
বাংলাদেশ স্থিতিশীল থাকুক, সেটি শেখ হাসিনা ও তাঁর দোসররা চায় না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। শেখ হাসিনা স্বজনদের নিয়ে গেলেও তাঁর দোসররা দেশে রয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দোসররা বিভিন্ন জায়গায় আছে। প্রশাসনে আছে, পুলিশে আছে, সরকারি দপ্তরে আছে। প্রতিটি জায়গায় তারা সেখান থেকে অনেক ধরনের ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের নীলনকশা আঁকছে। তারা জাল বুনছে কী করে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনকে নস্যাৎ করা যায়, বানচাল করা যায়। বাংলাদেশকে শান্তিপূর্ণ না দেখানো, বাংলাদেশ আর চলতে পারছে না, মুখ থুবড়ে পড়ছে—এটাই দেখানো তাদের মূল উদ্দেশ্য এবং সেভাবেই তারা কাজ করছে।’
গতকাল রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের চরমনসা গ্রামের সূতারগোপ্তা এলাকায় আগুনে পুড়ে নিহত শিশুর পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে রুহুল কবির রিজভী সাংবাদিকদের এ কথাগুলো বলেন। ঢাকায় ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলি করে হত্যা, চট্টগ্রামে বিএনপির প্রার্থীকে গুলি করা এবং লক্ষ্মীপুরে বিএনপি নেতার ঘরে আগুন একই ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘...৫ আগস্ট ছাত্র-জনতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে পুলিশের গুলির মুখে নিজের জীবন দিয়ে শেখ হাসিনার মতো এক ভয়ংকর দানবীকে বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত করেছে। কিন্তু তারপরও তারা থেমে নেই। তারা যেখানে আশ্রয় নিয়েছে, যেখানে তাদের প্রশ্রয় দেয়, যেখানে তাদের দুধ-কলা দিয়ে পোষা হচ্ছে, সেখান থেকেই তারা সুতায় টান দিচ্ছে। সেখান থেকেই তারা কোনো না কোনো কিছু করতে পারে।’
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘তাদের অনেকগুলো ঘটনা আমরা এর মধ্যেই দেখতে পেলাম। কেন আমরা বলছি এ কথা, কারণ এর মধ্যে অনেক অডিও প্রকাশিত হয়েছে শেখ হাসিনার। ধর, মার, মেরে ফেলে দে, দেশে যেন শান্তিতে কেউ না থাকতে পারে—এ ধরনের কথা, এই টাইপেরই তো; অডিওতে কথাগুলো এসেছে। তার মানে বাংলাদেশ স্থিতিশীল থাক, বাংলাদেশে শান্তিতে থাক, এখানে মানুষ নির্বিঘ্নে হাট-ঘাট-বাজার ছেড়ে, অফিস–আদালত ছেড়ে, স্কুল-কলেজ থেকে তার শান্তিপূর্ণ গৃহে ফিরে আসুক, এটা সে চায় না। তাদের দোসররা চায় না।’
বাংলাদেশকে নিয়ে ভয়ংকর চক্রান্ত চলছে জানিয়ে রিজভী আরও বলেন, ‘তারা যে সুখে–শান্তিতে বাংলাদেশ থেকে লুটপাট করেছে, সে লুটপাট করতে তো আর পারছে না; পারছে না বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮০০ কোটি টাকা পাচার করতে, পারছে না সোনালী ব্যাংক ও বেসিক ব্যাংকের টাকা পাচার করতে, পারছে না সরকারি প্লট আত্মসাৎ করতে।...তারা মনে করেছিল কেয়ামত পর্যন্ত সুখে-শান্তিতে থাকবে। এটি যখন হাতছাড়া হয়ে গেছে, তারা আর বাংলাদেশকে নির্বিঘ্নে–নিশ্চিন্তে থাকতে দিতে চায় না।’
এর আগে রাত নয়টার দিকে দগ্ধ বিএনপি নেতা বেলাল হোসেনকে দেখতে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে যান রুহুল কবির রিজভী। এ সময় তিনি বেলালের হাতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপহার হিসেবে ৪ লাখ টাকা তুলে দেন। পরে বেলালের ঘর পরিদর্শনের পাশাপাশি তাঁর পরিবারের সদস্যদের খোঁজখবর নেন। রুহুল কবির রিজভীর সঙ্গে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানিসহ দলের একাধিক নেতা উপস্থিত ছিলেন।
গত শুক্রবার গভীর রাতে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের চরমনসা গ্রামের সূতারগোপ্তা এলাকায় বেলাল হোসেনের ঘরে আগুন লাগে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, দরজায় তালা লাগিয়ে ও পেট্রল ঢেলে তাঁর ঘরে আগুন দেওয়া হয়েছে। আগুনে পুড়ে বেলালের সাত বছর বয়সী কন্যাসন্তানের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া বেলাল এবং তাঁর দুই মেয়ে বীথি আক্তার (১৪) ও সালমা আক্তার স্মৃতি (১৭) দগ্ধ হয়েছে। বীথি ও স্মৃতিকে চিকিৎসার জন্য জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে। বেলালকে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বেলাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ঘরের দুটি দরজাই বাইরে থেকে তালাবদ্ধ ছিল। তাই দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে তিনি টিনের বেড়া ভেঙে বের হন। এ সময় তাঁর ছোট মেয়েও চিৎকার করছিল। কিন্তু আগুনের তীব্রতা আর ধোঁয়ায় তিনি কিছু দেখতে পাচ্ছিলেন না। একপর্যায়ে আগুনের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় মেয়েকে উদ্ধারের জন্য ঘরে ঢুকতে পারেনি। ঘরের ভেতরেই পুড়ে শিশুসন্তানের মৃত্যু হয়েছে।
এ ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত মামলা হয়নি। পুলিশ বলছে, নাশকতা থেকে এ ঘটনা ঘটেছে—এমন তথ্যের বিশ্বাসযোগ্য কোনো প্রমাণ তারা পায়নি। ফায়ার সার্ভিসও জানিয়েছে, দরজা তালাবদ্ধ থাকার বিষয়টি সম্পর্কে তারা নিশ্চিত নয়।