
গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে ধানের জমি দেখভাল করে বাড়িতে ফিরেছিলেন নাসির উদ্দীন (৬৫)। ঘরে বসে তিনি স্ত্রী মসলিনা বেগম, পুত্রবধূ রুখসানা বেগম ও নাতনি মিশু আক্তারের সঙ্গে গল্প করছিলেন। হঠাৎ সবকিছু কাঁপতে শুরু করলে তাঁরা ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসেন। বাড়ির আঙিনায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। পাঁচ মিনিট পর তাঁর মাথা চক্কর দেয়। বুকে হাত দিয়ে ‘আমাকে ধর’ বলতে বলতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি।
গতকাল ভূমিকম্পের সময় নরসিংদীর পলাশ উপজেলার কাজীরচর গ্রামের নাসির উদ্দীনের মৃত্যুর ঘটনা এভাবেই বলছিলেন তাঁর পুত্রবধূ রুখসানা বেগম।
রুখসানা বেগম বলেন, ‘ভূমিকম্পের আগে বাড়ির পাশের দোকান থেকে শ্বশুর পান কিনে আনেন। ওই পান খেতে খেতে আমাদের সঙ্গে গল্প করেন। ঝাঁকুনি শুরু হলে আমরা সবাই ঘর থেকে বেরিয়ে উঠানে আসি। ওই সময় তিনি খুঁড়িয়ে হাঁটছিলেন। বলছিলেন, এমন ভূমিকম্প জীবনে কখনো দেখেননি।’
পরিবারের সদস্যরা জানান, মাটিতে লুটিয়ে পড়ার পর সবাই নাসিরের মাথায় পানি দিতে থাকেন। চিৎকার শুনে প্রতিবেশী কয়েকজন এগিয়ে আসেন। সবাই মিলে তাঁকে দ্রুত কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেন। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর তাঁর লাশ নিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন তাঁরা।
নাসিরের নাতনি মিশু আক্তার জানান, ভূমিকম্পে হঠাৎ সবকিছু যখন কাঁপছিল, ভয়ে-আতঙ্কে অসুস্থবোধ করছিলেন তাঁর দাদা। এরপর তিনি মাটিতে পড়ে যান।
শরীয়তপুরের নড়িয়া এলাকার একটি মসজিদের ইমাম নাসির উদ্দীনের ছেলে আয়নাল মিয়া। বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে তিনি বাড়ি ফিরে আসেন। আয়নাল মিয়া বলেন, ভূমিকম্পের তীব্র ঝাঁকুনি তাঁর বাবা সহ্য করতে পারেননি। সে সময় তিনি মারা যান। তবে তাঁদের ঘরবাড়ির কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
গতকাল রাত আটটার দিকে স্থানীয় ঈদগাহে নাসির উদ্দীনের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে পাশের সামাজিক কবরস্থানে তাঁর লাশের দাফন সম্পন্ন হয়।