
চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) আহসান হাবীব বলেছেন, ‘বিগত সরকারের (কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ) সমর্থকদের নিজেদের পক্ষে নিতে প্রায় সব রাজনৈতিক দল উঠেপড়ে লেগেছে। তাদের অপকর্ম উপেক্ষা করে নিজ দলে ভেড়ানোর যে অপচেষ্টা চলছে, সেটা আমাদের জন্য বিব্রতকর। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা গিয়ে প্রতিবাদ করেন। আদালতে জামিনসহ অন্যান্য কার্যক্রম করে থাকেন; যা পুলিশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।’
আজ শনিবার সকালে চট্টগ্রাম নগরে ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তাদের নিয়ে অনুষ্ঠিত এক কর্মশালায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবীব এ কথা বলেন।
‘নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনে চ্যালেঞ্জসমূহ নিরূপণ ও উত্তরণ’ শীর্ষক এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয় নগরের আসকার দীঘি এলাকার আঞ্চলিক লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণকেন্দ্র মিলনায়তনে। কর্মশালার আয়োজন করে সিবিটিইপি প্রকল্প (নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় আইসিটি ব্যবহারে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধি)। কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন।
কর্মশালায় চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবীব বলেন, আইনের যথাযথ প্রয়োগের ক্ষেত্রে মাঠপর্যায়ে বিশেষ করে জনগণ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রত্যাশিত সমর্থন এবং সহযোগিতা বর্তমান সময়ে পুলিশ পাচ্ছে না। সহযোগিতা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে একতার অভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিঘ্ন ঘটছে জানিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা আহসান হাবীব বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে একতার অভাব অন্তঃকলহের কারণে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি, ভয়ভীতি প্রদর্শন, হুমকি, দাঙ্গা এমনকি হত্যার মতো ঘটনা ঘটছে। এ অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় পুলিশের পক্ষে তা সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কোনো কোনো দলের চার-পাঁচজন এমপি (সংসদ সদস্য) পদপ্রার্থী যাঁরা মনোনয়ন পাওয়ার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে আছেন, তাঁরাও নিজেদের মধ্যে নানান রকমের অনৈক্যের প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন।
আহসান হাবীব বলেন, বাংলাদেশে প্রার্থীরা নির্বাচনকে ব্যবসা ও বিনিয়োগ হিসেবে গ্রহণ করেন। নির্বাচনে জয়ী হতে পারলে, ক্ষমতার কাছাকাছি থাকতে পারলে তাঁদের অর্থসম্পদের বিকাশ অবারিত হওয়ার সুযোগ থাকে। তাই টাকা ছাড়া নির্বাচন হয় না। রাজনৈতিক দলের নেতা এবং ভোটারদের মাঝেও এ রকম একটা ভাবনা রয়ে গেছে। তাই এটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য একটা অন্যতম অন্তরায়।
সম্ভাব্য প্রার্থীদের অনেকে নানা ধরনের অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছেন বলে মন্তব্য করেছেন ডিআইজি আহসান হাবীব। তিনি বলেন, সামনে নির্বাচন। নির্বাচনের জন্য টাকা লাগবে। এ জন্য টাকা সংগ্রহের একটা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে; যা তাঁদের জন্য বিব্রতকর এবং চ্যালেঞ্জিং। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনকে প্রভাবিত করার জন্য এবার হয়তো নগদ অর্থের পরিবর্তে অনলাইন লেনদেন বেড়ে যেতে পারে। তাই মোবাইল আর্থিক সেবার (এমএফএস) নিয়ন্ত্রণ যাতে নির্বাচন কমিশনের কাছে থাকে।
আগামী নির্বাচনে চ্যালেঞ্জের কথা জানিয়ে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা আহসান হাবীব বলেন, কোন দল ক্ষমতায় আসতে পারে, তা মাথায় রেখে নির্বাচনপ্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত কারও কারও মধ্যে কাজ করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। যেটি সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে। তাই এ ধরনের দলদাসদের নির্বাচনের দায়িত্ব পালন থেকে দূরে রাখার জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
নির্বাচন বানচাল করার জন্য নানা অপশক্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেক নিউজ ও গুজব রটিয়ে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির চেষ্টা করছে বলে কর্মশালায় মন্তব্য করেছেন ডিআইজি আহসান হাবীব।