ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার রাওনা ইউনিয়নের বরাইল গ্রামের আল আমিন ঘোড়া নিয়ে গ্রামীণ ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। গতকাল মঙ্গলবার উপজেলার পাঁচুয়া গ্রামে
ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার রাওনা ইউনিয়নের বরাইল গ্রামের আল আমিন ঘোড়া নিয়ে গ্রামীণ ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। গতকাল মঙ্গলবার উপজেলার পাঁচুয়া গ্রামে

শখের বশে ঘোড়া দৌড়ান আল আমিন, এখন সেটাই তাঁর জীবিকা

খোলা মাঠে ঘোড়া দৌড়ান আল আমিন। যখন যেদিকে মন চায়, ঘোড়া নিয়ে সেদিকেই ছুটে যান। বিভিন্ন গ্রামের ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায়ও অংশ নেন। শখের বশে ঘোড়া রাখলেও এখন তা দিয়েই জীবিকা চলে আল আমিনের। স্থানীয় বাসিন্দারা ‘গরিবের ঘোড়ারোগ’ বলে টিটকারি করলেও আপন মনে ঘোড়াকে সঙ্গী করে জীবন কাটাচ্ছেন এই তরুণ।

আল আমিন ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার রাওনা ইউনিয়নের বরাইল গ্রামের নিজাম উদ্দিনের ছেলে। ২৫ বছর বয়সী এই তরুণ দুই সন্তানের জনক। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে পাঁচুয়া গ্রামে ভাষাশহীদ আবদুল জব্বার গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরের পাশে দেখা হয় আল আমিনের সঙ্গে। খোলা মাঠে ঘোড়া দৌড়াচ্ছিলেন তিনি। তা দেখছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা ও পাশের ভাষাসৈনিক শহীদ আবদুল জব্বার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

আল আমিন বলেন, তাঁর যখন আট বছর বয়স, তখন তাঁর বাবা একটি ঘোড়া কেনেন। পরে ঘোড়ার ব্যবসার সঙ্গেও তাঁর বাবা যুক্ত হন। বাড়িতে আনা ঘোড়াকে মাঠে নিয়ে ঘাস খাওয়াতে খাওয়াতে ঘোড়া দৌড়ানো শেখেন। বর্তমানে তাদের চারটি দেশীয় ও একটি ক্রস জাতের ঘোড়া রয়েছে। এর মধ্যে একটি বাচ্চা ঘোড়া।

আল আমিনের ঘোড়া দৌড়ানো দেখছিল ভাষাসৈনিক শহীদ আবদুল জব্বার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল মঙ্গলবার গফরগাঁও উপজেলার রাওনা ইউনিয়নের পাঁচুয়া গ্রামে

আল আমিন বলেন, বাচ্চা ঘোড়া তিন থেকে চার মাস সময় নিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে দৌড়ের জন্য প্রস্তুত করা হয়। ঘোড়াকে কদম দৌড় ও দাপট দৌড় শেখানো হয়। এরপর বিভিন্ন দামে তা বিক্রি করা হয়। নিজেদের ঘোড়ার বাচ্চা ছাড়াও বাজার থেকে ঘোড়ার বাচ্চা কিনে সেগুলোকে দৌড় শেখানো হয়। ঘোড়ার ভালো জাতের বাচ্চা ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হয় এবং বড় ঘোড়া এক থেকে দেড় লাখ টাকায় বিক্রি হয়। তিনি আরও বলেন, আশপাশের জেলা উপজেলায় ঘোড়দৌড় হলে সেখানে এই ঘোড়া নিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। প্রতিবছর ২০ থেকে ৩০টি খেলায় অংশ নেন তিনি। জিতে যা আয় হয়, তা দিয়ে সংসার ও ঘোড়ার খরচও চলে। প্রতিবছর ঘোড়াদৌড় হয় আশ্বিন–কার্তিক মাসে এবং ফাল্গুন মাসের শেষ দিকে।

প্রতি মাসে একটি ঘোড়ার প্রায় চার হাজার টাকার খাবার খরচ লাগে জানিয়ে আল আমিন বলেন, খরচ না করে শুধু ঘাস খাইয়েও রাখা যায়। যখন ঘোড়দৌড় থাকে, তখন ঘোড়ার পেছনে খরচ করা হয়, বাকি সময় ঘাস খাওয়ানো হয়। নিজের জমিজমা থাকায় ভাতের চিন্তা করতে হয় না। তাই শখের বশে ঘোড়া রাখেন বলে জানান এই তরুণ।

স্থানীয় বাসিন্দা তোফায়েল আহমেদ বলেন, ঘোড়া লালন–পালনের রেওয়াজ সব এলাকায় নেই। এ এলাকায় শুধু আল আমিন ঘোড়া রাখেন। আগে অনেকের বাড়িতে ঘোড়া থাকত। তখন যাতায়াতব্যবস্থা ভালো না থাকায় মানুষ ঘোড়া রাখতেন।