
ময়মনসিংহ শহর থেকে গৌরীপুর উপজেলার টেঙ্গাপাড়া গ্রামের দূরত্ব প্রায় ৪৩ কিলোমিটার। গ্রামে আছে প্রাচীন একটি মাজার। কিন্তু কত প্রাচীন, তা কেউ জানেন না। মাজারের সীমানাপ্রাচীরের ভেতরে থাকা পুরোনো তিনটি গাছ দেখে এগুলো প্রায় ২০০ বছরের বেশি পুরোনো বলে ধারণা স্থানীয় লোকজনের।
প্রাচীন মাজারটিতে গানবাজনা কিংবা ওরস হতো না। গত বৃহস্পতিবার রাতের কোনো একসময় মাজারটিতে ভাঙচুর চালানো হয়।
কী কারণে মাজারটি ভাঙা হলো, সেই প্রশ্নের উত্তর মেলাতে পারছেন না স্থানীয় বাসিন্দারা। এ ঘটনায় আজ শনিবার বিকেলে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে থানায় এটি মামলা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে শাহজাহান উদ্দিন আউলিয়া (রহ.)-এর মাজারের সীমানাপ্রাচীর ভেঙে ভেতরে গোবর ও মলমূত্র ছিটানো হয়। শুক্রবার সকালে মাজারের এমন অবস্থা দেখে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়।
মাজারের পাশের বাড়ির বাসিন্দা রকিবুল ইসলাম বলেন, শীতের রাত হওয়ায় সবাই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে গিয়েছিলেন। মাজারটির ইট ভাঙার শব্দ তাঁরা শুনতে পাননি। মাজারে এমন কিছু হতো না যে ভাঙতে হবে। কারা, কেন ভাঙল, তাঁরা বুঝতে পারছেন না।
স্থানীয় বাসিন্দা সুলতান মিয়ার বয়স প্রায় ৭০। তিনি বলেন, ‘মাজারটি আমার বাবা-দাদারাও একই অবস্থায় দেখেছে। মাজারের গোড়ায় ডেফলগাছগুলো একই রকম। দুই-আড়াই শ বছরের কম হবে না। মাজারে খারাপ কোনো কাজ না হলেও কী উদ্দেশ্যে মাজারটি ভাঙা হলো বুঝতে পারছি না।’ তিনি বলেন, ‘কারা যে মাজারটি ভাঙল, গ্রামের কাউকে সন্দেহও করতে পারছি না।’
গ্রামের বাসিন্দা শহীদুল্লাহ্ ফকির (৬৫) বলেন, ‘মাজার ভাঙচুর করে গোবর ছিটিয়েছে, পায়খানা করেছে, কবরে শাবল দিয়ে ফাড়াইছে। এ কাজটি খুবই খারাপ হয়েছে। কাউরে আমরা সন্দেহ করতে পারছি না। যারা এই কাজ করেছে, তাদের বিচার চাই।’
মাজারটিতে অন্তত ৩৫ বছর ধরে প্রতিদিন মাগরিবের নামাজের আগে মোমবাতি জ্বালান খাদেম মো. সায়েদুল ইসলামের স্ত্রী জরিনা খাতুন। আজ সন্ধ্যার আগমুহূর্তে মাজারে মোমবাতি জ্বালাতে আসেন তিনি। এই দম্পতি মাজারটি পরিষ্কার ও দেখভাল করেন। জরিনা খাতুন বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার সময় মোমবাতি জ্বালিয়ে গেছি। পরদিন সকালে এসে দেখি মাজার ভাঙচুর করা, গোবর ছিটানো, পায়খানা করা। পরে সবাইকে বিষয়টি জানাই।’
এ ঘটনায় আজ বিকেলে গৌরীপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দেন মাজারের খাদেম মো. সায়েদুল ইসলাম। অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে দেওয়া অভিযোগটি বিকেলেই মামলা হিসেবে রেকর্ড করে পুলিশ।
মাজারের খাদেম সায়েদুল ইসলাম বলেন, ‘মাজার নিয়ে কারও রাগ-ক্ষোভ ছিল না৷ কারা, কী কারণে মাজারটি ভাঙল কইতে পারি না। মাজারডা কের লাগি ভাঙল আল্লায় জানে।’
মাজার-সংলগ্ন মসজিদের ইমাম ওমর ফারুকের বাড়ি সহনাটী ইউনিয়নের লাডুরপায়ার গ্রামে। তিনি বলেন, ‘আমি ছুটিতে ছিলাম। সাত দিন পর আজ (শনিবার) এসেছি। মাজার কারা ভাঙল জানি না কিছু।’
গৌরীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুল হাসান বলেন, ‘কেউ শত্রুতাবশত বা মাদকাসক্ত কেউ মাজারটি ভাঙচুর করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। থানায় মামলা হয়েছে। আমরা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। তদন্ত ছাড়া কিছু বলা যাচ্ছে না।’