একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে আহাজারি করছেন মা রত্না বালা। স্বজনেরা তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। বৃহস্পতিবার সকালে মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার পাখুল্লা গ্রামে
একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে আহাজারি করছেন মা রত্না বালা। স্বজনেরা তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। বৃহস্পতিবার সকালে মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার পাখুল্লা গ্রামে

ইতালিতে বাংলাদেশি তরুণ খুন

‘একটাই পোলা আমার, ওরে ছাড়া কেমনে বাঁচব’

‘আমরা দিন আনি দিন খাই। ওর বাপে কত কষ্ট কইরা পোলাডারে ইতালি পাঠাইছে। দুই বছর ধইরা সুখের মুখ দেখছিলাম। পোলায় মাস গেলে টাকা পাঠাইত। মাইয়াগো বিয়া দিছি। ভালো-মন্দ খাইতেও পারছি। এখন আমার সব শ্যাষ। একটাই পোলা আমার, ওরে ছাড়া কেমনে বাঁচব?’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন রত্না বালা (৪৫)। তিনি ইতালিতে খুন হওয়া মাদারীপুরের তরুণ সাগর বালার (২১) মা। নিহত সাগর রাজৈর উপজেলার পাখুল্লা এলাকার কৃষক কুমোদ বালার একমাত্র ছেলে। গতকাল বুধবার তাঁর খুন হওয়ার খবরটি পরিবারকে জানান সাগরের মামাতো ভাই ইতালিপ্রবাসী শুভ বালা ও ভাতিজা মিঠুন তালুকদার।

রাজৈর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে সাগরদের গ্রামের বাড়ি। আজ বৃহস্পতিবার সকালে পাখুল্লা গ্রামের বালাবাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মা রত্না বালা আর বড় বোন কাকলি বালা অঝোরে কাঁদছেন। প্রতিবেশীরা তাঁদের সান্ত্বনা দিচ্ছেন। বারবার বুক চাপড়ে ছেলের কথা বলছেন রত্না বালা।

সাগরের বড় বোন কাকলি বালা বলেন, ‘আমার ভাই কইছিল, আমারে ফ্রিজ কিনে দিবে। সেদিন ফোনে বাবার কাছে টাকা আনতে যাওয়ার কথা কইয়া ফোন রাখল। আর আইজ ও না–ফেরার দেশে চইলা গেল। আমাগো সুখ বেশি দিন রইল না। তিন দিন পরে দুর্গাপূজা। ভাইয়ের জন্য মা–বাবা পাগল হইয়া যাইতাছে। আমরা কীভাবে মা-বাবাকে বোঝাব, ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। সব আনন্দ শেষ হইয়া গেছে।’

সাগর বালা

সাগরের বাবা কুমোদ বালা একজন কৃষক। ছেলেকে ইতালি পাঠাতে জমিজমা সবই বিক্রি করে এখন অন্যের জমিতে চাষাবাদ করেন। একমাত্র ছেলের মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না কুমোদ বালা। তিনি অভিযোগ করেন, ‘ওর ঘনিষ্ঠ বন্ধু যারা ইতালিতে ছিল, তারাই ওরে মাইরা ফালাইছে।’

স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, আড়াই বছর আগে উন্নত জীবনের আশায় অবৈধ পথে লিবিয়ার ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালিতে যান সাগর বালা। দুই বছর ধরে সেখানকার একটি রেস্তোরাঁয় কাজ করতেন। ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে নিখোঁজ ছিলেন। পরে ২৩ সেপ্টেম্বর সাগরের খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাসুদ খান বলেন, ইতালিতে বাংলাদেশি তরুণকে হত্যার ঘটনাটি দুঃখজনক। খবরটি তাঁরা শুনেছেন। নিহত তরুণের বাড়িতে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। তাঁর মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। এ ছাড়া পরিবারটিকে যেকোনো সহযোগিতা পুলিশের পক্ষ থেকে করা হবে।