
পদ্মা সেতুর সামনে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে থেকে অবরোধকারীদের সরিয়ে দিয়েছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পদ্মা সেতু দিয়ে কিছু যানবাহন চলাচল শুরু করে।
এদিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার সুয়াদী বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকেও অবরোধকারীদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আবার যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে।
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের অনলাইনে ঘোষিত ‘লকডাউন’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দলটির নেতা-কর্মীরা আজ সকালে সড়ক অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেন।
জাজিরার পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানা ও স্থানীয় সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আজ সকালে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করেন। সড়কটির নাওডোবা এলাকার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। সকাল ৭টার দিকে তাঁরা তস্তারকান্দি এলাকায় একটি ট্রাকে আগুন দেন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ সময় দুটি যাত্রীবাহী বাস ভাঙচুর করা হয়। আন্দোলনকারীরা তস্তারকান্দি এলাকায় সড়কে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে মিছিল করেন। তাঁরা পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার একটি পুলিশের টহল গাড়িতে ককটেল নিক্ষেপ করেন।
ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে জাজিরার নাওডোবা পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার মহাসড়কের পাঁচটি স্থানে সকাল ৬টা থেকে অবস্থান নেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা গাছের গুঁড়ি ফেলে ও টায়ার জ্বালিয়ে সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন। পরে জাজিরার পদ্মা সেতু দক্ষিণ, শিবচর, ভাঙ্গা ও হাইওয়ে থানার পুলিশ সকাল ১০টার দিকে সড়ক থেকে অবরোধকারীদের সরিয়ে দেন। পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার পুলিশ এ সময় তিনজনকে আটক করে।
বেলা ১১টার দিকে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের টোল প্লাজার সামনে দেখা যায়, অ্যাম্বুলেন্স, প্রাইভেট কার ও কাঁচা মালামালবোঝাই ট্রাক চলাচল করছে। তবে যাত্রীবাহী বাস চলাচল করতে দেখা যায়নি।
শরীয়তপুর বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন রুটের বাস বন্ধ রাখা হয়েছে। এ কারণে যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েছেন। অনেকে টার্মিনালে বসে বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন।
মাদারীপুরের খাসেরহাট থেকে ঢাকা যাওয়ার জন্য শরীয়তপুর বাস টার্মিনালে এসে অপেক্ষা করছিলেন দিদারুল আলম নামের এক ব্যক্তি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘জরুরি প্রয়োজনে ঢাকা যেতে হবে। সকাল ৯টার দিকে এসে বসে আছি; কিন্তু বাস চলাচল বন্ধ। কীভাবে ঢাকা যাব বুঝতে পারছি না।’
শরীয়তপুর বাস মালিক সমিতির সভাপতি ফারুক আহম্মেদ তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল ঢাকার ধোলাইরপাড় এলাকায় শরীয়তপুরের দুটি বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। ওই কারণে মালিক ও শ্রমিকেরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। এ ছাড়া টার্মিনালে যাত্রীদের চাপও নেই। তাই আপাতত বাস চলাচল বন্ধ আছে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে বাস চলাচল স্বাভাবিক হবে।
জাজিরার পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম রসুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকাল থেকে পদ্মা সেতুর এক কিলোমিটার পশ্চিমে সড়কে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। তাঁরা কিছু নাশকতা করেছেন। আমাদের একটি টহল গাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন, একটি ট্রাকে আগুন দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন থানার পুলিশ সদস্যরা সড়ক থেকে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দিয়েছেন। এখন ওই সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক আছে।’
এদিকে হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সকাল সাড়ে ছয়টায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের হামিরদী ইউনিয়নের মাধবপুর বাসস্ট্যান্ডে টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ করেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এই পথে আধা ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। পাশাপাশি ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের হামিরদী ইউনিয়নের মুনসুরাবাদ বাসস্ট্যান্ডে সকাল সাড়ে ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত অবরোধ করা হয়। সাড়ে তিন ঘণ্টা পর তাঁরা সরে যান এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এই মহাসড়কের সুয়াদী বাসস্ট্যান্ডে সকাল সাড়ে ৯টা ও ১০টায় দুই দফা কয়েক মিনিটের জন্য অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। তবে আন্দোলনকারীরা আবারও সড়কে নেমে আসেন। পরে পুলিশ ও র্যাবের চেষ্টায় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সড়ক থেকে পুরোপুরি সরে যান অবরোধকারীরা।
ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রোকিবুজ্জামান বলেন, পরিস্থিতি এখন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। সড়ক থেকে গাছ ও আগুনের অবশিষ্টাংশ সরানো হয়েছে। যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।