Thank you for trying Sticky AMP!!

তুরাগতীরে চলছে বিশ্ব ইজতেমার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি

গাজীপুরের টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মুসল্লিরা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে ময়দানের কাজ করে যাচ্ছেন। শুক্রবার দুপুরে

রাজধানীর সন্নিকটে গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে চলছে বিশ্ব ইজতেমার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। ইতিমধ্যে ইজতেমা ময়দান প্রস্তুতির প্রায় ৭০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। শীতের ঠান্ডা বাতাস উপেক্ষা করে ইজতেমা মাঠে স্বেচ্ছায় কাজ করে যাচ্ছেন বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মুসল্লিরা।

গাজীপুরের পুবাইল এলাকা থেকে আসা মুসল্লি আবদুল আলীম বলেন, ‘আল্লাহকে রাজি–খুশি করার জন্য মেহনত করতে ময়দানে এসেছি। স্বেচ্ছায় কাজ করছি। সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করে আবার বাড়িতে ফিরে যাব।’

এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হবে আগামী ১৩ জানুয়ারি। ১৫ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এই পর্ব। চার দিন বিরতি দিয়ে ২০ জানুয়ারি শুরু হবে দ্বিতীয় পর্ব। ২২ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমা।

ইজতেমা উপলক্ষে গাজীপুরের টঙ্গীতে ১৬০ একরের বিস্তৃত ময়দানে বিশাল শামিয়ানা টানানোর কাজ প্রায় শেষ। বিশাল ময়দানে খিত্তাভিত্তিক চলছে মাইক বাঁধা এবং বৈদ্যুতিক তার ও বাতি টানানোর কাজ।

ময়দানে আগত মুসল্লিদের তুরাগ নদ পারাপারের জন্য ময়দানের পশ্চিম পাশে নদের ওপর সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে নির্মাণ করা হচ্ছে ভাসমান সেতু (পন্টুন)। এ ছাড়া গাজীপুর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ১২টি নলকূপের মাধ্যমে ১২ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা হচ্ছে। অজু-গোসলের হাউস নির্মাণসহ পাকা দালানে প্রায় সাড়ে আট হাজার অস্থায়ী টয়লেটের ব্যবস্থা রয়েছে। ময়দানের চাহিদা মোতাবেক ব্লিচিং পাউডার সরবরাহ ও ২৫টি ফগার মেশিনে মশকনিধনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান বলেন, নিয়মিত পানি ছিটানো, মশার ওষুধ দেওয়া, পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া মুসল্লিদের যেকোনো সমস্যার সমাধানে সার্বক্ষণিক একাধিক টিম কাজ করবে।

সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে শত শত মুসল্লি আজ শুক্রবার ভোর থেকে ইজতেমা ময়দানে জড়ো হতে থাকেন। পরে তাঁরা সম্মিলিতভাবে ময়দানের বিভিন্ন কাজে নেমে যান। কেউ চটের শামিয়ানা টানছেন, কেউ বাঁশ পোঁতার কাজ করছেন। অনেকে কোদাল নিয়ে মাঠে ড্রেন করছেন। বয়ানের মঞ্চের কাজ করছেন কেউ কেউ।

রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে ১৫ জনের একটি দল পিকআপ নিয়ে ইজতেমা ময়দানের কাজ করতে এসেছে। আসার সময় কিছু মাদুর ও চট নিয়ে এসেছে। কাজের ফাঁকে দুপুরে ইজতেমা ময়দানে রান্না করে খাওয়াদাওয়া সেরেছেন তাঁরা। পরে আবার কাজ নেমে যান।

ইজতেমা ময়দানের মুরব্বি মাহফুজুর রহমান বলেন, বিশ্ব ইজতেমার সব প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। ১৩ জানুয়ারি ফজরের নামাজের পর আমবয়ানের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে বিশ্ব তাবলিগ জামাতের বার্ষিক মহাসম্মেলন বিশ্ব ইজতেমা। ইজতেমায় আগত মুসল্লিরা জেলাওয়ারি খিত্তায় অবস্থান করবেন। প্রতিবছরের মতো এবারও উর্দু ভাষায় বয়ান করা হবে এবং বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মুসল্লিদের সুবিধার্থে বয়ানের সঙ্গে সঙ্গে বাংলা ও আরবি ভাষায় তরজমা করা হবে।

ইজতেমা মাঠে মুসল্লিদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানালেন শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ঢাকা থেকে এ হাসপাতালে একটি বিশেষজ্ঞ টিম কাজ করবে। রোগী পরিবহনের জন্য সার্বক্ষণিক ১৪টি অ্যাম্বুলেন্স মোতায়েন থাকবে।

সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, ইজতেমার সার্বিক নিরাপত্তায় সাড়ে ৭ হাজার পুলিশ মোতায়েন থাকবে। সিসিটিভি ক্যামেরা, ওয়াচ টাওয়ার ও রুফটপ থেকে পুরো ইজতেমা ময়দানের নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করা হবে। এ ছাড়া বিশেষায়িত টিমসহ প্রতিটি খিত্তায় সাদা পোশাকে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করবেন। অগ্নিনির্বাপণের জন্য প্রতি খিত্তায় এবার দুটি করে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র রাখা হবে। তুরাগে থাকবে নৌ টহল।