যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে চমক এসেছে। বর্তমান সংসদ সদস্য মো. নাসির উদ্দিনকে বাদ দিয়ে রাজনীতির মাঠে ‘অপরিচিত মুখ’ চিকিৎসক তৌহিদুজ্জামান তুহিনকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এতে মনোনয়নবঞ্চিত পক্ষের নেতা–কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে যশোর জেলার ছয়টি আসনের মধ্যে দুটিতে পরিবর্তন এসেছে। এর মধ্যে যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) অধ্যাপক নাসির উদ্দিনের স্থলে তৌহিদুজ্জামান ও যশোর-৪ (বাঘারপাড়া- অভয়নগর) আসনে রণজিৎ কুমার রায়ের স্থলে অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এনামুল হককে (বাবুল) দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়।
দলীয় নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মো. নাসির উদ্দিন দলীয় মনোনয়ন নিয়ে পাস করেন, তবে তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন করেননি। এই আসনের ঝিকরগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম ও সাধারণ সম্পাদক মুছা মাহমুদ এবং চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম হাবিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী মাসুদ চৌধুরীর সঙ্গে নাসিরের দূরত্ব আছে।
ঝিকরগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম অভিযোগ করেন, ‘বর্তমান সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিন দায়িত্ব পালনকালে তিনি নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে জামায়াত-বিএনপির লোকজনকে পুনর্বাসিত করেছেন। দুই উপজেলার শীর্ষ নেতা-কর্মীরা তাঁর সঙ্গে রাজনীতি করেন না।’
চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম হাবিবুর রহমানের অভিযোগ, ‘সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিন দলীয় নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন করেন না। এ কারণে আমরা তাঁর কাছে যাই না। তিনিও আমাদের ডাকেন না। দুই উপজেলার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ত্যাগী নেতাদের কেউ তাঁর সঙ্গে নেই। এ জন্য নেত্রী হয়তো তাঁকে মনোনয়ন দেননি।’
এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলে তিনি তা ধরেননি।
এদিকে তৌহিদুজ্জামানকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। তাঁদের ভাষ্য, এবার মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করা হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান বলেন, ‘যাকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তিনি (তৌহিদুজ্জামান) এলাকার কাউকে চেনেন না। এলাকার মানুষও তাঁকে চেনেন না। মূলত আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য তোফায়েল আহমেদের জামাতা হিসেবে চিকিৎসক তৌহিদুজ্জামানকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করা হয়নি। এতে আমি ক্ষুব্ধ। কারণ, আমি ১৯৬৯ সালের গণ–অভ্যুত্থান থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। ৪৩ বছর ধরে আমি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে আছি। আমি নিজে মনোনয়ন চেয়ে বঞ্চিত হয়েছি। রাজনীতিতে অপরিচিত এক ব্যক্তিকে আবারও মনোনয়ন দেওয়া হলো। গত সংসদ নির্বাচনেও অপরিচিত ব্যক্তি নাসির উদ্দিনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। আবারও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।’
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন কি না, তা জানতে চাইলে হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমি এখন ঢাকায় আছি। এলাকায় ফিরে স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করে সিদ্ধান্ত নিব। স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে এবার দল থেকে বহিষ্কার করা হবে না। ফলে আমি স্বতন্ত্র নির্বাচন করতেই পারি। এলাকার লোকজন যদি চায়, তাহলে তো নির্বাচনে দাঁড়াতেই হবে।’
তবে ঝিকরগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘নেত্রী যাঁকে যোগ্য মনে করেছেন, তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছেন। তাঁকে বিজয়ী করতে কাজ করব।’