জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্র ঘেরাও একদল শিক্ষার্থীর। আজ রোববার রাত সাড়ে আটটায়
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্র ঘেরাও একদল শিক্ষার্থীর। আজ রোববার রাত সাড়ে আটটায়

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষার্থীর মৃত্যু, দেরিতে অ্যাম্বুলেন্স পাঠানোর অভিযোগে চিকিৎসাকেন্দ্র ঘেরাও

চিকিৎসাধীন অবস্থায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১তম ব্যাচের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জোবায়ের হোসাইন মারা গেছেন। আজ রোববার সকালে সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি মারা যান। এর আগে গতকাল শনিবার তাঁর জন্য দেরিতে অ্যাম্বুলেন্স পাঠানো হয়েছেন, এমন অভিযোগ তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্র ঘেরাও করেছেন একদল শিক্ষার্থী।

রোববার রাত সাড়ে আটটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের প্রধান ফটক আটকে শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচি শুরু করেন।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, জুবায়ের শনিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান। পরে তিনি ক্যাম্পাসে ফেরার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে যোগাযোগ করেন। তবে চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে জানানো হয়, অ্যাম্বুলেন্স নষ্ট, ঢাকা পাঠানো যাবে না। এর চার ঘণ্টা পর জুবায়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সে করে ক্যাম্পাসে ফেরেন। রোববার ভোররাতে তাঁর পেটে আবার ব্যথা শুরু হলে তাঁকে সাভারের এনাম মেডিকেলে নেওয়া হয়। একপর্যায়ে তিনি মারা যান। তিনি দীর্ঘদিন ধরে হিমোফিলিয়া রোগে আক্রান্ত ছিলেন।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ইতিহাস বিভাগের সাকিল আলী বলেন, শনিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে জুবায়ের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে তাঁকে কল দিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি জানান, তাঁর বুকে প্রচণ্ড ব্যথা করছে, তিনি ক্যাম্পাসে ফিরতে চান। কিন্তু অ্যাম্বুলেন্সের জন্য অনেক বার কল দিয়েও লাভ হচ্ছে না। দায়িত্বরত চিকিৎসা কর্মকর্তা তাঁকে বলেছেন, অ্যাম্বুলেন্স নষ্ট, ঢাকায় পাঠানো যাবে না। অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারকে কল দিলে তিনিও নানা অজুহাত দেখান। এভাবে তাঁকে চার ঘণ্টা অপেক্ষা করিয়েছে বলে তাঁকে জানান জুবায়ের।

সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী জিয়া উদ্দিন আয়ান বলেন, ক্যাম্পাসে অনেক শিক্ষার্থী সময়মতো চিকিৎসা না পেয়ে অকালে মারা গেছেন। মেডিকেলে পর্যাপ্ত জনবল নেই। বছরের পর বছর মেডিকেল সেন্টার সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চললেও তাতে কোনো ফল আসে না। তাই তাঁরা অতি দ্রুত মেডিকেল সেন্টারের কার্যকর সংস্কার নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চিকিৎসাকেন্দ্রের প্রধান কর্মকর্তা মো. শামছুর রহমান বলেন, জুবায়ের অসুস্থ, এটা মেডিকেলের সবাই জানে। যখনই তিনি অ্যাম্বুলেন্স চেয়েছেন, তখনই পেয়েছেন। তবে গতকাল তিনি যখন অ্যাম্বুলেন্স চান, তখনই দেওয়া সম্ভব হয়নি। তিনি দেরিতে অ্যাম্বুলেন্স পেয়েছেন, এটা সত্য। এর কারণ অ্যাম্বুলেন্স–স্বল্পতা। বর্তমানে তিনটি অ্যাম্বুলেন্স সচল রয়েছে। গতকাল সচল অ্যাম্বুলেন্সগুলো বাইরে ছিল, অ্যাম্বুলেন্স পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই জুবায়েরের জন্য পাঠানো হয়েছিল।

জোবায়ের হোসাইনের মৃত্যুতে শোক

জোবায়ের হোসাইনের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ কামরুল আহসান। আজ দুপুরে গণমাধ্যমে পাঠানো এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, ‘জোবায়ের হোসাইনের অকালমৃত্যুতে বিশ্ববিদ্যালয় একজন মেধাবী শিক্ষার্থীকে হারাল। তাঁর পরিবারের জন্য এ ক্ষতি অপূরণীয়।’ তিনি জোবায়ের হোসাইনের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান।

এ ছাড়া জোবায়ের হোসাইনের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ ও ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।