
গণ অধিকার পরিষদের ছাত্রসংগঠন ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা রবিউল আউয়াল অন্তরকে (৩০) খুঁজে বের করার দাবিতে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় দ্বিতীয় দিনেও মানববন্ধন ও সমাবেশ করা হয়েছে। অন্তরের পরিবারের সদস্যসহ এলাকার বাসিন্দারা দুপুর থেকে পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র–সংলগ্ন লোন্দা সড়কে এ কর্মসূচি পালন করেছেন।
এদিকে এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যাতে এলাকায় কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি না হয়, এ জন্য কলাপাড়া উপজেলা বিএনপি পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকায় ‘শান্তি সমাবেশ’ করেছে। ধানখালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. আলমগীর হোসেনের সভাপতিত্বে এ সমাবেশে বক্তব্য দেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি হুমায়ূন সিকদার, কলাপাড়া পৌর বিএনপির সভাপতি গাজী মোহাম্মদ ফারুক, সাধারণ সম্পাদক মুসা তাওহীদ নান্নু মুন্সী, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সেলিম সিকদার এবং অন্তরের স্ত্রী তানজিলা অন্তর। বক্তারা সবাই অন্তরকে দ্রুত উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করার দাবি জানান।
রবিউল আউয়াল অন্তর পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের লোন্দা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতাবিষয়ক সহসম্পাদক। কলাপাড়া পৌর শহরের শহীদ সুরেন্দ্র মোহন চৌধুরী সড়কের পাশে কলাপাড়া প্রেসক্লাব মার্কেটে তাঁর নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টার পর থেকে তিনি নিখোঁজ রয়েছেন। কলাপাড়া থানা-পুলিশ তাঁর ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি কলাপাড়া-পটুয়াখালী সড়কের রজপাড়া মাদ্রাসাসংলগ্ন সড়ক থেকে পার্কিং করা অবস্থায় উদ্ধার করেছে। কিছুটা দূর থেকে একটি হেলমেটও উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ কলাপাড়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে।
অন্তরের বড় ভাই তুষার আল মামুন এ ঘটনায় গতকাল শুক্রবার কলাপাড়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের ছয় কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করে এ অভিযোগ করেছেন। তুষার বলেন, ‘কলাপাড়া পৌর শহরের “গ্রাফিকস ওয়াল” নামের ডিজিটাল প্রিন্টিং প্রেস ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে আমার ভাই বৃহস্পতিবার রাত ১১টার সময় বাড়িতে ফিরছিল। এরপর গভীর রাতে থানা থেকে আমরা ফোন পাই। আমার ভাই এখন পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছে। আমার ভাইয়ের কোনো ক্ষতি যেন না হয়, আমরা সেটাই চাই।’
অন্তরের বাবা মো. সোলাইমান মৃধা বলেন, ‘আমার ছেলে পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের ক্ষতিপূরণ আদায়, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের চাকরিসহ আট দফা দাবি আদায়ে দীর্ঘদিন আন্দোলন করে আসছে। এসব কারণে হয়তো আমার ছেলের ওপর কোনো মহল ক্ষুব্ধ হয়ে আছে। আমরা কিছুই চাই না, আমার ছেলেকে অক্ষত অবস্থায় ফেরত চাই।’
কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জুয়েল ইসলাম বলেন, ‘মোটরসাইকেলটি ওখানে পার্কিং করা দেখে পায়রা বন্দরের চার লেন সড়কের নিরাপত্তাকর্মীরা থানায় অবহিত করলে পুলিশ গিয়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করে। অন্তরকে উদ্ধার করার জন্য কলাপাড়া থানা–পুলিশসহ প্রশাসনের সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।’
পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের সহকারী ব্যবস্থাপক (তদন্ত) শাহ মনি জিকো প্রথম আলোকে বলেন, ‘পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র একটি প্রথম শ্রেণির কেপিআই প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে ৩১৭ জন বিদেশি নাগরিক এবং পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রয়েছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তাঁরা আতঙ্কিত অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আসলে এ ছেলেটাকে কেন এবং কী কারণে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, এর কিছুই আমরা জানি না। এখানে আমাদের খামাখা দোষারোপ করা হচ্ছে। আমরাও চাই অক্ষত অবস্থায় এ ছেলেটি উদ্ধার হোক। এরপরই পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হবে।’