
প্রবল ইচ্ছাশক্তি আর অধ্যবসায় থাকলে যে প্রতিবন্ধকতা ডিঙিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়, তা প্রমাণ করেছে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হৃদয় শেখ। এবারের এসএসসি পরীক্ষায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে সাফল্যের সিঁড়ি এক ধাপ পেরিয়েছে সে। সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার রেলওয়ে কলোনি উচ্চবিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসিতে সব বিষয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে হৃদয়।
আপাত এই সাফল্যের পেছনে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিতা আর নিদারুণ দারিদ্র্যের গল্প ফেলে এসেছে হৃদয় শেখ। তাদের বসতভিটা ছাড়া কোনো জমিজমা, সম্পদ নেই। বাবা আবদুর রাজ্জাক একজন রিকশাচালক। আর মা আঙ্গুড়ী বেগম গৃহিণী। দুই ভাইবোনের মধ্যে বোন বড়। অভাবের তাড়নায় ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় তার বোনের বাল্যবিবাহ হয়েছিল। হৃদয় জন্মগতভাবেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। তবু পড়ালেখার প্রতি তাঁর আগ্রহে ভাটা পড়েনি।
হৃদয় শেখ প্রথম আলোকে বলে, ‘আমি জন্মগত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হওয়ায় ব্রেইল পদ্ধতির মাধ্যমে বিদ্যালয়ে অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গেই লেখাপড়া করেছি। শুধু এসএসসি পরীক্ষার সময় শ্রুতিলেখকের সহায়তায় পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলাম। শ্রুতিলেখক হিসেবে বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ইসতিয়াক আহমেদ আমাকে সহায়তা করেছে।’ হৃদয় শেখ আরও বলে, ‘আমি ঢাকার কোনো কলেজে পড়তে চাই। এর জন্য অর্থের প্রয়োজন। আমার বাবার পক্ষে তা জোগান দেওয়া সম্ভব নয়। যে কারণে বড় চিন্তায় আছি। ভবিষ্যতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চাই।’
হৃদয় শেখের মা আঙ্গুড়ী বেগম বলেন, সিরাজগঞ্জ পৌর শহরের সয়াধানগড়া মহল্লায় বসতভিটার দুই শতক জায়গা ছাড়া আর জমিজমা নেই তাদের। বাধ্য হয়ে স্বামী পৌর শহরে রিকশা চালিয়ে সংসার চালান। সংসারের খরচ বাঁচিয়ে হৃদয়ের লেখাপড়ার কিছুটা জোগানো হলেও তা যথেষ্ট ছিল না। বাধ্য হয়ে ছেলেকে সিরাজগঞ্জ পৌর শহরের এসবি রেলওয়ে কলোনি উচ্চবিদ্যালয়ের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ছাত্রাবাসে রাখা হয়েছিল। সেখানে থেকেই হৃদয় পড়ালেখা করত।
হৃদয়ের শিক্ষক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ছাত্রাবাসের সুপার আজিজুল ইসলাম বলেন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিতা, অভাব কিংবা দারিদ্র্য যে ইচ্ছাশক্তির কাছে পরাজিত হয়, তার উদাহরণ হৃদয় শেখ। যথাযথ পরিবেশ পেলে এসব শিক্ষার্থীরা সমাজ ও দেশের জন্য কল্যাণ নিয়ে আসবে।
এসবি রেলওয়ে কলোনি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘হৃদয় শেখ আমাদের বিদ্যালয়ের গর্ব। আর্থিক সহায়তা পেলে সে সামনের জীবনে আরও ভালো কিছু করতে পারবে। হৃদয় শেখ আবারও প্রমাণ করেছে, ইচ্ছাশক্তি থাকলে শিক্ষা ক্ষেত্রে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিতা কোনো বাধা নয়।’