
লালমনিরহাটের আদিতমারী, হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলার কয়েকটি সীমান্ত এলাকা দিয়ে নারী-শিশুসহ অন্তত ৬৫ জনকে ঠেলে পাঠানোর চেষ্টা করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। তবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও স্থানীয় লোকজনের বাধায় বিএসএফ সফল হয়নি। ঠেলে পাঠানোর জন্য আনা লোকজন বর্তমানে কাঁটাতারের ওপারে ভারতীয় অংশের শূন্যরেখায় অবস্থান করছেন।
আজ বুধবার ভোরে আদিতমারীর দুর্গাপুরের চওড়াটারী, হাতীবান্ধার ভেলাগুড়ির বনচৌকি; পাটগ্রামের ধবলগুড়িসহ বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে তাঁদের ঠেলে পাঠানোর চেষ্টা করা হয়। এ ঘটনায় সীমান্তগুলোতে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ নিয়ে দুপুরে বিজিবি ও বিএসএফের ক্যাম্প কমান্ডার পর্যায়ে এবং বিকেলে অধিনায়ক পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বিজিবি ও সীমান্তের বাসিন্দাদের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আজ ভোররাত থেকে আদিতমারীর দুর্গাপুরের চওড়াটারী সীমান্ত দিয়ে ১৩ জন; হাতীবান্ধা উপজেলার ফকিরপাড়া ইউনিয়নের বুড়া সারডুবী সীমান্তে ১৬ জন, গোতামারী সীমান্তে ৬জন এবং সিন্দুর্না ইউনিয়নে দুজন; পাটগ্রাম উপজেলার জগৎবেড় ইউনিয়নে ১৫ জন, জোংড়া ইউনিয়নের ধবলগুড়ি সীমান্তে পাঁচজন, বাউড়া ইউনিয়নের সীমান্তে আটজনকে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে ঠেলে পাঠানোর চেষ্টা করে বিএসএফ। তবে বিজিবির বাধায় ওই ব্যক্তিরা বাংলাদেশে ঢুকতে পারেননি। ঘটনার পর থেকে সীমান্তে সতর্ক অবস্থান নেয় বিজিবি। এতে ঠেলে পাঠানো লোকজন শূন্যরেখায় খোলা আকাশের নিচে অবস্থান নিতে বাধ্য হন। এদিকে বিভিন্ন সীমান্তে ঠেলে পাঠানোর খবর পেয়ে সীমান্তে বিজিবির পাশাপাশি স্থানীয় গ্রামবাসীও অবস্থান নেন।
বিজিবি জানায়, কাঁটাতারের বেড়ার গেট খুলে এপারে পাঠানো লোকজন ভারতের আসামের বাসিন্দা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিজিবির পক্ষ থেকে বিএসএফকে পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানানো হয়। পরে দুপুরে আদিতমারীর দুর্গাপুরের চওড়াটারী গ্রামের ৯২৪ মেইন পিলারের ৯ এস পিলারের কাছে বিজিবির দুর্গাপুর বিওপি ক্যাম্পের কমান্ডার ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার দিনহাটা থানার পদ্মা ৭৮ বিএসএফ ক্যাম্পের কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এরপর একই স্থানে বেলা তিনটার দিকে লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক ও ৭৮ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী ইমাম প্রথম আলোকে বলেন, পতাকা বৈঠকে বিএসএফের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, সীমান্তে অবস্থান করা ব্যক্তিরা বাংলাদেশি নাগরিক। তখন বিজিবির পক্ষ থেকে বলা হয়, উপযুক্ত তথ্য–উপাত্ত ও গ্রহণযোগ্য প্রমাণ ছাড়া তাঁরা কাউকে বাংলাদেশে পুশ ইন করতে দিতে পারেন না। বিএসএফের পক্ষ থেকে বিষয়টি সুরাহা করতে কয়েক ঘণ্টা সময় চাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রাপ্ত তথ্য–উপাত্ত মতে, এঁরা সবাই আসামের বাংলাভাষী মুসলমান।’
বিকেল পাঁচটায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ওই ব্যক্তিরা সীমান্তের শূন্যরেখায় অবস্থান করছিলেন। বিজিবি ও বিএসএফের কড়া অবস্থানের কারণে তাঁরা বাংলাদেশ কিংবা ভারতের মূল ভূখণ্ডে যেতে পারছিলেন না।
শূন্যরেখায় অবস্থান করা ব্যক্তিদের বরাতে সীমান্তের বাসিন্দারা জানান, তাঁরা সবাই ভারতের আসাম রাজ্যের নাগরিক। সেখানে তাঁদের জায়গাজমিসহ বাড়ি আছে। তাঁদের পরিচয়পত্র কেড়ে নিয়ে শূন্যরেখায় ফেলে গেছে বিএসএফ।