
এক রাতের বৃষ্টিতে রাজশাহীর গোদাগাড়ী ও তানোর উপজেলার উঠতি আমন ধান তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া জেলার অন্যান্য উপজেলার কাঁচা–পাকা ধানখেতেরও ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। কোথাও কোথাও ভেঙে পড়েছে কাঁচা বাড়িঘর।
গোদাগাড়ীর প্রসাদপাড়া গ্রামের মো. মোস্তাকিন আলী জানালেন, বিলে প্রায় আধা পাকা সাত বিঘা জমির ধান এক রাতের বৃষ্টিতে সম্পূর্ণ তলিয়ে গেছে। আর ১০ দিন হলেই তাঁর ধান কাটা শুরু হতো। এ সময় হঠাৎ রাতের বৃষ্টিতে সব ধান তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া তাঁর ছয় বিঘার পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।
বৃষ্টিতে শুধু প্রসাদপাড়া গ্রামেই অন্তত ১০টি পুকুর ভেসে যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। গোদাগাড়ীর রিশিকুল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য মুজিবুর রহমান জানান, এক রাতের বৃষ্টিতে গোদাগাড়ী উপজেলার প্রসাদপাড়া, বিল্লী, বিলাসী, বাবুপুর, খড়িয়াকান্দি, রিশিকুল, ভাজনাপাড়া, মৃধাডাইং, আলোকছত্র, তানরের কীজিজিয়া, মোহাম্মদপুর, টাটিহাটি, ছোট পলাশীসহ প্রায় ২০টি গ্রামের প্রায় ৫ হাজার বিঘা জমির উঠতি আমন ধান ডুবে গেছে।
বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার অন্যান্য উপজেলার আধা পাকা ধান তলিয়ে না গেলেও মাটিতে শুয়ে পড়েছে।
শনিবার বিকেলে প্রসাদপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া পাকা সড়কের ওপর দিয়ে প্রবল বেগে স্রোত বয়ে যাচ্ছে। চারদিকে পুকুর ভেসে যাওয়ার কারণে মাঠে পুকুরের মাছ চলে এসেছে। রাস্তার পাশে জাল দিয়ে এলাকাবাসী মাছ ধরছিল। প্রসাদপাড়া ও বিল্লী মাঠ দুটিতে আমন ধানের সোনালি রং ধরেছিল। সেই ধানখেতের ওপর দিয়ে এখন প্রবল বেগে পানির স্রোত বয়ে যাচ্ছে। কোথাও সবুজের কোনো চিহ্ন নেই।
গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, তাঁর বয়স ৭২ বছর চলছে। ১৯৮৬ সালের পরে এই এলাকায় এত পানি দেখেননি।
কৃষক নজরুল ইসলামের প্রায় দেড় বিঘা জমিতে আমন ধান ছিল। শনিবার সকালে উঠে দেখছেন সারা মাঠ পানিতে থই থই করছে। সব ধান তলিয়ে গেছে।
কৃষক মাহতাব আলীর পাঁচ বিঘা জমির ধান ছিল আধা পাকা। সব ডুবে গেছে।
তানোরের কচুয়া আইডিয়াল কলেজের শিক্ষক ও প্রসাদপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ জিয়াউর রহমানের বিল্লী মাঠে ৩০ বিঘা জমির আমন ধান ছিল। এক সপ্তাহের মধ্যেই প্রায় সব ধান কাটার উপযোগী হতো। এক রাতের বৃষ্টিতেই সব তলিয়ে গেছে। এই ধানের অবশিষ্ট কিছু পাওয়া যাবে কি না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। ধানের খেতের ওপর দিয়ে প্রবল বেগে স্রোত বয়ে যাচ্ছে।
প্রসাদপাড়া গ্রামের প্রায় ২০টি কাঁচা বাড়ি ধসে পড়ার তথ্য পাওয়া গেছে। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে পাশের বিল্লী গ্রামের মো. সেলিম উদ্দিনের মাটির তৈরি একটি দোতলা বাড়ি ধসে পড়েছে। বাড়িতে পানি ঢোকার কারণে আগে থেকেই পরিবারের সদস্যরা বাইরে বের হয়ে আসায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
প্রসাদপাড়া গ্রামের কাইম উদ্দিনের বাড়ি সম্পূর্ণ ধসে পড়েছে। সকাল ৯টার দিকে বাড়ি ভেঙে পড়ার সময় পরিবারের ছয়জন সদস্য বাইরে অবস্থান করছিলেন।
কাইমুদ্দিনের স্ত্রী রাশিদা বেগম বলেন, ‘আমাদের যাওয়ার কোনো জায়গা নাই। রাস্তার ওপরেই রাতে থাকতে হবে।’ একই গ্রামের আলিমুদ্দিনের বাড়ি জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। বাড়ির মাটির ঘরটির ধসে পড়েছে। তাঁরাও এখন রাস্তার ওপর এসে আশ্রয় নিয়েছেন।