Thank you for trying Sticky AMP!!

সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবল টুর্নামেন্টের ট্রফি হাতে ইয়ারজান

ফুটবলার ইয়ারজানের ভাঙা বাড়িতে উৎসবের আমেজ

ইয়ারজানের বাড়িতে চলছে উৎসবের আমেজ। স্বজনদের পাশাপাশি প্রশাসনের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা আসছেন তার মা–বাবাকে অভিনন্দন জানাতে। তাঁদের হাতে কেউ ফুল তুলে দিচ্ছেন। প্রশাসন থেকে আর্থিক সহায়তাও দেওয়া হয়েছে; আশ্বাস দেওয়া হয়েছে তাঁদের ভাঙা ঘর মেরামতের। অতিথিদের কোথায় বসতে দেবেন, তা নিয়ে ব্যস্ত ইয়ারজানের মা–বাবা। এর মধ্যেই তাঁদের চোখে-মুখে ফুটে উঠেছে খুশির ঝিলিক।

আবদুর রাজ্জাক ও রেনু বেগম দম্পতির বড় মেয়ে ইয়ারজান বেগম। পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের খোপড়াবান্দি এলাকায় তাদের বাড়ি। গত রোববার নেপালে সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। টাইব্রেকারে তিনটি শট ঠেকিয়ে বাংলাদেশকে শিরোপা এনে দিয়েছে ইয়ারজান। অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবল দলের সদস্যরা ঢাকায় ফিরেছে। ইয়ারজানও ঢাকায় রয়েছে। তবে তার গ্রামের বাড়িতে ভিড় করছেন লোকজন।

পঞ্চগড় শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে খোপড়াবান্দির অবস্থান। রোববার খেলা শেষ হওয়ার পর ইয়ারজানের খোঁজখবর নিতে শুরু করেন জনপ্রতিনিধিসহ এলাকার লোকজন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে চাল, ডালসহ বিভিন্ন খাবার নিয়ে ইয়ারজানের বাড়িতে আসেন র‍্যাব-১৩–এর অধিনায়ক আরাফাত ইসলাম। এ সময় তিনি ইয়ারজানের মা–বাবার হাতে ২০ হাজার টাকা তুলে দেন। পরে আসেন পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম। তিনিও তাঁদের ২৫ হাজার টাকা দেন। সেই সঙ্গে তাঁরা ভাঙা বাড়ি মেরামত করে দেওয়ার আশ্বাস দেন।

Also Read: টাইব্রেকারে ভারতকে হারিয়ে অনূর্ধ্ব–১৬ সাফের চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের মেয়েরা

ইয়ারজানের জেতা ট্রফি হাতে তার মা–বাবা। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে পঞ্চগড় সদর উপজেলার খোপড়াবান্দি এলাকায়

ইয়ারজানের বাবা আবদুর রাজ্জাক দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্টে ভুগছেন; কাজ করতে পারেন না। মা রেনু বেগম ফসলের খেতে দিনমজুরি করেন, দিনে পান ২৫০ টাকা। সেই টাকায় চলে তাঁদের চারজনের সংসার। দুই বোনের মধ্যে ইয়ারজান বড়। ইয়ারজানের দাদা বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ উদ্দিনের দেওয়া ২২ শতক জমিতে বসবাস আবদুর রাজ্জাকসহ চার ভাইয়ের। কোনো আবাদি জমি নেই তাঁদের।  
গতকাল খোপড়াবান্দি গিয়ে দেখা যায়, এক পাশে পাটখড়ির বেড়া দেওয়া বাড়িটিতে তিনটি ছোট ঘর। টিনশেডের ছোট্ট ঘরে থাকে ইয়ারজান। পাশের ঘরের টিনের চাল ভেঙেছে। বাঁশের বেড়ার ওই ঘরের থাকেন ইয়ারজানের মা–বাবা। পূর্ব পাশের পলিথিনের ছাউনির ঘরটি রান্না জায়গা।

Also Read: দেশকে চ্যাম্পিয়ন করে আপ্লুত ইয়ারজান

আবদুর রাজ্জাক ও রেনু বেগম দম্পতির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছোটবেলা থেকেই খেলায় আগ্রহ ছিল ইয়ারজানের। সে স্থানীয় হাড়িভাসা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি সে ২০১৭ সালে পঞ্চগড়ের বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম স্টেডিয়ামে টুকু ফুটবল একাডেমিতে ভর্তি হয়। সেখানে তাকে প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেন স্থানীয় একাডেমির পরিচালক টুকু রেহমান। তবে বাড়ি থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে যাওয়ার রিকশা-ভ্যানের ভাড়াও তার কাছে থাকত না। এদিকে মেয়েদের ফুটবল খেলা মেনে নিতে পারতেন না এলাকার লোকজন। তবে মানুষের বাঁকা চোখকে তোয়াক্কা না করে এগিয়ে গেছে ইয়ারজান।

রেনু বেগম বলেন, ইয়াজানের বয়স যখন ছয় বছর, তখন থেকেই বল খেলার প্রতি ঝোঁক ছিল। ওই সময় তিনি পুরোনো পলিথিন জড়ো করে ফুটবল বানিয়ে দিতেন। সেটা নিয়ে আশপাশের শিশুদের সঙ্গে ফুটবল খেলত ইয়ারজান। ওর বাবা যখন ঢাকায় কাজ করত, তখন তাকে বলে দোকান থেকে একটা বল কিনে দেওয়া হয়েছিল। পরে সে স্কুলে ফুটবল খেলতে শুরু করে।

কথা বলতে বলতে চোখে পানি এসে যায় রেনু বেগমের। তিনি বলেন, ‘আমাগোর একটা টাচ ফোন (স্মার্টফোন) নাই। মাইষের ফোন ধার করে আইনা বাড়িতে খেলা দেখছি। খেলায় জিতার পর রোববার রাইতেই ওর চাচারা সবাই মিল্লা চাল-ডাল সংগ্রহ কইরা বাড়িতে খিচুড়ি রান্না করে আনন্দে পিকনিক খাইচে। সোমবার বিকেলে ইয়ারজান আমাগোরে ফোন দিয়া কইলো, “মা, আামি নেপাল থেইকা থেকে বাংলাদেশে ফিইরা আইছি।” মেয়েটার কাছে সব সময় ফোন থাহে না। যখন অনুমতি পায়, তখন হে আমাগোর লগে কথা কইতে পারে।’

Also Read: মেয়েদের সাফে শুধু একটি ট্রফিই অধরা বাংলাদেশের

ইয়ারজানের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। গতকাল তার বাবা–মায়ের হাতে টাকা তুলে দেন জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম

ইয়ারজানের বাবা আবদুর রাজ্জাক বলেন, তিনি যক্ষ্মায় আক্রান্ত ছিলেন। ওই রোগ সেরে গেলেও তাঁর ফুসফুসে সমস্যা হয়েছে। এ জন্য তিনি কোনো শক্ত কাজ করতে পারেন না। ইয়ারজানের সাফল্যে তিনি খুবই খুশি। মেয়ের জন্য সবার দোয়া চান তিনি।

জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইয়ারজান আমাদের মেয়ে; আমাদের গর্ব। সে সারা বিশ্বে যেভাবে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে, দেশবাসী খুশি। তার পরিবার অনেক দরিদ্র। জেলা প্রশাসন সব সময় পরিবারটির পাশে থাকবে।’