
‘আবর্জনার মতো লাগে’ বলে এক ব্যক্তি কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার বেলতলী এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভাজকে থাকা অর্ধশত গাছ কেটে ফেলার পর সেখানে নতুন করে ৬৩টি বকুল চারা রোপণ করেছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। আজ মঙ্গলবার সকালে বেতলতী এলাকায় গিয়ে সড়ক বিভাজকে এসব গাছ দেখা গেছে।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, গতকাল সোমবার সওজের লোকজন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভাজকের ওই ফাঁকা স্থানে গাছগুলো রোপণ করেন। গাছগুলোর ভেঙে পড়া রোধে সেখানে বাঁশের কঞ্চি গেড়ে বেঁধেও দেওয়া হয়েছে। এর আগে একই স্থানের প্রায় ৫০০ মিটার এলাকায় অন্তত ৫২টি বকুলগাছ কেটে ফেলা হয়। এগুলো অবৈধভাবে কাটার অভিযোগে আজমির হোসেন (৩৭) নামের এক ব্যক্তিকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। আজমির কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার সাওড়াতলী গ্রামের শাহজাহান মজুমদারের ছেলে। তবে তিনি বেলতলী এলাকায় উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা ১০০ শয্যাবিশিষ্ট শিশু হাসপাতালের ফটকের পাশে একটি দোচালা টিনের ঘরের একাংশে থাকেন, অন্য অংশে চা-বিস্কুট বিক্রি করতেন।
১২ নভেম্বর সরেজমিনে গাছ কাটার প্রমাণ পায় প্রথম আলো। তখন বিষয়টি সওজ বিভাগের নজরে আনা হয়। এ নিয়ে গত শুক্রবার প্রথম আলোর ছাপা পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরদিন শনিবার প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে ‘আবর্জনার মতো লাগে’, তাই বিভাজকের অর্ধশত বকুলগাছ কাটলেন তিনি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। পরে গত শনিবার রাতে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানায় এ ঘটনায় মামলা করেন কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ বিভাগের কার্যসহকারী রুহুল আমিন। ওই রাতেই পুলিশ অভিযুক্ত আজমির হোসেনকে গ্রেপ্তার করে।
গাছগুলো রোপণ করায় স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি বৃক্ষপ্রেমীরা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। আনোয়ার হোসেন নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, গাছগুলো মৌসুমে ফুলে ফুলে ভরে যেত। দেখতে কি দারুণ লাগত! তা ছাড়া বকুলগাছে ফলও ধরে। পাখিরা এসব ফলগুলো বসে বসে খেত। দেখতে খুবই সুন্দর লাগতে। এখন আবার নতুন করে গাছ রোপণ করা হয়েছে। সওজ যেন গাছগুলোর যত্ন নেয়।
বেলতলী এলাকায় মহাসড়কের চট্টগ্রামমুখী লেনের পাশে দীর্ঘ প্রায় দেড় দশক ধরে চা বিক্রি করেন স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল কুদ্দুস। দ্রুত সময়ের মধ্যে সেখানে গাছ লাগানোয় তিনি স্বস্তি প্রকাশ করে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গাছগুলো আমার দোকানের সামনে। দোকানে বসেই সব সময় গাছগুলোর সৌন্দর্য দেখেছি। কাটার সময় স্থানীয় লোকজন আজমিরকে অনেকবার বাধা দিয়েছে। কিন্তু তিনি কারও কথাই শুনেননি।’
কুমিল্লা গার্ডেনার্স সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা ও চিকিৎসক আবু মোহাম্মদ নাঈম বলেন, আজ সকালে কর্মস্থলে যাওয়ার সময় নতুন করে বকুলগাছ লাগানো দেখে মনটা ভরে গেছে। এসব গাছ রক্ষায় মানুষের সচেতনতার পাশাপাশি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নিয়মিত তদারকি জরুরি। কেউ গাছ কাটলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিলে মানুষ এভাবে গাছ হত্যা বন্ধ করবে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভাজকে লাগানো গাছের তদারকি বাড়ানোর কথা জানিয়েছেন কুমিল্লা সওজের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আদনান ইবনে হাসান। তিনি বলেন, বিষয়টি নজরে আসা মাত্রই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অপেক্ষা না করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সেখানে ৬৩টি বকুলগাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। এখন থেকে নিয়মিত গাছগুলোর যত্ন নেওয়া হবে।