
প্রায় চার বছর তালাবদ্ধ থাকার পর অবশেষে প্রাণ ফিরে পেল জামালপুর পাবলিক লাইব্রেরি। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গতকাল রোববার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে লাইব্রেরিটি পুনরায় খুলে দেওয়া হয়। এতে শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠান আবারও পাঠকসমাগমে মুখর হয়ে উঠবে—এমন প্রত্যাশা করছেন পাঠক ও সংস্কৃতিপ্রেমীরা।
নতুন কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন ও পরিচালনার উদ্যোগ না থাকায় ২০২২ সালে লাইব্রেরিটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে দীর্ঘদিন লাইব্রেরিতে তালা ঝুলছিল। অযত্ন ও অবহেলায় প্রায় ৩৪ হাজার মূল্যবান বই নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়। দীর্ঘদিন ধরে পাঠক ও সংস্কৃতিপ্রেমীরা লাইব্রেরিটি পুনরায় চালুর দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইউসুপ আলী লাইব্রেরিটি পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেন। গতকাল সন্ধ্যায় তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে লাইব্রেরিটি উদ্বোধন করেন।
লাইব্রেরি-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্রিটিশ আমলে লাইব্রেরিটির যাত্রা শুরু হয়। ১৯৫৯ সালে পাবলিক লাইব্রেরির পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৭৬ সালে জামালপুর শহরের বকুলতলা এলাকায় ২৯ শতাংশ জমির ওপর একতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র হিসেবে প্রতিদিন পাঠকদের আনাগোনায় মুখর থাকত এই লাইব্রেরি। এখানে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে প্রায় ৩৪ হাজার বই রয়েছে। দীর্ঘ অচলাবস্থার পর ২০২২ সালে লাইব্রেরিটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
লাইব্রেরির সর্বশেষ কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সাযযাদ আনসারী প্রথম আলোকে বলেন, অর্ধশত বছরের পুরোনো এই লাইব্রেরি শহরের সংস্কৃতিচর্চার একমাত্র কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছিল। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কবিতা পাঠের আসর, বই পড়া, পত্রিকা পড়া, বইমেলাসহ নানা ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড চলত। কিন্তু প্রশাসনের উদ্যোগের অভাবে লাইব্রেরিটি একদম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ফের লাইব্রেরিটি চালু হওয়ায় বইপ্রেমী মানুষেরা এখন খুব খুশি।
লাইব্রেরির আজীবন সদস্য জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, ‘অনেক ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী দেড় শতাধিক বছরের প্রাচীন এই লাইব্রেরিটি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর আবার চালু হওয়ায় আমরা ভীষণভাবে খুশি। নবাগত জেলা প্রশাসক মহোদয় পাঠকের কথা বিবেচনায় রেখে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে লাইব্রেরির সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়ায় কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইউসুপ আলী বলেন, ‘লাইব্রেরিটি সবার জন্য উন্মুক্ত। পুরো লাইব্রেরি প্রাঙ্গণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। নতুন গোলটেবিল ও চেয়ারসহ ভেতরেও সংস্কার করা হয়েছে। আবারও নতুন করে পাঠকসমাগমে মুখর হয়ে উঠবে—এমন প্রত্যাশা করছি। লাইব্রেরিটি পরিচালনায় জেলা প্রশাসন সব ধরনের সহযোগিতা করবে। তবে এটি সচল রাখতে পাঠক, সংস্কৃতিপ্রেমী, বইপ্রেমী ও দায়িত্বশীলদের এগিয়ে আসতে হবে।’