
নীলফামারী চারটি সংসদীয় আসনের মধ্যে এখনো দুটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিএনপি। এর মধ্যে একটি আসন জোটের শরিকদের জন্য ছেড়ে দেওয়া হতে পারে বলে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে। যদিও দুটি আসনে একক মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে বিএনপির দুই নেতা তৎপর। অন্যদিকে সব আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে মাঠে আছে জামায়াতে ইসলামী।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) দুটি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চারটি আসনেই প্রার্থী ঘোষণা করে মাঠে গণসংযোগ করছে। যদিও আটদলীয় জোটের সমঝোতার পরিপ্রেক্ষিত প্রার্থী পুনর্বিবেচনার ইঙ্গিত দিয়েছেন দলটির নেতারা। তবে বিএনপি ও জামায়াত ছাড়া অন্য কোনো দলের প্রার্থীর তেমন একটা তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।
নীলফামারীতে দীর্ঘদিন বিভিন্ন আসনে জয় পেয়েছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলটির জেলায় রাজনৈতিক তৎপরতা নেই বললেই চলে। জেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ পারভেজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকায় আমাদের দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু হয়েছে। আমাদের প্রস্তুতিও আছে। পরিবেশ পরিস্থিতি ঠিক থাকলে আমরা নির্বাচনে অংশ নেব।’
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মীর সেলিম ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, নীলফামারী-১ ও ৩ আসনে এখনো প্রার্থী ঘোষণা না হলেও বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন দুই প্রার্থী। খুব শিগগির ওই দুই আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হবে।
নীলফামারী-১ (ডোমার ও ডিমলা)
আসনটিতে এখনো বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেনি। স্থানীয়ভাবে আসনটি শরিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশকে ছেড়ে দেওয়ার গুঞ্জন রয়েছে। জমিয়তে উলামার মঞ্জুরুল ইসলাম এ আসনে প্রার্থী হতে চান। ইতিমধ্যে তিনি এলাকায় গণসংযোগ শুরু করেছেন। তবে বিএনপির নেতা-কর্মীরা এখানে নিজেদের প্রার্থী চান। এখানে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে সাবেক সংসদ সদস্য শাহরিন ইসলাম চৌধুরী এলাকায় সভা-সমাবেশ করে যাচ্ছেন। তিনি দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ভাগনে।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রেয়াজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মঞ্জুরুল ইসলাম শরিক দলের প্রার্থী হিসেবে এখানে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এ আসনে শাহরিন ইসলাম চৌধুরী বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। আমরা তাঁর মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করব। আমরা তাঁর নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি।’
আসনটিতে জামায়াত অনেক আগেই জেলা আমির আবদুস সাত্তারকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। দীর্ঘদিন ধরে ভোটারদের আস্থা অর্জনে তিনি মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এ ছাড়া এনসিপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে যুবশক্তির কেন্দ্রীয় মুখ্য সংগঠক মো. সাইদুজ্জামান ও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হিসেবে আবদুল জলিল মাঠে কাজ করছেন।
জামায়াত নেতা আবদুস সাত্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘তফসিল ঘোষণার পর এখন আমরা ম্যান টু ম্যান জনসংযোগ করছি। আমাদের জেলার চারটি আসনে এভাবে এখন প্রচার চলছে। এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো সমস্যা হয়নি।’
নীলফামারী-২ (সদর)
বিএনপি এ আসনে মনোনয়ন দিয়েছে জেলা শাখার সদস্যসচিব এ এইচ এম সাইফুল্লাহকে (রুবেল)। তাঁর বিপরীতে জামায়াত জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও দলের জেলা শাখার সহকারী সেক্রেটারি আল ফারুক আবদুল লতীফকে প্রার্থী করেছে। বিএনপি ও জামায়াতের দুই প্রার্থীই দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচনী এলাকায় সভা-সমাবেশসহ গণসংযোগ করছেন।
