লালমনিরহাটের ৩ আসন

তফসিল ঘোষণার পর জাতীয় পার্টির নেতারা তৎপর

লালমনিরহাটের তিনটি সংসদীয় আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে গণসংযোগ করছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। প্রার্থী নিয়ে ‘অসন্তোষ’ থাকায় একটিতে প্রার্থী না দিলেও দুটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। জামায়াত তিনটিতেই আগেভাগে প্রার্থী ঘোষণা করে প্রচারণা শুরু করে। সম্প্রতি একটি আসনে প্রার্থী পরিবর্তন করেছে দলটি।

নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) দুটি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস প্রতিটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে নিজেদের মতো করে মাঠ গোছাচ্ছে। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন ও জনতার দল একটি করে আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে সামগ্রিকভাবে তাদের তৎপরতা কম।

জাতীয় পার্টির (জাপা) ‘ঘাঁটি’ হিসেবে পরিচিত লালমনিরহাটে একসময় সব আসন তাদের দখলে ছিল। লালমনিরহাট-৩ আসন থেকে একাধিকবার সংসদ সদস্য (এমপি) হয়েছেন জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের। গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর জেলা জাপার কার্যালয়ে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। মামলা হয়েছে জেলার শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে। এমন পরিস্থিতিতে জেলায় দলটির তৎপরতা ছিল না বললেই চলে। তবে তফসিল ঘোষণার পর নেতাদের তৎপর হতে দেখা যাচ্ছে।

জেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক ও দলের চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মো. জাহিদ হাসান গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, দল থেকে লালমনিরহাট-৩ আসনে তাঁকে, লালমনিরহাট-১ আসনে মসিউর রহমানকে (রাঙ্গা), লালমনিরহাট-২ আসনে দলের চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা এলাহান উদ্দিনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মসিউর রহমানও।

লালমনিরহাট-১ (হাতীবান্ধা-পাটগ্রাম)

সীমান্তবর্তী দুই উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনে ১৯৭৯ সালের নির্বাচন ছাড়া কখনো জিততে পারেনি বিএনপি। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে জাপা এবং ২০০১ সাল থেকে টানা জয় পায় আওয়ামী লীগ। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থী ৭৪ হাজারের বেশি ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছিলেন। এবার আসনটিতে জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান রাজীব প্রধানকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। অন্যদিকে প্রথমবারের মতো জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন ঢাকা মহানগর উত্তরের মজলিশে শুরা সদস্য আনোয়ারুল ইসলাম।

হাসান রাজীব প্রধান বলেন, ‘প্রচার-প্রচারণায় ভোটারদের ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। ইনশা আল্লাহ সর্বাধিক ভোট পেয়ে বিজয়ী হব।’

জামায়াতের আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা মাঠে-ময়দানে সর্বত্র মানুষের ভালো সাড়া পাচ্ছি। আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।’

এনসিপি এখানে এখনো কাউকে মনোনয়ন দেয়নি। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মুফতি আবুল কাশেম, ইসলামী আন্দোলনের ফজলুল করিম, এবি পার্টির মোহাম্মদ আবু রাইয়ান দলীয় মনোনয়নে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

লালমনিরহাট-২ (আদিতমারী-কালীগঞ্জ)

স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে এ আসনে এমপি হয়েছিলেন করিম উদ্দিন আহমেদ। পরে ১৯৭৯ সালে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন মজিবুর রহমান। পরে দল পরিবর্তন করে জাপার হয়ে ১৯৮৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচনে জয় পান তিনি। ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ও পরবর্তী সব নির্বাচনে জয় পান করিম উদ্দিনের ছেলে সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ।

এ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিএনপি। জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ফিরোজ হায়দারকে (লাভলু) প্রার্থী ঘোষণা করেছে জামায়াত। এ ছাড়া জনতার দলের প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শামীম কামাল নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়ে এলাকায় প্রচারণা চালাচ্ছেন।

স্থানীয় বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, আসনটিতে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে আছেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি মো. রোকন উদ্দিন, কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. জাহাঙ্গীর আলমসহ কয়েকজন নেতা।

এ আসনে উত্তরাঞ্চলের কেন্দ্রীয় সংগঠক রাসেল আহমেদকে মনোনয়ন দিয়েছে এনসিপি। এ ছাড়া গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দীপক কুমার রায়, ইসলামী আন্দোলনের মুফতি মাহফুজুর রহমান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মুফতি আবদুল হান্নান প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

লালমনিরহাট-৩ (সদর)

জেলার গুরুত্বপূর্ণ এ আসনে ১৯৯১ সালের পর বিএনপি একবার, আওয়ামী লীগ দুবার ও জাপার প্রার্থীরা চারবার জয় পেয়েছেন। এবার দলের রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও লালমনিরহাট জেলা সভাপতি আসাদুল হাবিবকে (দুলু) এখানে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। ‘আলোকিত লালমনিরহাট’ ও ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ আন্দোলনের কারণে ইতিমধ্যে তিনি ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছেন। তিস্তা নদী রক্ষা কমিটির প্রধান সমন্বয়কও তিনি।

আসাদুল হাবিব প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আগে যখন এমপি ও উপমন্ত্রী ছিলাম, সাধ্যমতো লালমনিরহাটের উন্নয়নে সচেষ্ট ছিলাম। আমার অসমাপ্ত কাজগুলো বাস্তবায়নে এবারের নির্বাচনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হব ইনশা আল্লাহ।’

আসনটিতে প্রথমে রংপুর মহানগর শাখা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মো. হারুন অর রশীদকে মনোনয়ন দিয়েছিল জামায়াত। পরে তাঁকে পরিবর্তন করে জেলা জামায়াতের আমির মো. আবু তাহেরকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। প্রথমবারের মতো সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ইতিমধ্যে তিনি প্রচার-প্রচারণাও শুরু করেছেন।

আবু তাহের বলেন, রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ের বাস্তবতায় এখানে জামায়াতের জনসমর্থন বেড়েছে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জয়ের ব্যাপারে তিনি শতভাগ আশাবাদী।

এ ছাড়া এনসিপির জেলার আহ্বায়ক মো. রকিবুল হাসান, এবি পার্টির ঢাকা মহানগরের সহসভাপতি ফিরোজ কবীর, খেলাফত মজলিসের মাওলানা ইসমাইল হুসাইন, ইসলামী আন্দোলনের মোকছেদুল ইসলাম ও সিপিবির জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মধুসূদন রায় নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে তাঁরা নিজেদের মতো করে প্রচারণা চালাচ্ছেন।