
বরিশাল নগরের প্রায় সব প্রধান সড়ক এখন ভ্রাম্যমাণ দোকানিদের দখলে। ফুটপাত তো বটেই, নগরের পোর্ট রোড, কে বি হেমায়েত উদ্দীন (গির্জা মহল্লা), ফলপট্টি, চকবাজার, কাঠপট্টি রোড, ফজলুল হক অ্যাভিনিউ সড়কের অনেকাংশ দখল করে ভ্রাম্যমাণ দোকান বসিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বাড়তি সমস্যা অবৈধ পার্কিং। বাণিজ্যিক এসব এলাকার অপ্রশস্ত সড়কের দুই পাশ দিয়ে ভ্রাম্যমাণ দোকান ও অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে প্রায়ই যানজট লেগে থাকে। এসব সড়ক দিয়ে পায়ে হেঁটে চলাও দুরূহ।
সম্প্রতি নগরের বিভিন্ন এলাকার ফুটপাত দখলমুক্ত করতে অভিযান চালায় সিটি করপোরেশন। অভিযানে নগরের চৌমাথা এলাকার লেকপাড়, চৌমাথা বাজারের সামনে সিঅ্যান্ডবি সড়কের ফুটপাত, বিবির পুকুর পাড়, বেলস পার্কের সড়কের দুই পাশে ভ্যানে গড়ে ওঠা ফাস্ট ফুডের দোকান উচ্ছেদ করা হয়। কিন্তু মাস না ঘুরতেই এসব এলাকার ফুটপাত আবার দখল হয়ে গেছে।
সরেজমিন দেখা যায়, চৌমাথা লেকপাড়ের দক্ষিণ ও পশ্চিম পাশে অন্তত ১০০টি ভ্রাম্যমাণ দোকান বসিয়ে বিভিন্ন খাবারের দোকান বসানো হয়েছে। এ ছাড়া পূর্ব পাড়ে যেসব খাবারের দোকান ছিল, সেগুলো সিঅ্যান্ডবি সড়কের পূর্ব পাশের ফুটপাত দখল করে আবার ব্যবসা চালাচ্ছে। এমনকি এসব দোকানে আসা ক্রেতাদের বসার জন্য সড়কের ওপরে টেবিলে চেয়ারও পাতা হয়েছে। চটপটি, ফুচকা থেকে শুরু করে বার্গার, ফ্রাই—সবই মিলছে ফুটপাতে।
খাবার বিক্রি করা এমন চার দোকানি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তাঁরা বোঝেন, রাস্তা দখল করা ঠিক নয়। এরপরও পেটের দায়ে তাঁরা ফুটপাতে বসছেন। এ ছাড়া তাঁদের আর কোনো উপায় নেই।
চৌমাথা কাঁচাবাজারের সামনে সিঅ্যান্ডবি সড়কের ফুটপাতের ভাসমান ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করা হলেও আবার তাঁরা বিভিন্ন শাকসবজির দোকান দিয়েছেন। এ ছাড়া মূল সড়কে অসংখ্য মোটরসাইকেল ও ইজিবাইক থামিয়ে রাখায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের এ অংশ সারাক্ষণই যানজট লেগে থাকে। এসব এলাকা দিয়ে হাঁটাচলা করাও দুরূহ।
রূপাতলী আবাসিক এলাকার বাসিন্দা আবদুর রাজ্জাক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রূপাতলী থেকে মূল শহরে যেতে যানজটের কারণে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়। ফুটপাত দিয়ে হাঁটার অবস্থাও নেই। যে যার মতো দখল করে ব্যবসা করছে। এ জন্য দিন দিন শহরে ভোগান্তি বাড়ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে পুরো শহরের শৃঙ্খলাই ভেঙে পড়বে।
নগরের বান্দরোডে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের সড়ক, কেডিসি সড়ক, মুনসি গ্যারেজ থেকে গোরস্তান রোড, নিউ সার্কুলার রোডের মোড়, স্ব-রোড, সদর হাসপাতাল রোড, নতুন বাজার, বাংলাবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় একই চিত্র দেখা যায়। এসব এলাকায় ফুটপাত দখল করে ভ্রাম্যমাণ ব্যবসার পাশাপাশি কোথাও টিনশেড আবার কোথাও টংঘর তুলে ব্যবসা করছেন ব্যবসায়ীরা।
হেমায়েতউদ্দিন সড়কে কথা হয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, বরিশাল শহরে এখন এত যানজট, যে পায়ে হেঁটে কোথাও যাওয়ার অবস্থা থাকে না। একদিকে ফুটপাতগুলো ভাসমান ব্যবসায়ীদের দখলে, অন্যদিকে সড়কগুলোতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে হাজার হাজার ইজিবাইক ও রিকশা। এতে বাইরে বের হলে সত্যিই অসহায় লাগে।
পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের পরিদর্শক বিদ্যুৎ দে প্রথম আলোকে বলেন, এমনিতে বরিশাল শহরের সড়কগুলো অপ্রশস্ত। এর মধ্যে প্রয়োজনের তুলনায় অন্তত ১০ গুণ ইজিবাইক ও রিকশা আছে। ফুটপাত দখল হয়ে যাওয়ায় সড়কে শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করা দুরূহ হয়ে পড়ছে। এতে নগরের প্রায় সব এলাকায় দিন-রাত অসহনীয় যানজট লেগে ভোগান্তি হচ্ছে। এখনই একটা পরিকল্পনা করে সবকিছু শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসা উচিত।
বুধবার দুপুরে নগরের বাংলাবাজার এলাকায় দেখা যায়, সেখান থেকে পশ্চিমে দক্ষিণ আলেকান্দা পর্যন্ত প্রায় আধা কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট। সেখানে ফুটপাতে বিভিন্ন পণ্যের অন্তত ৫০টি ভ্রাম্যমাণ দোকান বসেছে। মূল সড়কে ভ্যানে করে শাকসবজি, ফলসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করছেন কয়েকজন দোকানি। যানজটের পেছনে এসব দোকানের ভূমিকা থাকলেও তাঁরা নির্বিকার। আবু জাফর নামের একজন দোকানি বললেন, ‘সবাই বসে, আমরাও বসি। এতে দোষের কী? আমরা যামু কই?’
মোটরসাইকেল নিয়ে যানজটে আটকে ছিলেন মেহেদী হাসান নামের এক যুবক। তিনি বলেন, ‘এখানে দিন-রাত সব সময়ই যানজট থাকে। প্রতিদিনই আমাদের এমন ভোগান্তি হয়। কিন্তু প্রতিকারের কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই অসহায় হয়ে মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় কী?’
জানতে চাইলে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল বারী প্রথম আলোকে বলেন, ফুটপাত দখলমুক্ত করতে তাঁরা কয়েক দফা অভিযান চালিয়েছেন। অভিযান শেষে কয়েক দিন পর আবার দখল হয়ে যায়। এগুলো করতে করতে তাঁরাও ক্লান্ত। অচিরেই আবার দখলদারদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে।