
চুয়াডাঙ্গার দর্শনা জয়নগর চেকপোস্টের ইমিগ্রেশন পুলিশ ঝিনাইদহ আদালতের সাবেক সরকারি কৌঁসুলি (জিপি) জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বিকাশ কুমার ঘোষকে (৫০) গ্রেপ্তার করেছে। আজ শনিবার বিকেল স্ত্রী, মেয়েসহ ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঝিনাইদহের একটি মামলায় বিকাশ কুমার ঘোষের দেশত্যাগের ওপর সম্প্রতি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
দর্শনা জয়নগর চেকপোস্টের ইমিগ্রেশন পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) তারেক মাহমুদ জানান, বিকাশ কুমার ঘোষ তাঁর স্ত্রী রুপা রাহুতের (৪৮) চিকিৎসার জন্য ১৩ মে দর্শনা জয়নগর চেকপোস্ট হয়ে ভারতে যান। এ সময় তাঁদের ১৪ বছর বয়সী মেয়ে সঙ্গে ছিলেন। চিকিৎসার কারণে ১৭ দিন ভারতে অবস্থান শেষে স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে ভারত থেকে দেশের ফেরার পথে ইমিগ্রেশন পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন এই আইনজীবী।
ইমিগ্রেশন পুলিশের কর্মকর্তা তারেক মাহমুদ বলেন, ১৩ মে যখন বাংলাদেশ থেকে তাঁরা ভারতে যান, সে সময় দেশত্যাগে কোনো নিষেধাজ্ঞা ছিল না। তাঁরা ভারতে অবস্থানকালে ২০ মে ইমিগ্রেশন সদর দপ্তর নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি দর্শনা জয়নগর ইমিগ্রেশন বিভাগকে অবহিত করে। যে কারণে আজ দেশের আসার পরপরই বিকাশ কুমার ঘোষকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর তাঁকে দর্শনা থানা-পুলিশে সোপর্দ করা হয়। তবে তাঁর স্ত্রী ও সন্তানের নামে কোনো মামলা না থাকায় তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
বিএনপি নেতার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগে গত বছরের ২৯ আগস্ট আইনজীবী বিকাশ কুমার ঘোষসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা করা হয়।
দর্শনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদ মো. তিতুমীর প্রথম আলোকে জানান, সাবেক জিপি বিকাশ কুমার ঘোষকে গ্রেপ্তারের পর ঝিনাইদহ সদর থানা-পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে। গ্রেপ্তার বিকাশ কুমার ঘোষকে ঝিনাইদহে নিতে পুলিশের একটি দল চুয়াডাঙ্গার দর্শনার উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে ওসি শহিদ মো. তিতুমীর বলেন, ‘যে মামলায় আইনজীবী বিকাশ কুমার ঘোষকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, সেই মামলায় তিনি জামিনে আছেন বলে আমাদেরকে জানিয়েছেন।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আকতারুজ্জামানের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগে গত বছরের ২৯ আগস্ট আইনজীবী বিকাশ কুমার ঘোষসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা করা হয়। বিএনপি নেতা আকতারুজ্জামান বাদী হয়ে এই মামলা করেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ৪ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে বাদীর মালিকানাধীন আকতার ফার্মেসিতে বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আওয়ামী লীগ–দলীয় নেতা-কর্মীরা ভাঙচুর ও লুটপাট করেন। দোকানে থাকা ওষুধ সংরক্ষণের একটি ফ্রিজ, দোকানের লাগানো এসি ও কম্পিউটার ভাঙচুর করা হয়। সন্ত্রাসীরা দোকানে থাকা কর্মচারীদের মারপিট করে দোকানের ক্যাশবাক্স থেকে দেড় লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। এ ছাড়া দোকানে থাকা সব ওষুধ ও আসবাব লুটপাট করে। যার ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩০ লাখ টাকা।
এই মামলায় সাবেক জিপি বিকাশ কুমার ঘোষ ছাড়াও ঝিনাইদহ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সফিকুল ইসলাম (হুকুমের আসামি) ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুল ইসলাম, পাগলাকানাই ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু সাঈদ, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি জীবন কুমার বিশ্বাস ও সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল ইমরান, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মাহমুদ জনসহ ৩১ জনকে এজাহারভুক্ত আসামি এবং ২০০-৩০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।