা থেকে অর্থ বরাদ্দ পাওয়ায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো মেরামতের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। চলতি সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিক থেকে দরপত্রের মাধ্যমে সংস্কারকাজগুলো শুরু হবে। নভেম্বরের এর আগে সংস্কারকাজগুলো পুরোপুরি দৃশ্যমান হবে।

ফেনী শহরের পাঠানবাড়ি সড়কের এই হাল। সড়কের ছোট–বড় গর্তে জমে আছে পানি

ফেনী পৌরসভার প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক গোলাম মো. বাতেন বলেন, কাজের মান ঠিক রেখে যত দ্রুত সম্ভব সড়ক সংস্কার, নালা ও ফুটপাত নির্মাণে পৌর কর্তৃপক্ষ তৎপর রয়েছে। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো চলতি বছরেই সংস্কার হয়ে যাবে। পর্যায়ক্রমে অন্য ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোও মেরামত করা হবে।

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালে আগস্ট মাসের স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ফেনীর সব উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। এতে ২৯ জনের প্রাণহানি হয়েছিল। পানিবন্দী ছিলেন ১০ লাখের বেশি মানুষ। জেলাজুড়ে শুধু পাকা সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ৪৮১ কিলোমিটার। আধা পাকা, কাঁচাসহ ক্ষতিগ্রস্ত হয় সড়ক যোগাযোগ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যানবাহন, ঘরবাড়ি ও ব্যবসা-বাণিজ্যসহ প্রায় সব খাত। সেই বন্যায় প্রায় ২ হাজার ৬৮৬ কোটি ২০ লাখ ৫০০ টাকার ক্ষতি হয়েছিল বলে জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়।