
‘আমি নিয়মিত দৌড়াই, এ জন্য সুস্থ্ আছি। দৌড়ালে ওষুধ খেতে হবে না। শরীর-মন সুস্থ রাখার জন্য এটিই প্রাকৃতিক ওষুধ’ বলছিলেন জমির হোসেন (৫৫)। দেশের যে প্রান্তেই ম্যারাথন হয়, জমির হোসেন অংশ নেওয়ার চেষ্টা করেন। অনেক পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি।
সুনামগঞ্জে আজ শুক্রবার সকালে অনুষ্ঠিত হাফ ম্যরাথনে অংশ নিয়ে ২১ কিলোমিটার দৌড়েছেন জমির হোসেন। তাঁর গ্রুপে (৪৫ বছরের বেশি) পেয়েছেন সেরার পুরস্কার। শুধু জমির হোসেন একা নন, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা সাড়ে ৩০০ জন এই ম্যারাথনে অংশ নেন। তাঁদের মধ্যে ১০ বছরের শিশু থেকে শুরু করে ৭৪ বছর বয়সী বৃদ্ধও ছিলেন।
‘সুরমা রানার্স সুনামগঞ্জ’–এর উদ্যোগে দ্বিতীয়বারের মতো সুনামগঞ্জ শুক্রবার হাফ ম্যারাথন অনুষ্ঠিত হলো। সকাল ছয়টায় পৌর শহরের ঐতিহ্য জাদুঘর প্রাঙ্গণ থেকে ম্যারাথন শুরু হয়। এতে দুটি ক্যাটাগরিতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রায় ৩৫০ রানার (নারী-পুরুষ) অংশ নেন। ১০ কিলোমিটার ও ২১ কিলোমিটার দুই ভাগে ম্যারাথন হয় সুনামগঞ্জ-দোয়ারাবাজার সড়কে।
সরেজমিনে দেখা যায়, নির্ধারিত সড়কে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। মোড়ে মোড়ে স্বেচ্ছাসেবকেরা ম্যারাথনে অংশ নেওয়া লোকদের জন্য পানি, স্যালাইন, হালকা খাবার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। প্রয়োজনে তাঁদের কাছ থেকে সেগুলো নিচ্ছেন দৌড়ে অংশ নেওয়া লোকজন। জরুরি প্রয়োজনে স্বাস্থ্যসেবাব্যবস্থা ও অ্যাম্বুলেন্সও প্রস্তুত আছে।
দৌড় শেষে সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বাসিন্দা জমির হোসেন বলছিলেন, ‘আমি প্রতিদিন ফজরের নামাজের পর দৌড়াই। এটা বহুদিন থেকে আমার অভ্যাস। আমি কোনো ওষুধ খাই না। এটিই (দৌড়) আমার ওষুধ।’
রাজবাড়ী থেকে আসা বিশ্বজিৎ রায় জানান, তিনি ২০১৯ সাল থেকে নিয়মিত দৌড়ান। দেশে এবং দেশের বাইরে একাধিক ম্যারাথনে অংশ নিয়েছেন। এবার সুনামগঞ্জ ম্যারাথনে এসে ভালো লেগেছে জানিয়ে বিশ্বজিৎ বলেন, ‘সুস্থ থাকার জন্য ব্যায়াম করতে হবে। দৌড়ানো চমৎকার ব্যায়াম। দৌড়ালে অসুখ হবে না, ওষুধ খেতে হবে না।’
চতুর্থ শ্রেণি পড়ুয়া ছেলে রাইয়ানকে সঙ্গে নিয়ে ম্যারাথনে অংশ নেন সুনামগঞ্জ শহরের বাসিন্দা মারুফ আহমদ মান্না। তিনি একজন ব্যাংক কর্মকর্তা। মারুফ বলেন, ‘সুস্থ থাকাটা জরুরি। নিজের শহরে এত চমৎকার একটি আয়োজন হচ্ছে জেনে অংশ নিলাম।’
ঢাকা থেকে আসা ৭৪ বছর বয়সী খবির উদ্দিন খান ছিলেন ম্যারাথনের মূল আকর্ষণ। ম্যারাথনে অংশ নিতে আগের দিন তিনি চলে আসেন সুনামগঞ্জে। তাকে ঘিরে সবার ব্যাপক উৎসাহ দেখা যায়। দেশে তো বটেই, দেশের বাইরে অনেক জায়গায় তিনি ম্যারাথনে অংশ নিয়েছেন। রানারদের কাছে তিনি ‘দাদু’ হিসেবে পরিচিত। সবাইকে জমিয়ে রাখেন। খবির উদ্দিন খান বলেন, ‘পরিমিত খান, নিয়মিত দৌড়ান, দেখবেন আপনি ভালো থাকবেন। নিজে ভালো থাকা এবং অন্যদের ভালো থাকতে উৎসাহ দিতেই ম্যারাথনে অংশ নিই। সুনামগঞ্জে প্রথম ম্যারাথনেও আমি অংশ নিয়েছিলাম।’
‘সুরমা রানার্স সুনামগঞ্জ’–এর প্রধান সমন্বয়ক মোহাম্মদ মামুনুর রশীদ বলেন, ‘সুনামগঞ্জে এটা দ্বিতীয় হাফ ম্যারাথনের আয়োজন। আমি নিজেও একজন রানার। তরুণদের অংশগ্রহণ বাড়াতে চাই। তাঁদের মাদকমুক্ত রাখতে হবে।’
সকাল আটটার দিকে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া। বিশেষ অতিথি ছিলেন সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তাপস রঞ্জন ঘোষ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক তাপস শীল।
পুরস্কার পেলেন যারা
সুনামগঞ্জ হাফ ম্যারাথনে ১০ কিলোমিটারের (পুরুষ) দৌড়ে প্রথম হন দীপ তালুকদার, দ্বিতীয় হৃদয় পার্থ, তৃতীয় হন জনি আহমেদ; নারীদের মধ্যে ১০ কিলোমিটারে প্রথম হন তাবাসসুম ফেরদৌস, দ্বিতীয় সানজানা তাবাসসুম, তৃতীয় কামনা রানী সরকার। ৪৫–ঊর্ধ্বদের ১০ কিলোমিটারে প্রথম হয়েছেন বিশ্বজিৎ দাস, দ্বিতীয় আকরামুল ইসলাম, তৃতীয় শামীম খান।
এ ছাড়া ২১ কিলোমিটার দৌড়ে প্রথম হন গোলাম রাহাত তোফায়েল, দ্বিতীয় মহিবুর রহমান, তৃতীয় তোফায়েল আহমেদ রনি। ৪৫–ঊর্ধ্বদের ২১ কিলোমিটার দৌড়ে প্রথম হয়েছেন জমির হোসেন, দ্বিতীয় গৌরব পদ রায়, তৃতীয় আনোয়ার হোসেন। বিজয়ীদের অর্থ, সনদ, মেডেল, ক্রেস্টসহ নানা উপহার দেওয়া হয়।