ছুরিকাঘাত
ছুরিকাঘাত

নেত্রকোনায় মাদক ব্যবসার দ্বন্দ্বের জেরে দোকানিকে হত্যা, আসামির স্বীকারোক্তি

নেত্রকোনার আটপাড়ায় চা–দোকানি রাজন মিয়া (২৭) হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটন করা হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। পুলিশ জানায়, মাদক ব্যবসার দ্বন্দ্বের জেরে তাঁকে হত্যা করে লাশ পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার দুই আসামির মধ্যে একজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওই জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। আজ শুক্রবার দুপুরে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের মিডিয়া সেল থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

নিহত রাজন মিয়া নেত্রকোনা সদর উপজেলার দেশীউড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি নেত্রকোনা-মদন সড়কের কৃষ্ণপুর চৌরাস্তা মোড়ে একটি চায়ের দোকান চালাতেন। গ্রেপ্তার দুজন হলেন পুখলগাঁও গ্রামের সুলতান মিয়া (৩০) ও হারেছ আলী (৪৪)।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত রোববার সন্ধ্যায় রাজন মিয়া এক ব্যক্তির ফোন পেয়ে দোকানে অন্য একজনকে বসিয়ে বের হন, কিন্তু তিনি আর ফিরে আসেননি। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাঁর সন্ধান পাওয়া যায়নি। মঙ্গলবার বিকেলে স্থানীয় একটি পরিত্যক্ত পুকুরে তাঁর অর্ধগলিত লাশ ভাসতে দেখেন স্থানীয় লোকজন। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।

পুলিশ জানায়, বুধবার রাতে নিহত ব্যক্তির বাবা অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে আটপাড়া থানায় হত্যা মামলা করেন। এরপর পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে গতকাল বৃহস্পতিবার সুলতান মিয়া ও হারেছ আলীকে আটক করে। পরে মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালতে হারেছ আলী ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

যেভাবে রাজনকে হত্যা করা হয়

পুলিশের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নিহত রাজন মিয়া এবং আসামি সুলতান মিয়া ও হারেছ আলী—তিনজনই মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাঁরা কয়েকজন মিলে কুমিল্লাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে গাঁজা এনে সেবন ও বিক্রি করতেন। প্রায় দুই মাস আগে সুলতান দুই কেজি গাঁজাসহ পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। সম্প্রতি জামিনে মুক্ত হয়ে সুলতান এ বিষয়ে রাজনকে দোষারোপ করেন। তাঁর ধারণা, রাজনই পুলিশকে তথ্য দিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করিয়েছেন। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়। রোববার সন্ধ্যায় সুলতান মিয়া একাধিকবার ফোন করে রাজনকে পুখলগাঁও এলাকার পরিত্যক্ত একটি বয়লার মিলের পেছনে যেতে বলেন। রাজন সেখানে গেলে আগে থেকেই হারেছ আলীসহ তিনজন উপস্থিত ছিলেন। সুলতান তখন রাজনের কাছে গ্রেপ্তারের পর থেকে জামিন পর্যন্ত সব খরচের টাকা দাবি করেন। রাজন টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে হারেছ ও অন্যরা তাঁকে মারধর শুরু করেন। একপর্যায়ে সুলতান কোমর থেকে ধারালো ছুরি বের করে রাজনের মাথায় আঘাত করতে থাকেন। রাজন ঘটনাস্থলেই মারা যান। পরে তাঁরা লাশ কাছের পুকুরে ফেলে পালিয়ে যান। আদালতে হারেছ আলী তাঁর জবানবন্দিতে এসব কথা জানান।

আটপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান বলেন, অল্প সময়ের মধ্যে হত্যার রহস্য উদ্‌ঘাটন ও জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে। হারেছ আলী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সুলতান মিয়াকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করা হয়েছে। তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।