Thank you for trying Sticky AMP!!

সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের শিক্ষক রায়হান শরীফের বিচারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। মঙ্গলবার সকালে কলেজের সামনের সড়কে

পিস্তল বের করে ‘এটা আমার পোষা পাখি’ বলে গুলি চালান শিক্ষক রায়হান

সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের শিক্ষক রায়হান শরীফ ব্যাগ থেকে পিস্তল বের করে ‘এটা আমার পোষা পাখি’ বলে গুলি চালান, প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীদের এমনটাই ভাষ্য। গতকাল সোমবার কলেজের এমবিবিএস অষ্টম ব্যাচের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরাফাত আমিনকে গুলি করার ঘটনায় আলোচনায় আসেন কমিউনিটি মেডিসিনের এই শিক্ষক।

গতকাল গ্রেপ্তারের পর শিক্ষক রায়হান শরীফ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে বলেন, গত রোববার তিনি শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ডেকেছিলেন। কিন্ত শিক্ষার্থীরা তাঁর নির্দেশমতো ক্লাসে উপস্থিত হননি। গতকাল মৌখিক পরীক্ষা চলার সময় কয়েকজন শিক্ষার্থীর কাছে ক্লাসে অনুপস্থিতির বিষয়ে কৈফিয়ত চান তিনি।

শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, এ সময় শিক্ষার্থীদের ওপর ক্ষুব্ধ হন রায়হান শরীফ। তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমাদের কারও কি পোষা পাখি আছে? আমার পোষা পাখি আছে।’ এই বলে তিনি সঙ্গে থাকা কালো ব্যাগ থেকে পিস্তল বের করে শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘এটা আমার পোষা পাখি।’ এরপর গুলি করেন। গুলি শিক্ষার্থী আরাফাত আমিনের ডান ঊরুতে লাগে।

এ ঘটনায় শিক্ষার্থী আরাফাত আমিনের বাবা মামলা করেন। ওই মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, শিক্ষক রায়হান শরীফ সব সময় রূঢ় আচরণ করেন। ব্যাগে পিস্তল ও ধারালো অস্ত্র বহন করতেন। টেবিলের ওপর পিস্তল রেখে পাঠদান করতেন। শিক্ষার্থীরা অস্ত্র নিয়ে ক্লাসে আসতে আপত্তি জানালে তিনি ভয়ভীতি ও গুলি করে হত্যার হুমকি দিতেন। ঘটনার দিন গুলিবিদ্ধ হয়ে আরাফাত আমিন চিৎকার করলে তাঁকে সাহায্যের জন্য বন্ধুরা এগিয়ে আসেন। তাঁরা তাঁকে জরুরি বিভাগে নিতে চাইলে শিক্ষক রায়হান শরীফ অস্ত্র উঁচিয়ে ভয় দেখিয়ে বলেন, ‘তোরা যদি ওকে চিকিৎসার জন্য জরুরি বিভাগে নিয়ে যাস, তাহলে তোদের গুলি করে মেরে ফেলব।’

পরে সহপাঠীরা জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল দিলে সিরাজগঞ্জ সদর থানার পুলিশ ও জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ঘটনাস্থলে পৌঁছে রায়হান শরীফকে অস্ত্রসহ আটক করে।

রায়হান শরীফ

রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ৫২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন রায়হান শরীফ। সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক তাঁর বাবা। ছাত্রজীবন থেকে তিনি বদরাগী ও উগ্র স্বভাবের ছিলেন বলে তাঁর একাধিক সহকর্মীর ভাষ্য। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কথায় কথায় শিক্ষার্থীদের হুমকি, রূঢ় আচরণ করা, ছাত্রীদের সঙ্গে আপত্তিকর আচরণ করতেন তিনি। কলেজ প্রশাসনকে এগুলো জানানো হলেও তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের এক শিক্ষক বলেন, রায়হান শরীফ আগেও কলেজে পিস্তল প্রদর্শন করেছেন। তখন তাঁকে সতর্ক করায় হুমকি দিয়েছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে মাদক সেবনের অভিযোগও আছে।
মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ আমিরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, রায়হান শরীফ উগ্র মেজাজি। তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রায়ই খারাপ আচরণ করেন বলে অভিযোগ আসছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Also Read: অস্ত্রের প্রতি বিশেষ আকর্ষণ ছিল শিক্ষক রায়হানের, কিনেছেনও: ডিবি

সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) আরিফুর রহমান মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থীকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় চিকিৎসক রায়হান শরীফকে আটক করা হয়। তাঁর কাছ থেকে সেভেন পয়েন্ট ফাইভ সিক্স বোরের ২টি বিদেশি পিস্তল, ৮১টি গুলি, ৪টি ম্যাগাজিন ও ১২টি বিদেশি চাকু উদ্ধার করা হয়েছে। দুটি বিদেশি পিস্তলের বৈধ কোনো লাইসেন্স তিনি দেখাতে পারেননি। তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থী আরাফাত আমিন

সিরাজগঞ্জ ডিবির পরিদর্শক জুলহাজ উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থীকে গুলি করার ঘটনায় গতকালই রায়হান শরীফকে আটক করা হয়। তখন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেন, একটি বিদেশি পিস্তল তিনি লাখ টাকায় কিনেছিলেন। অস্ত্রের প্রতি তাঁর বিশেষ আকর্ষণ ছিল। ইন্টারনেটে বিদেশি পিস্তলের ছবি দেখলেই ডাউনলোড করে রাখতেন। এরপর বিদেশি অস্ত্র কেনার দিকে ঝুঁকে পড়েন। রায়হান শরীফের মুঠোফোনের হোয়াটসঅ্যাপে দেখা গেছে, একজন চিকিৎসক তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলেন তিনি কিসের ব্যবসা করেন। জবাবে তিনি লিখেছেন, ‘অস্ত্র কেনাবেচার ব্যবসা।’

Also Read: সিরাজগঞ্জে মেডিকেল কলেজের শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীকে গুলি করার অভিযোগ

সিরাজগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম বলেন, রায়হান শরীফের বিরুদ্ধে গতকাল দিবাগত রাত ১২টার পর থানায় দুটি মামলা হয়েছে। গুলি করে হত্যাচেষ্টা ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে একটি মামলা করেছেন গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থীর বাবা আবদুল্লাহ আল আমিন। অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনে রায়হান শরীফের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করেন সিরাজগঞ্জ ডিবির উপপরিদর্শক আবদুল ওয়াদুদ।