জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে শুরু হয় প্রথম আলোর সুধী সমাবেশ। শুক্রবার বিকেলে বরিশাল নগরের বিডিএস মিলনায়তনে
জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে শুরু হয় প্রথম আলোর সুধী সমাবেশ। শুক্রবার বিকেলে বরিশাল নগরের বিডিএস মিলনায়তনে

বরিশালে সুধী সমাবেশে

প্রথম আলোকে সত্য বলার সাহস ধরে রাখতে হবে

প্রথম আলোর সংবাদে ভিন্ন রকম এক আস্থা রাখা যায়, যা অন্যদের কাছ থেকে পাওয়া যায় না। কারণ, প্রথম আলো সত্য বলে। সাহস করে সমাজের সব অসংগতি তুলে ধরতে পিছপা হয় না। পাঠকদের দাবি, প্রথম আলোকে সত্য বলার সাহস ধরে রাখতে হবে।

আজ শুক্রবার বিকেলে বরিশালে প্রথম আলো আয়োজিত এক সুধী সমাবেশে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন। পত্রিকাটির ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সদর রোডের বিডিএস মিলনায়তনে সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এতে রাজনীতিক, শিক্ষক, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, নাট্যজন, শিল্পী, সংস্কৃতি সংগঠক, চিকিৎসক, কবি-সাহিত্যিক, নারী নেত্রীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করেন।

সুধী সমাবেশে পাঠকের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন প্রথম আলোর হেড অব ডিপ নিউজ রাজীব আহমেদ। শুক্রবার বিকেলে বরিশাল নগরের বিডিএস মিলনায়তনে

জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে বিকেল চারটায় অনুষ্ঠান শুরু হয়। উদ্বোধনী পর্বে বরিশাল বন্ধুসভার সভাপতি নাঈম ইসলামের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর বরিশালের নিজস্ব প্রতিবেদক এম জসীম উদ্দীন। পরে প্রথম আলোর বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরে বক্তব্য দেন প্রথম আলোর হেড অব ডিপ নিউজ রাজীব আহমেদ। পরে উপস্থিত সুধীজন ও পাঠকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।

রাজীব আহমেদ বলেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য আমরা দলনিরপেক্ষ হব। এ জন্য প্রকাশের তিন বছরের মধ্যেই প্রথম আলো দেশের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা হিসেবে পাঠকের গ্রহণযোগ্যতা পায়। আমাদের মূলনীতি বস্তুনিষ্ঠতা। এটাকে আমরা এখনো ধরে রেখেছি, ভবিষ্যতেও রাখব।’

প্রথম আলো প্রকাশের শুরুর দিন থেকে এখন পর্যন্ত একনিষ্ঠ পাঠক হিসেবে নিজেকে গর্বিত মনে করেন প্রবীণ চিকিৎসক মো. হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন সমাজে, রাষ্ট্রে যেসব অসংগতি আমার চোখে ধরা পড়ে। মনে মনে ভাবি এই অসংগতি নিয়ে কে কথা বলবে? কিন্তু কিছুদিন পরেই দেখি, প্রথম আলো সেসব বিষয় পত্রিকায় তুলে ধরেছে। কীভাবে যেন প্রথম আলো আমাদের মনে ভাষা বোঝে। একটি সংবাদমাধ্যম এমনই হওয়া উচিত।’

সমাবেশে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশে স্বাধীন সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জ অনেক। স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সরকারের দমন-পীড়ন বাধা হিসেবে কাজ করে। আরেকটি হচ্ছে মালিকপক্ষের বাধা। একমাত্র প্রথম আলোই দুই বাধা অতিক্রম করে স্বাধীন সাংবাদিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। প্রথম আলোর এই সাহসী হওয়ার পেছনে বড় কারণ সৎ সাংবাদিকতা।

প্রথম আলোর সুধী সমাবেশে প্রশ্ন করছেন এক আমন্ত্রিত অতিথি। শুক্রবার বিকেলে বরিশাল নগরের বিডিএস মিলনায়তনে

প্রথম আলোর অগ্রযাত্রাকে দেশের ইতিবাচক অর্জনের একটি বড় মাইলফলক হিসেবে মনে করেন বরিশাল বিএম কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক শাহ সাজেদা। তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নে যেন প্রথম আলো কখনো আপস না করে। একটি অসাম্প্রদায়িক, নারী-পুরুষের বৈষম্যহীনতা, নারী-শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে প্রথম আলো যেন সব সময়ই সোচ্চার থাকে এই আহ্বান জানাই।’

সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক হেনা রানী বিশ্বাস, আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আলমগীর হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আলম, নাট্যজন সৈয়দ দুলাল, মহানগর বিএনপির সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক, সাংস্কৃতিক সংগঠক শুভংকর চক্রবর্তী, কবি হেনরি স্বপন, বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার জাহিদ, এবিসি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী আবদুস সালাম, সমাজসেবা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ পারভেজ, ব্যবসায়ী আমির হোসাইন, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) বিভাগীয় সমন্বয়ক লিংকন বায়েন, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের বিভাগীয় সমন্বয়ক রফিকুল আলম, ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক রনজিৎ দত্ত, অধিকারকর্মী কাজল বরণ দাশ, কৃষিবিদ নাহিদ বিন রফিক, জেলা মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পুষ্প রানী চক্রবর্তী, জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক হাফিক উদ্দিন প্রমুখ বক্তব্য দেন।

বক্তারা প্রথম আলোর কাছে দেশের অগ্রযাত্রায় জোরালো ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে সমাজ পরিবর্তনে মানুষের সমস্যাসহ অসংগতি নিয়ে কাজ অব্যাহত রাখার পরামর্শ দেন।