ডিভাইসের একটি অংশ সাঁটানো ছিল আটক পরীক্ষার্থীর স্যান্ডো গেঞ্জির সঙ্গে। শনিবার দিনাজপুর শহরের কসবা এলাকায় কেরী মেমোরিয়াল হাইস্কুলের পরীক্ষা কেন্দ্রে
ডিভাইসের একটি অংশ সাঁটানো ছিল আটক পরীক্ষার্থীর স্যান্ডো গেঞ্জির সঙ্গে। শনিবার দিনাজপুর শহরের কসবা এলাকায় কেরী মেমোরিয়াল হাইস্কুলের পরীক্ষা কেন্দ্রে

নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি করে চাকরি নেন গ্রেপ্তার মামুন, পরে যুক্ত হন চক্রের সঙ্গে

দিনাজপুর সরকারি কলেজে পড়ালেখা করার সময় শহরের ফকিরপাড়া এলাকার একটি মেসে ভাড়া থাকতেন মো. মামুন। ২০১৬ সালে ওই এলাকায় ‘স্বপ্নচূড়া’ নামের ছাত্রাবাসটি ভাড়া নিয়ে নিজেই পরিচালনা শুরু করেন। ২০১৮ সালে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে যুক্ত ঢাকায় ডাক বিভাগের এক কর্মকর্তার (এখনো কর্মরত আছেন) সঙ্গে যোগাযোগ হয় মামুনের। সেই কর্মকর্তার সহযোগিতায় জালিয়াতির মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পদে চাকরি নেন।

পরে মো. মামুন নিজেই জড়িয়ে পড়েন ওই জালিয়াতি চক্রের সঙ্গে। গত কয়েক বছরে চক্রটি স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগ পরীক্ষা, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নিবন্ধন পরীক্ষা, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষাসহ বিভিন্ন পরীক্ষায় জালিয়াতির মাধ্যমে চাকরি দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

গতকাল শনিবার সকালে ক্ষুদ্রাকৃতির গোল ডিভাইস নিয়ে খাদ্য অধিদপ্তরের উপপরিদর্শক পদে পরীক্ষা দিতে গিয়ে পুলিশের হাতে আটক হন কৃষ্ণপদ নামের পরীক্ষার্থী। পরে তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পুলিশের হাতে আটক হন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক মো. মামুন (৩৫) ও হর সুন্দর রায় ওরফে সবুজ (৩৮)। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতির এ তথ্য। আজ রোববার দুপুরে দিনাজপুর পুলিশ সুপার মারুফাত হুসাইন তাঁর কার্যালয়ে ব্রিফিংকালে এ কথা জানান।

পুলিশ সুপার জানান, গতকাল উপখাদ্য পরিদর্শক পরীক্ষায় একটি কেন্দ্রে এক পরীক্ষার্থীকে দুটি ডিভাইসসহ হাতেনাতে আটক করা হয়। পরে তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী প্রথমে হর সুন্দর রায় (সবুজ) নামের একজনকে আটক করা হয়। তিনি আটক ওই পরীক্ষার্থীকে চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ১৫ লাখ টাকা চুক্তি করেছিলেন। পরে সুন্দর রায়ের সহকর্মী মো. মামুনকে স্বপ্নচূড়া ছাত্রাবাস থেকে আটক করা হয়। সেখান কয়েকটি ডিভাইস, মুঠোফোন, ২৪টি প্রবেশপত্র, স্ট্যাম্প উদ্ধার করা হয়। মামুনকে জিজ্ঞাসাবাদে আরও কয়েকজনের নাম উঠে এসেছে। ঠিকানা অনুযায়ী, তাঁদের বাড়ি তল্লাশি করে পরীক্ষায় জালিয়াতিসংক্রান্ত নানা উপকরণ জব্দ করা হয়েছে। পুরো চক্রটি ধরতে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

দিনাজপুর পুলিশ সুপার মারুফাত হুসাইনে তাঁর কার্যালয়ে রোববার দুপুরে ব্রিফিং করেন

পুলিশ সুপার মারুফাত হুসাইন জানান, ওই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইনে দিনাজপুর কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছে। আজ বিকেলে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তিনজনকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। চক্রটির মাধ্যমে যাঁদের চাকরি হয়েছে, তাঁদের কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

মামলায় ৫ জনের নাম উল্লেখসহ ৮ থেকে ৯ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। আসামিরা হলেন চাকরিপ্রার্থী বিরল উপজেলার সিঙ্গুল পূর্ব রাজারামপুর এলাকার আশুতোষ রায়ের ছেলে কৃষ্ণকান্ত রায় (২৯), চিরিরবন্দর উপজেলার কৃষ্ণ চন্দ্রপুর গ্রামের মতিউর রহমানের ছেলে মো. মামুন (৩৫), একই উপজেলার পশ্চিম সাইতাড়া গ্রামের করুনা কান্ত রায়ের ছেলে হর সুন্দর রায় (৩৯), খানসামা উপজেলার কুমড়িয়া গ্রামের আইয়ুব আলীর ছেলে নুসাউর রহমান (নাঈম) ও পারভেজ (২৭) নামের আরেক তরুণ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আসামি নুসাউর রহমান প্রশ্নপত্র ও পরীক্ষা জালিয়াতি চক্রের অন্যতম সদস্য। চিরিরবন্দর উপজেলার রাণীরবন্দর বাজারে দাঁতের চিকিৎসা দেন তিনি। মো. মামুন গত কয়েক বছরের মধ্যে দৃশ্যমান অর্থের মালিক হয়েছেন। দিনাজপুর শহরে তাঁর ইলেকট্রনিকস পণ্যের শোরুম আছে। সুন্দর রায় মূলত চাকরিপ্রার্থী জোগাড় করা ও প্রশ্নপত্র সমাধানের জন্য অন্য শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন।