রাজশাহীতে অব্যাহতি পাওয়া অধ্যক্ষ হাইকোর্টের স্থগিতাদেশে চেয়ারে বসতে এসে বেকায়দায়

রাজশাহীর শহীদ মামুন মাহমুদ পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষের চেয়ারে গোলাম মওলাকে পুনরায় বসানোর পর স্থানীয় বিএনপির নেতা ও শিক্ষার্থীরা তাঁকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। সোমবার সকালে
ছবি: প্রথম আলো

গণ-অভ্যুত্থানের পর অব্যাহতি পাওয়া অধ্যক্ষ আজ সোমবার আবার চেয়ারে বসতে এসে বেকায়দায় পড়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে বহিরাগত লোকজন নিয়ে এসে তালা ভেঙে কার্যালয়ে বসার অভিযোগে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

অধ্যক্ষ বলছেন, তিনি আদালতের রায় নিয়ে এসেছেন। ছাত্ররা তাঁকে নিয়ে এসেছে। কলেজের পরিচালনা কমিটি বলছে, আদালত তাদের কাছে জবাব চেয়েছেন। তারা জবাব দেবে। আগের অধ্যক্ষ এভাবে বহিরাগত লোকজন নিয়ে তালা ভেঙে বসতে পারেন না।

এই অধ্যক্ষের নাম গোলাম মাওলা। তিনি রাজশাহীর শহীদ মামুন মাহমুদ পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ। কলেজটির পরিচালনা কমিটির সভাপতি রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) কমিশনার।

রাজশাহীর শহীদ মামুন মাহমুদ পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষের কার্যালয়ের তালা ভাঙছেন শিক্ষার্থীরা। সোমবার সকালে

গত আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পরে আরএমপির তৎকালীন পুলিশ কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার গোলাম মাওলাকে অব্যাহতি দেন। তবে অব্যাহতি দেওয়ার আগে তাঁকে কোনো কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়নি। অভিযোগের তদন্তও হয়নি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যান গোলাম মাওলা। অবৈধভাবে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে তিনি রিট করেন। ১৫ ডিসেম্বর বিচারপতি আকরাম হোসাইন চৌধুরী ও বিচারপতি কে এম রাশেদুজ্জামান রাজার হাইকোর্ট বেঞ্চ গোলাম মাওলাকে অব্যাহতি দেওয়ার ওই আদেশ তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন। হাইকোর্ট রুল জারি করে জানতে চান, কেন ওই আদেশকে অবৈধ ঘোষণা করে পরবর্তী নির্দেশনা দেওয়া হবে না। আরএমপি কমিশনার ও কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতিকে চার সপ্তাহের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়।

ওই আদেশের পর আজ সকালে গোলাম মাওলা তাঁর অনুসারী প্রাক্তন কিছু শিক্ষার্থীকে নিয়ে কলেজে যান। সঙ্গে নিয়ে যান হাইকোর্টের আদেশের কপি। এ সময় কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম অধ্যক্ষের কক্ষে তালা দিয়ে রাখেন। পুলিশ কমিশনারের অনুমতি ছাড়া তিনি চাবি দিতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন। চাবি না পেয়ে সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষের কক্ষের তালা ভেঙে ফেলেন। এরপর গোলাম মাওলাকে অধ্যক্ষের চেয়ারে বসানো হয়। এ সময় রাজপাড়া থানা বিএনপির কয়েকজন নেতা-কর্মী তাঁকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছাও জানান।

রাজশাহীর শহীদ মামুন মাহমুদ পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষের কার্যালয়ের তালা ভেঙে প্রবেশের পর পুলিশ কয়েক শিক্ষার্থীকে আটকের চেষ্টা করে। সোমবার সকালে

খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে ওই শিক্ষার্থীদের আটক করার চেষ্টা করে। একে একে সেখানে নগর গোয়েন্দা পুলিশ ও ক্রাইসিস রেসপন্স টিম (সিআরটি) গাড়ি নিয়ে যায়। তারা একবার গোলাম মাওলাকে গাড়িতে তুলে পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেন। আবার কোনো নির্দেশ পেয়ে তাঁকে নামিয়ে দেন। গোলাম মাওলার সঙ্গে আসা কয়েকজন ছাত্র এ সময় পুলিশের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ালে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশের গাড়িতে তোলার সময় অন্য শিক্ষার্থীরা তাঁদের ছিনিয়ে নেন। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাক্কাধাক্কির ঘটনাও ঘটে। একপর্যায়ে পুলিশ কাউকে আটক না করেই কলেজ থেকে চলে যায়। গোলাম মাওলাও চলে যান।

গোলাম মাওলা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর কাছে আদালতের রায় আছে। সেটি পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে জমা দিয়ে তার রিসিভ কপিও নিয়েছেন। আজ তাঁর শিক্ষার্থীরা এসে তাঁকে কলেজে নিয়ে গেছেন। এ ছাড়া স্থানীয় বিএনপি, জামায়াত-শিবিরের ছেলেরাও ছিলেন। তালা ভাঙার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ছাত্ররাই টান দিয়ে তালা খুলেছেন। ভাঙা হয়নি। তিনি জানান, অনেক মানুষের ভিড় থাকার কারণে কার্যালয়ে বসলেও তিনি হাজিরা খাতায় সই করেননি। গোলাম মাওলা দাবি করেন, হাইকোর্ট যেহেতু অব্যাহতির আদেশ স্থগিত করেছেন, সেহেতু তিনিই অধ্যক্ষ। এ জন্যই তিনি কলেজে গিয়েছেন। এখন মামলা হলে তিনি আইনগতভাবেই মোকাবিলা করবেন। তিনি বলেন, ‘আমাকে কলেজে বসতে না দিয়ে আদালত অবমাননার মতো ঘটনা ঘটেছে। আমিও বিষয়টি আদালতের নজরে আনব।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশ কমিশনার ও কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান প্রথম আলোকে বলেন, আদালত তাঁদের কাছে জবাব চেয়েছেন। সেই সময় এখনো পার হয়ে যায়নি। তাঁরা জবাব দেবেন। এর আগেই তিনি (গোলাম মাওলা) বহিরাগত লোকজন নিয়ে এসে তালা ভেঙে কলেজে ঢুকেছেন। এটা তিনি করতে পারেন না। তাঁর বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মামলা করবেন। পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, গোলাম মাওলার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। তদন্ত করে সে ব্যাপারেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি এই প্রতিবেদককে ফোনে কিছু ছবি পাঠান। তাতে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের নির্বাচনের সময় ভোটের প্রচারে অংশ নেন গোলাম মাওলা। এসব ছবি তিনি নিজের ফেসবুক আইডিতেই পোস্ট করেছিলেন। পুলিশ কমিশনার জানান, এসব কারণেই ছাত্র-জনতা তাঁকে কলেজে রাখতে দেননি।

মামলার ব্যাপারে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম বলেন, কর্তৃপক্ষ যা বলবে, তাঁকে তা–ই করতে হবে।

পরে গোলাম মাওলাকে প্রধান আসামি করে রাজশাহী নগরের রাজপাড়া থানায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফুল আলম রাত ১১টায় প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।