
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ-জীবননগর সড়কের মহেশপুর অংশে দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গলের আড়ালে লুকিয়ে ছিনতাইকারীরা তৎপরতা চালাচ্ছিল। সড়কের ধারে ঘন জঙ্গল থাকায় টহল পুলিশও অনেক সময় ছিনতাই ঠেকাতে পারছিল না। অন্ধকার নামলেই অপরাধীরা সড়কে রশি ফেলে বা মোটরসাইকেল-গাড়ি থামিয়ে ছিনতাই করত। এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় এবার পুলিশের উদ্যোগে শুরু হয়েছে সড়কের দুই ধারের জঙ্গল পরিষ্কার কার্যক্রম। টানা তিন দিন ধরে চলছে এ অভিযান।
পুলিশ জানায়, ছিনতাইয়ের পাশাপাশি জঙ্গলের কারণে ওই সড়কে দুর্ঘটনার ঘটনাও বেড়েছিল। বিশেষ করে শীতকালে ঘন কুয়াশায় জঙ্গলের মধ্য থেকে কিছুই দেখা যায় না। সড়কের বাঁক বেশি হওয়ায় সন্ধ্যার পর দুর্ঘটনার ঝুঁকি আরও বাড়ত। জঙ্গল পরিষ্কার হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করছে পুলিশ।
মহেশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বলেন, কালীগঞ্জ-জীবননগর সড়কের জগনাথপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে কাটাখালী বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তা খুবই নির্জন। এখানে বেশ কয়েকটি বাঁক আছে। দূরের কিছু সেভাবে দেখা যায় না। তিনি জানান, ওই দুই কিলোমিটারের পাশাপাশি বারোমাসিয়া সেতু থেকে বকুন্ডিয়া পর্যন্ত এলাকাও ঝুঁকিপূর্ণ। বড় গাছ ও ঝোপঝাড়ের কারণে রাস্তার নিচের অংশ তারা ঠিকমতো দেখতে পান না। টহল পুলিশ এক জায়গা থেকে সরে গেলে অন্য জায়গায় ছিনতাইকারীরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। কখনো মোটরসাইকেল আরোহী, কখনো বড় গাড়ি থামিয়েও ছিনতাই করা হচ্ছে। পথচারীরাও প্রায়ই ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন।
নজরুল ইসলাম বলেন, ছিনতাইয়ের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে ছিনতাইকারীরা জঙ্গলের ভেতর লুকিয়ে পড়ে। রাতের অন্ধকারে তাদের খুঁজে পাওয়া কঠিন। তাই জঙ্গল পরিষ্কার ছাড়া বিকল্প নেই। তিনি আরও বলেন, ছিনতাইয়ের পাশাপাশি জঙ্গলের কারণে ওই স্থানে মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনাও ঘটছে। শীত মৌসুমে ঘন কুয়াশায় সামনে থেকে আসা গাড়ির আলো খুব দূর যায় না। বাঁকও বেশি, তাই দুর্ঘটনা বাড়ছিল।
এ অবস্থায় পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে সড়কের দুই পাশের জঙ্গল পরিষ্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তিন দিন ধরে জঙ্গল কাটার কাজ চলছে। ওসি বলেন, রাস্তার পাশ পরিষ্কার থাকলে পথচারীরা স্বস্তিতে চলতে পারবে। ছিনতাইকারীদের লুকিয়ে থাকার জায়গা না থাকলে ছিনতাই কমবে। সড়ক দুর্ঘটনাও কিছুটা কমবে।
গত বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, জঙ্গল পরিষ্কার কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের কাজ তদারকি করছিলেন মহেশপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আল-আমিন। তিনি বলেন, সড়কের দুই প্রান্তে ১৮ জন করে শ্রমিক কাজ করছেন। ইতিমধ্যে প্রায় অর্ধেক অংশ পরিষ্কার হয়েছে। বাকি অংশের কাজও চলমান। দুই পাশের সব জঙ্গলই পরিষ্কার করা হবে।
পথচারীরাও পুলিশের এই উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন। খালিশপুরের বাসিন্দা আমিনুর রহমান বলেন, এই জঙ্গলের কারণে ওই রাস্তায় চলাচল করতে খুব ভয় পেতেন। পরিষ্কার হলে আর সেই ভয় থাকবে না। ইজিবাইকচালক জয়নাল আবেদীন বলেন, সন্ধ্যা হলেই ভয়ে ওই আঞ্চলিক সড়ক দিয়ে যেতে পারতেন না। পুলিশের এই উদ্যোগে এখন নির্বিঘ্নে চলাফেরা করতে পারবেন বলে তাঁর আশা।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহ জেলা জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, জঙ্গল পরিষ্কার করলে সেটা সবার জন্য ভালো। বর্ষা মৌসুমে যে জঙ্গল তৈরি হয়, সেটা পরিষ্কার করলে কোনো আপত্তি নেই। তবে পরিষ্কারের নামে যেন গাছ কাটা না হয়।