ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজের প্রধান ফটক। আজ সোমবার সকালে
ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজের প্রধান ফটক। আজ সোমবার সকালে

আনন্দ মোহন কলেজে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন, ছাত্রাবাস ছেড়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা

ময়মনসিংহ নগরের আনন্দ মোহন কলেজে ছাত্রাবাসের সিট বরাদ্দ নিয়ে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে হলে থাকা সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরোধ ও ধাওয়ার ঘটনায় পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন হয়েছে।

আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় কলেজের পল্লিকবি জসীমউদ্‌দীন হলের সামনে সাধারণ শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সময় তাঁরা জানান, সামনে তাঁদের পরীক্ষা, তাই হল ছাড়বেন না। এ ছাড়া হল ছেড়ে গেলে হামলাকারীরা দখল করবে। তবে শিক্ষকদের কাছ থেকে আশ্বাস পেয়ে বেলা আড়াইটার দিকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা হল ছেড়ে চলে যাচ্ছিলেন।

এদিকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আনন্দ মোহন ছাত্রদলের পক্ষ থেকেও পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এ সময় জানানো হয়, শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদ করায় ছাত্রদল অপপ্রচারের শিকার হয়েছে। ছাত্রাবাসে অবৈধ সিট দখলকারী, নিষিদ্ধ ও গুপ্ত সংগঠনের অনুসারীরা এর সঙ্গে জড়িত।

আনন্দ মোহন কলেজে ছাত্রাবাসের সিট বরাদ্দ নিয়ে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরোধ দেখা দিয়েছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গতকাল রোববার বিকেলে ও সন্ধ্যায় হলে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কয়েক দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে দুই পক্ষের অন্তত পাঁচজন আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কলেজ এলাকায় পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। পরে এ ঘটনায় ছেলেদের পল্লিকবি জসীমউদ্‌দীন হল, কবি নজরুল হল ও ভাষাসৈনিক আহমেদ মালেক হল বন্ধ ঘোষণা করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। আজ সকাল আটটার মধ্যে ছেলেদের ছাত্রাবাস ত্যাগের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে কলেজে আগামী তিন দিনের জন্য একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

আনন্দ মোহন কলেজের পল্লিকবি জসীমউদ্‌দীন হলের সামনে সাধারণ শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করেন। আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে

আজ সকাল সাড়ে ১০টায় কলেজের পল্লিকবি জসীমউদ্‌দীন হলের সামনে ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করেন। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ইতিহাস বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আকরাম হোসেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘আনন্দ মোহন কলেজ হোস্টেলে অবস্থানকারী ছাত্রদের পক্ষ থেকে আজকের এই বার্তা প্রদান করছি। আমরা ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার পতনের পর থেকে শান্তিপূর্ণভাবে কলেজ হোস্টেলে অবস্থান করছি। ২০২৫ সালের সিট নবায়নসংক্রান্ত সৃষ্ট জটিলতায় আজ আমরা আক্রান্তের শিকার হয়ে হলে অবস্থান করছি। এমতাবস্থায় কলেজ কর্তৃপক্ষের হল বন্ধ ঘোষণাসংক্রান্ত নোটিশ আমরা মানি না। কারণ, ২০২১-২২ সেশনের (দ্বিতীয় বর্ষ) ফাইনাল পরীক্ষা চলমান। এমতাবস্থায় হল কর্তৃপক্ষের এই অযৌক্তিক দাবি মানি না। ২৭ জানুয়ারি মাস্টার্স ২০২১-২২ সেশনের পরীক্ষা শুরু হবে। এ অবস্থায় এ দাবি মানা সম্ভব নয়। আমরা আশঙ্কা করছি যে হল বন্ধ থাকা অবস্থায় আজকের হামলাকারীরা হল দখল করবে, তাই আমরা হল ছাড়ব না।’ এ ছাড়া তিনি হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান।

আনন্দ মোহন কলেজের প্রধান ফটকের সামনে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্রদল

আনন্দ মোহন কলেজের প্রথম ফটকের সামনে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্রদল। ব্যানারে লেখা ছিল ‘অব্যাহত অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন’। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আশিক রাব্বি। এ সময় মহানগর ছাত্রদল ও আনন্দ মোহন কলেজ ছাত্রদলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

লিখিত বক্তব্যে আশিক রাব্বি বলেন, গতকাল শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদ করায় ছাত্রদল অপপ্রচারের শিকার হয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে হলের সিট নবায়নকে কেন্দ্র করে কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থী ও ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলো হলে সিট নবায়নের ক্ষেত্রে চারটি যৌক্তিক দাবি জানিয়েছিল। এর মধ্যে ছিল—হলে মেয়াদোত্তীর্ণ কোনো শিক্ষার্থী থাকতে পারবেন না; অবৈধ ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের চিহ্নিতদের বের করতে হবে; হলে গত ৫ আগস্টের পর যাঁরা অবৈধভাবে উঠেছেন, তাঁদের নবায়ন করা যাবে না এবং নবায়ন ফি ৫ হাজার ৫০০ টাকা করতে হবে।

লিখিত বক্তব্যে আশিক রাব্বি আরও বলেন, ‘আমরা দেখছি, প্রশাসনের সকাল আটটার মধ্যে হল বন্ধের সিদ্ধান্ত এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। দ্রুততম সময়ে হল বন্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে হবে এবং অছাত্রদের স্থায়ীভাবে বের করতে হবে।’

পরে বেলা আড়াইটার দিকে শিক্ষার্থীরা হল ছাড়তে শুরু করেন। ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থী আনিসুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দাবি ছিল নিরাপত্তা দিতে হবে, জিনিস নিরাপদে থাকবে, হলের সিট ঠিক থাকবে। বাইরের কেউ এসে হলের নিয়ন্ত্রণ নেবে না। হল ছাড়তে না চাইলেও হলের স্টিয়ারিং কমিটির শিক্ষকেরা আমাদের সব দাবি মেনেছেন। কলেজ কর্তৃপক্ষ আজ বিকেল চারটার মধ্যে হল ত্যাগের সময় দিয়েছে। আমরা নির্দেশনা মেনে হল ছেড়ে যাচ্ছি।’

কলেজের ছাত্রদের হল সুপার শাহ জাহান করীম বলেন, ‘ছাত্রাবাস দখলের চিন্তা কারও নেই। একধরনের রিউমর (গুজব) শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়েছে। আমরা আশ্বাস দেওয়ার পর তাঁরা হল ছাড়ছেন।’