Thank you for trying Sticky AMP!!

পরিবার ও পুলিশ বলছে, পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড, স্বামী পুলিশি হেফাজতে

নিহত গৃহবধূ রিপার স্বজনদের আহাজারি। বৃহস্পতিবার দুপুরে বরিশালের বাবুগঞ্জ থানার সামনে

বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের ভূতেরদিয়া গ্রামে একই পরিবারের দুই নারীর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনাটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে মনে করছে পুলিশ ও নিহত নারীদের পরিবার।

Also Read: বরিশালে একই পরিবারের দুই নারীর রহস্যজনক মৃত্যু, আরও একজন হাসপাতালে

নিহত গৃহবধূ রিপা আক্তারের (২৩) পরিবারের অভিযোগ, পারিবারিক কলহের জেরে রিপাকে তাঁর স্বামী ও শাশুড়ি মিলে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছেন। হত্যার বিষয়টিকে আড়াল করতে রিপার স্বামী সোলায়মান হোসেনের শতবর্ষী দাদিকেও হত্যা করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, খাবার বা অন্য কোনোভাবে বিষপ্রয়োগ করে তাঁদের হত্যা করা হয়েছে। বিষয়টিকে চুরি বলে চালাতে ঘরের পাশে সিঁদ কাটা হয়েছে। পুলিশও ঘটনার সার্বিক দিক বিচার-বিশ্লেষণ করে প্রাথমিকভাবে মনে করছে, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।

গতকাল বুধবার দিবাগত গভীর রাতে বাবুগঞ্জের কেদারপুর ইউনিয়নের ভূতেরদিয়া গ্রামের প্রয়াত ইউপি সদস্য দেলোয়ার হোসেনের বাড়ি থেকে দেলোয়ার হোসেনের মা লালমুন্নেছা বেগম (৯৮), ছেলে সোলায়মান হোসেনের স্ত্রী রিপা আক্তার (২৩) এবং দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী মিনারা বেগমকে (৫০) অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করেন প্রতিবেশীরা। তাঁরা ওই তিনজনকে বাবুগঞ্জ উপজেরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে লালমুন্নেছা ও রিপা আক্তারকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসার পর সকালে মিনারা বেগমের জ্ঞান ফিরে আসে। তিনি বর্তমানে চিকিৎসাধীন।

প্রতিবেশী মরিয়ম বেগম জানান, বুধবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে প্রতিবেশী দেলোয়ার হোসেনের ঘরের সামনে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তিকে ঘোরাফেরা করতে দেখেন তিনি। এ সময় লোকজনের উপস্থিতি টের পেয়ে লোকটি সটকে পড়েন। এ সময় সন্দেহ হলে তিনি বাড়ির লোকজন ডেকে দেলোয়ার হোসেনের ঘরে গিয়ে দেখতে পান ঘরের মাটির ভিটার একপাশ সিঁদ কাটা ও দরজা খোলা। ঘরে প্রবেশ করে দেখেন, বাড়িতে থাকা তিন নারীই অচেতন অবস্থায় বিছানায় পড়ে আছেন।

দেলোয়ার হোসেনের প্রতিবেশীরা জানান, ঘটনার রাতে রিপার স্বামী সোলায়মান বাড়িতে ছিলেন না। তিনি বরিশাল নগরের উপকণ্ঠে ঝরঝরিয়াতলা এলাকায় তাঁর ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যানের চার্জ দেওয়ার গ্যারেজে ছিলেন।

গৃবধূ রিপার পরিবারের সদস্যরা জানান, বছর চারেক আগে একই উপজেলার চাঁদপাশা ইউনিয়নের রিপা আক্তারের সঙ্গে ভূতেরদিয়া গ্রামের সোলায়মানের বিয়ে হয়। বিয়ের পর কয়েক মাস যেতেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য, ঝগড়া চলছিল। এর জেরে রিপার ওপর প্রায়ই স্বামী ও শাশুড়ি মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালাতেন।

রিপার চাচা নুর হোসেনের অভিযোগ, ঘটনাটি চুরি বলে চালাতেই সিঁদ খোঁড়া হয়েছে। যে সিঁদ খোঁড়া হয়েছে, সেখান থেকে একজন লোক আসা-যাওয়া করতে পারে না। রিপার স্বামীর বাড়ির লোকজন পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন।

রিপার দাদিশাশুড়ির মৃত্যুর বিষয়টি তুলে ধরলে নুর হোসেন বলেন, সেটাও এ পরিকল্পনার অংশ, যাতে কেউ এ নিয়ে সন্দেহ না করতে পারে। আর সোলায়মানের মা যে অসুস্থ, তা-ও নাটক।

খবর পেয়ে রাতেই রিপার স্বামীর বাড়িতে উপস্থিত হন তাঁর মা ইয়াসমিন বেগম। বিলাপ করতে করতে তিনি বলেন, ‘এখন আমার মেয়ে আর এই দুনিয়ায় নাই। তবে ওরে যে মেরে ফেলছে, তাতে সন্দেহ নাই। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’ রিপার ভাই তরিকুল ইসলাম বলেন, রাতে রিপার স্বামী সোলায়মান তাঁকে ফোন করে জানান, তাঁদের বাড়িতে চুরি হয়েছে এবং ঘরের তিনজনকে কী যেন খাওয়ানো হয়েছে। খবর শুনে বাড়িতে এসে দেখেন, তাঁর বোন মারা গেছেন।

বাবুগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা আতিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, রাত তিনটার দিকে ওই তিনজনকে হাসপাতালে আনা হয়। আনার আগেই দুজন মারা গিয়েছিলেন। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, ওই দুজন কোনো বিষক্রিয়ায় মারা গেছেন। তবে যিনি বেঁচে আছেন, তাঁকে সম্ভবত কোনো চেতনানাশক বা অন্য কিছু প্রয়োগ করা হয়েছিল। এটা নিশ্চিত, তিনি বিষক্রিয়ায় অসুস্থ নন। সকালেই তাঁর জ্ঞান ফিরেছে। দুজনের মৃত্যুর রহস্য ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়।

ঘটনার পর বৃহস্পতিবার সকালে ওই বাড়ি পরিদর্শন করেছেন বরিশাল জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বাকেরগঞ্জ সার্কেল) ফরহাদ সরদার। তিনি বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে, এটা একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। ওই দুজনকে শ্বাসরোধে নাকি বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করা হয়েছে, সেটা নিশ্চিত হতে সময় লাগবে।

এদিকে ঘটনার পর নিহত লিপি আক্তারের স্বামী সোলায়মান হোসেনকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় এনেছে। বাবুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার বিকেলে বলেন, ‘সোলায়মান থানা-পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন। আমরা তাঁর কাছে ঘটনার বিষয়ে সবিস্তারে জানব। এ ঘটনায় হত্যা মামলা হবে। ঘটনাটি যে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড, সেটা শতভাগ নিশ্চিত।’