
নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলায় এক বস্তা গাঁজাসহ একটি কাভার্ড ভ্যান ও চালককে আটক করে পুলিশকে খবর দেন এলাকাবাসী। রাতেই স্থানীয় পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের এক উপপরিদর্শক (এসআই) গাঁজা ও চালককে নিয়ে যান। এ ঘটনায় করা মামলায় উল্লেখ করা গাঁজার পরিমাণ নিয়ে সন্দেহ ওঠার পর তদন্তে নামেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় ওই এসআইকে প্রত্যাহার করেছে।
ওই এসআইয়ের নাম আবদুর রাজ্জাক। বুধবার দুপুরে তাঁকে বনপাড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্র থেকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনসে যুক্ত করা হয়েছে। বিষয়টি বড়াইগ্রাম সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শোভন চন্দ্র হোড় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও বড়াইগ্রাম থানা সূত্রে জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে উপজেলার মাঝগাঁও ইউনিয়নের ছাতিয়ানগাছা মোল্লাপাড়া মোড় থেকে এক বস্তা গাঁজাসহ একটি কাভার্ড ভ্যান ও এক ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশে খবর দেন এলাকাবাসী। এ সময় সেখানে থাকা অন্য দুই ব্যক্তি পালিয়ে যান। রাতেই বনপাড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের এসআই আবদুর রাজ্জাক ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি উপস্থিত সবার সামনে বস্তাটি খুলে কালো পলিথিনে মোড়ানো ১৪ প্যাকেট গাঁজা জব্দ করেন। স্থানীয় লোকজন তাৎক্ষণিক ওই গাঁজা পরিমাপ করার কথা বললে এসআই তাতে রাজি হননি। তবে উপস্থিত লোকজন জানান, কয়েকজন গাঁজার বস্তা উঠিয়ে ওজন পরিমাপের চেষ্টা করেন। তাতে আনুমানিক ৩০ কেজি ছিল।
কিন্তু এ ঘটনায় বুধবার সকালে ১৪টি প্যাকেটে সাত কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে উল্লেখ করে মামলা করা হয়। মামলায় একটি কাভার্ড ভ্যান জব্দ করার কথা উল্লেখ করা হয়। সেই সঙ্গে কাভার্ড ভ্যানের চালককে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। গাঁজার ওজন নিয়ে এসআই আবদুর রাজ্জাকের কারচুপির ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নামেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তদন্তে জব্দ ও মামলার তথ্যের গরমিল পাওয়া যায়। পরে জব্দ তালিকা প্রস্তুতকারী এসআই আবদুর রাজ্জাককে বনপাড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্র থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ছাতিয়ান গাছা গ্রামের বাসিন্দা আসাদুল ইসলাম বলেন, রাত দেড়টার দিকে ছাতিয়ানগাছা মোল্লাপাড়া মোড়ে একটি নীল রঙের কাভার্ড ভ্যান থেকে দুজন লোক একটি বড় পলিথিনের বস্তা নামাচ্ছিলেন। দেখতে পেয়ে এলাকাবাসী চোর সন্দেহে ধাওয়া দিলে তাঁরা বস্তা ফেলে পালিয়ে যান। তবে কাভার্ড ভ্যানসহ চালককে আটক করেন গ্রামবাসী। পুলিশকে খবর দিলে বনপাড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের এসআই আবদুর রাজ্জাক ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে গিয়ে আনুমানিক ৩০ কেজি গাঁজা ও বহনকারী কাভার্ড ভ্যান জব্দ এবং চালককে গ্রেপ্তার করেন। এসআই গাঁজার ওজন পরিমাপ করতে দেননি।
একই গ্রামের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা নিজেরাই গুনে ১৪টি পলিথিনের ব্যাগভর্তি গাঁজা পুলিশকে বুঝিয়ে দিই। প্রতিটি পোঁটলা দুই কেজির কম হবে না। দাঁড়িপাল্লা এনে মাপতে চাইলে এসআই মাপতে দেননি। এখন শুনছি, মাত্র সাত কেজি গাঁজা দিয়ে নাকি মামলা হয়েছে।’
বড়াইগ্রাম সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শোভন চন্দ্র হোড় জানান, গাঁজাসহ আটক আসামিকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। উদ্ধার করা গাঁজার পরিমাণ নিয়ে বিতর্ক ওঠায় বনপাড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের এসআই আবদুর রাজ্জাককে সেখান থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে।
এদিকে গাঁজা উদ্ধারের মামলায় গ্রেপ্তার আসামির নাম সায়েম মণ্ডল (৩৪), তিনি লালমনিরহাট জেলা সদরের সিংগাদার গ্রামের বাসিনদা। এ ছাড়া পালিয়ে যাওয়া দুজনকে আসামি করা হয়েছে। তাঁরা হলেন বড়াইগ্রাম উপজেলার ছাতিয়ানগাছা গ্রামের আশরাফ আলী (৪৫) ও লালপুর উপজেলার গোধরা গ্রামের ফয়েজুল্লাহ প্রামাণিক (৪৮)।