
রাজবাড়ী সদর উপজেলায় এক গৃহবধূকে তাঁর স্বামী কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ বৃহস্পতিবার ভোরে উপজেলার বানিবহ ইউনিয়নের বার্থা গ্রাম থেকে ওই নারীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত স্বামী পলাতক আছেন।
নিহত নারীর নাম বিউটি খাতুন (৩০)। তাঁর স্বামী মো. লতিফ কাজী বার্থা গ্রামের বাসিন্দা। বিউটি-লতিফ দম্পতির ১১ ও ৪ বছর বয়সী দুটি সন্তান আছে।
এ দম্পতির ১১ বছর বয়সী মেয়ে জানায়, রাতে তার মা পোলাও, মুরগির মাংস ও পায়েস রান্না করেছিলেন। বাবা-মায়ের সঙ্গে তারা দুই ভাই-বোন খাওয়া-দাওয়া করে। এরপর সে আলাদা কক্ষে ঘুমিয়ে পড়ে। মা-বাবার সঙ্গে ছোট ভাই ঘুমাচ্ছিল। রাতে ভাইয়ের কান্নার শব্দ শুনে তার ঘুম ভাঙে। নিজের কক্ষ থেকে বের হয়ে সে দেখতে পায়, মায়ের বুকের ওপর বসে বাবা ধারালো কিছু দিয়ে আঘাত করছেন। সে থামাতে গিয়ে হাতে আঘাত পায়। এরপর দৌড়ে পাশের বাড়ির চাচাকে ডেকে ঘুম থেকে তোলে। সবাই এসে দেখে, তার বাবা পালিয়ে গেছেন।
বানিবহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী লুৎফর রহমান বলেন, তুচ্ছ কারণে লতিফ কাজী তাঁর স্ত্রীকে মারধর করতেন। লতিফের বাবাও তাঁর (লতিফের) মাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে মুখে বিষ ঢেলে দিয়েছিল। ওই পরিবারে এটি দ্বিতীয় হত্যাকাণ্ডের ঘটনা।
নিহত বিউটি খাতুনের চাচা বানিবহ ইউপির সদস্য আবদুস সালাম মোল্লা বলেন, প্রায় ১৪ বছর আগে তাঁর ভাতিজির বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পর লতিফ কাজীকে যৌতুক হিসেবে এক লাখ টাকা দেওয়া হয়। প্রায়ই লতিফ বিউটিকে মারধর করতেন। মঙ্গলবারও বিউটিকে মারধর করেন তিনি। মার খেয়ে বিউটি তাঁদের বাড়িতে চলে এসেছিল। পরে আবার স্বামীর বাড়িতে ফেরত যায়। গতকাল বুধবার সারা দিন লতিফ ও বিউটি মাঠে শর্ষে তুলেছে। রাতে কোনো ঝগড়াঝাটিও হয়নি। ভালো খাবার খেয়েছে। এরপর পরিকল্পিতভাবে লতিফ বিউটিকে হত্যা করে।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিয়ের পর থেকেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হতো। প্রায়ই তুচ্ছ ঘটনায় স্ত্রীকে মারধর করতেন লতিফ। এ ঘটনায় অনেকবার স্থানীয়ভাবে সালিসের মাধ্যমে মীমাংসা হয়েছিল।
রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার এম এম শাকিলুজ্জামান বলেন, লতিফ মাদকাসক্ত ও মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। প্রায়ই স্ত্রীকে মারধর করতেন। কিন্তু সন্তানের কথা চিন্তা করে বিউটি খাতুন সংসার চালিয়ে যাচ্ছিলেন। ঘটনার পর থেকে লতিফ পলাতক আছেন। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।