Thank you for trying Sticky AMP!!

কঙ্কাল উদ্ধারের ঘটনায় লামিয়ার স্বামী গ্রেপ্তার, যা বললেন জবানবন্দিতে

গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে লামিয়ার স্বামী তরিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই

পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার চিথলিয়া গ্রামের কলেজছাত্রী লামিয়া আক্তারকে (১৮) ডেকে নিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার পর লাশ বালুর মধ্যে পুঁতে রাখেন স্বামী তরিকুল ইসলাম (২২)। এ ঘটনার চার মাস পর তরিকুল মানসিক পীড়ায় অতিষ্ঠ হয়ে লাশের সন্ধান জানিয়ে লামিয়ার পরিবারের কাছে বেনামি চিঠি পাঠান। আজ শুক্রবার সকালে তারিকুল ইসলামকে পিরোজপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবু জাফর মো. নোমানের আদালতে নেওয়া হলে ১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তিনি এসব তথ্য দেন।

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সাদেক খান সড়কের একটি বাড়ি থেকে তরিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। জবানবন্দি গ্রহণ শেষে আজ বিচারক আসামি তরিকুলকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার পিবিআইর সদর দপ্তরের নির্দেশে নাজিরপুর থানার পুলিশের কাছ থেকে মামলার তদন্তভার বুঝে নিয়েছে পিবিআই।

লামিয়া আক্তার চার মাস আগে নিখোঁজ হন। তিনি চিথলিয়া গ্রামের নজরুল ইসলামের মেয়ে এবং স্থানীয় সরকারি বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মহিলা মহাবিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন। গত রোববার রাতে লামিয়ার ঘরের সামনের সিঁড়িতে একটি বেনামি চিঠি পাওয়া যায়। এর সূত্র ধরে পরদিন মাটি খুঁড়ে একটি কঙ্কাল উদ্ধার করে পুলিশ। পরিবারের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত শেষে কঙ্কালটি লামিয়ার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ ঘটনায় লামিয়ার খালাশাশুড়ি রেক্সোনা বেগমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

Also Read: বেনামি চিঠি পেয়ে কঙ্কাল উদ্ধারের ঘটনায় নিখোঁজ ছাত্রীর খালাশাশুড়ি গ্রেপ্তার

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পিরোজপুর কার্যালয়ের পরিদর্শক মো. বায়েজিদ আকন বলেন, তরিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করেন। জিজ্ঞাসাবাদে তরিকুল বলেন, ২০১৯ সালের শেষের দিকে লামিয়ার সঙ্গে তরিকুলের প্রেমের সম্পর্ক হয়। তখন তরিকুল দশম শ্রেণিতে আর লামিয়া অষ্টম শ্রেণিতে পড়তেন। ২০২২ সালের শুরুতে তরিকুল ঢাকায় চলে যান। তরিকুল ঢাকায় যাওয়ার পর একটি ফেসবুক আইডি থেকে লামিয়ার দুটি আপত্তিকর ছবি ছড়িয়ে পড়ে। লামিয়া এ ঘটনায় তরিকুলকে সন্দেহ করেন। ২০২২ সালের মে মাসের শেষের দিকে ঈদের ছুটিতে তরিকুল বাড়িতে যান। পরে ৩০ মে বিয়ের দাবিতে তরিকুল ইসলামের বাড়িতে অবস্থান নেন লামিয়া। এরপর স্থানীয় লোকজনের মধ্যস্থতায় তাঁদের বিয়ে হয়। তবে তরিকুলের মা-বাবা এই বিয়ে মেনে না নেওয়ায় লামিয়া বাবার বাড়িতে চলে আসেন। তরিকুল বিভিন্ন সময়ে লামিয়ার বাবার বাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন।

তরিকুল পিবিআইকে জানিয়েছেন, বিয়ের সাত মাস পরও লামিয়াকে বাড়িতে তুলে না নেওয়ায় তাঁদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। ২০২২ সালের ৬ নভেম্বর রাত ১১টার দিকে লামিয়ার সঙ্গে তরিকুল দেখা করেন। এরপর পরিবারের লোকজন ঘুমিয়ে গেলে ঘরের বাইরে গিয়ে লামিয়া তরিকুলের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় লামিয়া তরিকুলকে বলেন, বিবাহবিচ্ছেদ হলে লামিয়া মামলা করবেন। এরপর তাঁরা দুজন হেঁটে স্থানীয় হিমু খানের দোকানের কাছে যান। রাত ১২টার দিকে দোকানের পাশে বসে কথাবার্তার একপর্যায়ে তরিকুল ক্ষিপ্ত হয়ে লামিয়াকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। এরপর লামিয়ার লাশ একটি মাঠে নিয়ে বালুচাপা দেন। এ ঘটনার পর কিছুদিন ধরে তরিকুল মানসিক পীড়ায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন।

লামিয়া আক্তার

এরপর তরিকুল লাশটি লামিয়ার পরিবারের নজরে আনার জন্য পরিকল্পনা করেন। গত শনিবার রাতে তিনি বালু খুঁড়ে লাশটি তোলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরদিন রোববার রাতে লাশের সন্ধান জানিয়ে লামিয়ার বাড়িতে বেনামি চিঠি পাঠান তরিকুল। লামিয়ার ঘরের চালে ও বেড়ায় ঢিল ছুড়ে মারা হয়। এতে তাঁর পরিবারের লোকজন ভয় পেয়ে এক আত্মীয়কে ডাকেন। তিনি এসে ঘরে ঢোকার সময় সিঁড়ির ওপর মাটির চাকা দিয়ে চাপা দেওয়া কাগজ পান। ওই কাগজে লেখা ছিল, ‘তোমাদের মেয়ের লাশ মোজাহার মোল্লার বাড়ির পশ্চিম পাশের বালুর মাঠের মধ্যে রাখা আছে।’ ওই রাতে তরিকুল গ্রামের একটি বাগানে অবস্থান করে পরদিন ঢাকায় চলে যান।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বায়েজীদ আকন বলেন, বেনামি চিঠির সূত্র ধরে সোমবার বেলা ১১টার দিকে চিথলিয়া গ্রামের মোজাহার মোল্লার বাড়ির পাশের জমি খুঁড়ে একটি কঙ্কাল উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর থানা-পুলিশের পাশাপাশি ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটন ও আসামি গ্রেপ্তারে ছায়াতদন্ত করে পিবিআই পিরোজপুর দল। লামিয়া আক্তার অপহরণের অভিযোগে করা মামলাটির তদন্তভার গতকাল বৃহস্পতিবার থানা-পুলিশের কাছ থেকে পিবিআই বুঝে নিয়েছে। লাশ উদ্ধারের পর এখন মামলায় ধারা সংযোজনের জন্য আদালতে আবেদন করা হবে।

Also Read: কঙ্কাল উদ্ধার: কলেজছাত্রী লামিয়া অপহরণ মামলার তদন্তে পিবিআই