জমিতে এসে শীতের কারণে কাজ না করতে পেরে একটু উষ্ণতার জন্য খড়কুটা দিয়ে আগুন জ্বালিয়েছেন কৃষক সোহেল মিয়া ও হুমায়ুন কবির। আজ সোমবার সকালে কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলায়
জমিতে এসে শীতের কারণে কাজ না করতে পেরে একটু উষ্ণতার জন্য খড়কুটা দিয়ে আগুন জ্বালিয়েছেন কৃষক সোহেল মিয়া ও হুমায়ুন কবির। আজ সোমবার সকালে কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলায়

নিকলীতে আজ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা

‘এরুম ঠান্ডা জীবনেও দেহি নাই, সারা দিন সূর্য উডে না’

বাড়ির সামনে কম্বল মুড়ি দিয়ে চায়ের দোকানের সামনে বসে আছেন ৬৫ বছর বয়সী ফারুক মিয়া। অন্যদের সঙ্গে বসে টেলিভিশনের বাংলা সিনেমা দেখছেন। এখন বোরো ধান রোপণের সময় হাওরের মানুষের প্রতিদিন কাজ থাকে। কিন্তু গত দুদিন ধরে তীব্র শীতের কারণে ফারুক মিয়ার মতো অনেকেই কাজে যেতে পারছেন না।

ফারুক মিয়ার বাড়ি কিশোরগঞ্জের নিকলীর কুর্শা এলাকায়। তিনি বলেন, ‘৬৫ বছর বয়সে এরম শীত লাগে নাই। শীতে শইল জমে যাইতাছে। কামেও যাইতে পারতেছি না। এরম শীত থাকলে আমরা বাঁচুম না।’

একটু দূরে নাতিকে কোলে নিয়ে কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘরের সামনে বসে আছেন ৭০ বছর বয়সী রহিমা আক্তার। তিনি বলেন, ‘নিকলীতে এরুম ঠান্ডা জীবনেও দেহি নাই। সারা দিন সূর্য উডে না। পুলাপাইনও ঘরের বাইরে যায় না। ঘরে ঘুমাইয়াই দিন পার করে দিতাছে।’

এভাবেই নিকলীর অনেকে তীব্র শীতের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন। এদিকে দ্বিতীয় দিনের মতো দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলায়। আজ সোমবার সকালে হাওর–অধ্যুষিত এই উপজেলায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল রোববার নিকলীতে ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল।

নিকলী আবহাওয়া কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক আক্তারুজ্জামান ফারুক জানান, বেলা সাড়ে ১১টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, আজও সারা দেশের মধ্যে নিকলীতেই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। কয়েক দিন ধরে কিশোরগঞ্জে তাপমাত্রা কমছে। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান অনেকটা কমে যাওয়ায় তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। তবে রোববারের তুলনায় সোমবার শীতের তীব্রতা সামান্য কমলেও জেলার ওপর দিয়ে এখনো মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। চলতি মাসজুড়ে শীতের প্রভাব অব্যাহত থাকতে পারে।

নিকলী সদরের বাসিন্দা হারুন অর রশিদ বলেন, আজ ভোর থেকেই নিকলীতে ঘন কুয়াশা। অতিরিক্ত ঠান্ডায় নিম্ন আয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছেন। দৈনন্দিন কাজে যেতে না পেরে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তাঁরা। প্রভাব পড়েছে বোরো ধানের আবাদেও। মৌসুমের শুরুতে অতিরিক্ত ঠান্ডায় ধানের চারা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন হাওরের কৃষকেরা।