
প্রতিবন্ধী তারা মিয়া (৬০) ভিক্ষা করেন। তাঁর ডান হাতের পুরোটাই অচল। অথচ এই তারা মিয়ার বিরুদ্ধে পুলিশের ওপর রামদা, রড, হকিস্টিক দিয়ে হামলার অভিযোগে মামলা হয়েছিল। বিশেষ ক্ষমতায় আইনে পুলিশের করা এই মামলায় আসামি ছিলেন আরও ৬০ থেকে ৭০ জন। পরে হাইকোর্ট থেকে জামিন নেন তারা মিয়া।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে ‘গায়েবি’ মামলায় তারা মিয়াসহ হয়রানির শিকার ভুক্তভোগীরা আজ মঙ্গলবার সুনামগঞ্জে মানববন্ধন করে সুনামগঞ্জ-১ আসনের (জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, তাহিরপুর, মধ্যনগর) আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে রতন, জামালগঞ্জ থানার তৎকালীন ওসি আবুল হাসেম, ওই মামলার বাদী পুলিশ কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিচার দাবি করেছেন। সুনামগঞ্জ পৌর শহরের আইনজীবী সমিতির সামনের সড়কে দুপুরে এই মানববন্ধন হয়। এতে তারা মিয়াসহ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার ভীমখালী ইউনিয়ন বিএনপির নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। তারা মিয়ার বাড়ি উপজেলার ভান্ডা গ্রামে।
মানববন্ধনে জানানো হয়, ২০১৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় নির্বাচনের দুই দিন আগে পুলিশ বাদী হয়ে ওই মামলাটি করে। এতে নাশকতার পরিকল্পনা ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ আনা হয়। এটি ছিল সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ ও গায়েবি মামলা। এতে প্রতিবন্ধী ভিক্ষুক তারা মিয়াসহ ৬০ থেকে ৭০ জন বিএনপির নেতা–কর্মী ও সমর্থককে আসামি করা হয়। এর মধ্যে অনেকেই জেল খেটেছেন। হয়রানির শিকার হয়েছেন। তারা মিয়া বাধ্য হয়ে হাইকোর্ট থেকে জামিন নেন। বিষয়টি তখন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়।
মানববন্ধনে অভিযোগ করা হয়, এই মামলার হুকুমদাতা ছিলেন সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন। থানা–পুলিশ অতি উৎসাহে বিএনপির নেতা-কর্মীদের দমন–পীড়নের জন্যই এই মিথ্যা মামলা করে। যাঁদের কারণে তারা মিয়াসহ নিরীহ মানুষ হয়রানির শিকার হয়েছেন তাঁদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয় মানববন্ধন থেকে।
মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য দেন জামালগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আরাফাত উল্লাহ, বিএনপি নেতা আইনজীবী মো. শাহিনুর রহমান, বিএনপির স্থানীয় নেতা সাইফুল ইসলাম, আবুল কালাম, আবদুল আখের, আবুল কালাম, আফজাল হোসেন, আজিজুর রহমান, হোসাইন আহমেদসহ অনেকে।
প্রতিবন্ধী ভিক্ষুক তারা মিয়া বলেন, ‘আমি ভিক্ষা করি, কোনো সাতে–পাঁচে নাই। আমার তিনটা মেয়ে, অনেক কষ্টে সংসার চালাই। আমাকে মামলা দিয়ে যে হয়রানি করা হয়েছে, আমি এর বিচার চাই। দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি চাই।’