বিএনপির প্রার্থী এ এইচ এম সাইফুল্লাহ বলেন, ‘আমরা এখন সেন্টার কমিটিগুলোর সঙ্গে সভা করছি। আমাদের নারী কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধানের শীষের পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন। আমরা ভোটারদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।’
জামায়াতের আল ফারুক আবদুল লতীফ বলেন, ‘আমরা হিন্দু ভোটারদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। তাঁরা এবার আমাদের ভোট দেওয়ার ব্যাপারে আশ্বস্ত করছেন। আমরা ধর্মীয় ব্যাপারসহ সব দিক থেকে তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলছি।’
এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলনের মো. হাচিবুল ইসলাম ও জেলা এনসিপির সদস্যসচিব চিকিৎসক কামরুল ইসলাম দলীয় মনোনয়নে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কামরুল ইসলাম বলেন, ‘নীলফামারীর চারটি আসনের মধ্যে আমাদের দুটি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত হয়েছে। বাকি দুটির ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা ভোটারদের কাছে যাচ্ছি, ব্যাপক সাড়াও পাচ্ছি।’
নীলফামারী-৩ (জলঢাকা)
আসনটিতে এখনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিএনপি। এখানে দলের ‘একক’ মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে গণসংযোগ করছেন জেলা বিএনপির সদস্য ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. সৈয়দ আলী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘দলের সবুজ সংকেত পেয়ে আমি প্রচার চালাচ্ছি। সব শ্রেণি–পেশার ভোটারদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়াও পাচ্ছি।’
এখানে জেলা জামায়াতের কর্মপরিষদের সদস্য ওবায়দুল্লাহ্ সালাফীকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে দলটি। এ আসনে দলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আবু সাঈদ লিওনকে মনোনয়ন দিয়েছে এনসিপি। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হিসেবে মো. আমজাদ হোসেন মাঠে আছেন।
ইসলামী আন্দোলনের জেলা সভাপতি মো. ইয়ছিন আলী বলেন, ‘আমাদের জেলার চারটি আসনে প্রায় ২০ দিন আগে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর পরও আটদলীয় জোটের সমঝোতার কথা আছে। আলোচনা চলমান। সেই অনুযায়ী প্রার্থী পরিবর্তন হতেও পারে।’
এ বিষয়ে জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি আল ফারুক আবদুল লতীফ বলেন, ‘আমাদের চূড়ান্ত মনোনয়ন বলে কথা নেই। দল চাইলে মনোনয়নপত্র দাখিলের আগের দিন পর্যন্ত প্রার্থী বদল করতে পারবে।’
নীলফামারী-৪ (সৈয়দপুর ও কিশোরগঞ্জ)
সৈয়দপুর সাংগঠনিক জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল গফুর সরকারকে নীলফামারী-৪ আসনে মনোনয়ন দিয়েছে দল। আবদুল গফুর সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার দলের কোনো প্রতিপক্ষ প্রার্থী এ আসনে নেই। তফসিল ঘোষণার পর সীমিত আকারে প্রচার চলছে। দলের প্রত্যেকে আমার পক্ষে কাজ করছেন।’
জামায়াত সৈয়দপুর উপজেলার আমির মো. আবদুল মুনতাকিমকে প্রার্থী করেছে। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন দলের বিভাগীয় মুজাহিদ কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সহিদুল ইসলামকে মনোনয়ন দিয়েছে।
২০২৪ সালের ‘বিতর্কিত’ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে আসনটিতে জয়ী হয়েছিলেন উপজেলা জাপার সভাপতি মো. সিদ্দিকুল আলম। দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নির্বাচন করায় তখন তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। এবারও তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সম্প্রতি তাঁর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করলে ১৭ ডিসেম্বর তিনি আবার জাপায় যোগদান করেন। গতকাল সোমবার তিনি স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
সিদ্দিকুল আলম বলেন, ‘জাতীয় পার্টি নির্বাচনে যাবে, আমি দলীয় সিদ্ধান্তকে অগ্রাধিকার দেব।’ জাপা নির্বাচনে অংশ না নিলে কী করবেন জানতে চাইলে বলেন, ‘সবকিছু সময় বলে দেবে। আমার নির্বাচনী এলাকার মানুষ, সমর্থক ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে চাই।’