
দীর্ঘ আন্দোলন, অনশন ও সমালোচনার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের দায়িত্ব ছাড়লেন অধ্যাপক তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ। দায়িত্ব নেওয়ার এক বছর পূর্তির দিন তিনি দায়িত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিলেন। আজ রোববার বেলা আড়াইটার দিকে প্রক্টর কার্যালয়ের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেন তিনি।
লিখিত বক্তব্যে অধ্যাপক তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ বলেন, ‘এক বছর মেয়াদ পূর্ণ করা একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। কারণ, আগে যাঁরা প্রক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁরা মেয়াদ পূরণ করতে পারেননি। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, কোনো প্রক্টরিয়াল বডিরই এক বছর দায়িত্ব পালন করা ঠিক হবে না। এক বছর অনেক লম্বা সময়। আমাদের দেশে এখনো প্রক্টরিয়াল বডির জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেই।’
প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিক আন্দোলন হয়েছে। ছাত্রদল, গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটসহ একাধিক ছাত্রসংগঠন প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করেছে। আন্দোলনের কারণে পদত্যাগ করছেন কি না, এমন প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেননি অধ্যাপক তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ। তিনি বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব নিয়েছিলাম এক বছরের জন্য। সেটারই এক বছর পূর্ণ হলো। উপাচার্যের সঙ্গে এই বিষয়ে যোগাযোগ করতে পারেন। আমি আমার মেয়াদ পুনরায় বৃদ্ধি করব না; বাকিরা বৃদ্ধি করবেন কি না, সেটা তাঁদের ব্যক্তিগত ব্যাপার।’
অধ্যাপক তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর। সে হিসাবে আজ তাঁর মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এর আগে গত ৩০ ও ৩১ আগস্ট রাতে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সংঘর্ষে প্রক্টরিয়াল বডির দায়িত্বে অবহেলার বিষয়ে অভিযোগ তোলেন শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। এর পর থেকে প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগের দাবিতে একাধিক কর্মসূচি পালিত হয়। এ ছাড়া ইসালামী ছাত্রশিবিরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ এনে শাখা ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরাও প্রক্টরের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করেছেন। সম্প্রতি প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগের দাবিসহ সাত দাবিতে ৯ সেপ্টেম্বর অনশন করেন ৯ শিক্ষার্থী। পরে উপাচার্যের আশ্বাসে ৫২ ঘণ্টা পর অনশন ভাঙেন। অবশ্য শুধু এবারই নয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকেই প্রক্টরের পদত্যাগের দাবি উঠেছে। ছাত্রীদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘কুরুচিপূর্ণ’ মন্তব্য করার অভিযোগে ওই মাস থেকেই পদত্যাগ দাবি করে আসছে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ।
এদিকে সদ্য সাবেক প্রক্টর দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার পরই নতুন প্রক্টর নিয়োগ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এই পদে মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক হোসেন শহীদ সরওয়ার্দী দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের রাজনৈতিক সংগঠন সাদা দলের সদস্য। দলটি ক্যাম্পাসে বিএনপি ও জামায়াতপন্থী হিসেবে পরিচিত। তবে শুধু বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম নামে আলাদা সংগঠন রয়েছে। ওই সংগঠনের নেতাদের দাবি, সাদা দল শুধু জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন।
আজ বিকেল চারটার দিকে প্রথম আলোকে নতুন প্রক্টর নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অধ্যাপক তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ দুই বছরের জন্য গবেষণা ও প্রকাশনা দপ্তরের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। হোসেন শহীদ সরওয়ার্দী ছাড়াও প্রক্টরিয়াল বডিতে আরেকজন সদস্য যুক্ত হয়েছেন। তিনি হলেন রাজনীতিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আককাছ আহমেদ। আর বাকি প্রক্টরিয়াল বডি একই রকম থাকবে।