রাজশাহীতে প্রতিমা বিসর্জন। বৃহস্পতিবার নগরের পদ্মা নদীর মুন্নুজান ঘাট এলাকায়
রাজশাহীতে প্রতিমা বিসর্জন। বৃহস্পতিবার নগরের পদ্মা নদীর মুন্নুজান ঘাট এলাকায়

দেবী দুর্গার বিদায়ের সুরে রাজশাহীতে প্রতিমা বিসর্জন

দেবী দুর্গার বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসব। রাজশাহীতেও চলছে প্রতিমা বিসর্জন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরের ফুদকিপাড়া এলাকায় মুন্নুজান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে পদ্মা নদীতে শুরু হয় প্রতিমা বিসর্জন। বিকেল গড়িয়ে এলে প্রতিমা বিসর্জনের সংখ্যা বাড়তে থাকে।

আজ বিজয়া দশমীর সকালে রাজশাহীর পূজামণ্ডপগুলোতে অঞ্জলি দেওয়া শুরু হয়। ভক্তরা দলে দলে এসে অঞ্জলি দেন। সকাল থেকেই দুর্গার বিদায়ের সুর বেজে ওঠে। বাজে ঢাকের বাদ্য, শঙ্খ আর উলুধ্বনি। পরে শুরু হয় ‘সিঁদুর’ উৎসব। বিবাহিত নারীরা একে-অপরকে সিঁদুর পরিয়ে দেন।

ভক্তরা বলেন, দেবী দুর্গা অশুভ শক্তিকে ধ্বংস করতে এ ধরায় এসেছিলেন। পাঁচ দিন থাকার পর আজ চলে যাচ্ছেন। এটা তাঁদের জন্য দুঃখের একটি দিন। তবে তাঁরা মায়ের কাছ থেকে আশীর্বাদ নিয়েছেন।

নগরের ঘোড়ামারা এলাকায় ঘোড়ামারা জোড়া শিবমন্দিরে দুপুরের দিকে সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন বেশ কয়েকজন নারী। তাঁরা একে-অপরের কপালে সিঁদুর মেখে দেন। কেউ কেউ দুই গালভরে সিঁদুর মাখেন।

সিঁদুর উৎসবে অংশ নেওয়া ভারতীয় রায় বলেন, ‘৪০ বছর ধরে এই মন্দিরে সিঁদুর খেলেছি। আজকে সিঁদুর খেলার মাধ্যমে আমরা মূলত স্বামীদের মঙ্গল কামনা করেছি। নিজের পরিবার, সন্তান—সবার জন্য মঙ্গল কামনা করেছি। দেবী মা আজ চলে যাচ্ছেন। তাকে আবার পাব এক বছর পর। তাই আনন্দের মাঝেও বিষাদ আছে।’

ঘোড়ামারা এলাকার প্রতিশ্রুতি মন্দিরে সকালে অঞ্জলি দিতে আসা লক্ষ্মী রাণী বলেন, ‘দুর্গাপূজা সবাইকে এক করে দেয়। আমরা পরিবার-পরিজন একত্র হয়েছি। এটাই এই পূজার অন্যতম দিক।’ আরেকজন ভক্ত তৃপ্তি রায় বলেন, মা দুর্গা মর্ত্যে এসেছিলেন অশুভ শক্তিকে বিনাশ করতে। আজ তাঁর যাওয়ার দিন। মায়ের কাছে তাঁরা আশীর্বাদ চেয়েছেন।

স্বামীর মঙ্গল কামনা করে সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন কয়েকজন নারী। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজশাহীর সাগরপাড়া বরেন্দ্র গোষ্ঠী পূজামণ্ডপে

ঘোড়ামারা জোড়া শিবমন্দিরের পুরোহিত মিলন কুমার চক্রবর্তী বলেন, বোধনের মধ্য দিয়ে মা দুর্গা ষষ্ঠীর দিনে মর্ত্যলোকে আগমন করেন। তিনি এসেছিলেন গজে (হাতি) উঠে। সেদিন থেকে মা পাঁচ দিন, মানে বিজয়া দশমী পর্যন্ত অবস্থান করেন। আজ তিনি দোলনায় করে বিদায় নেবেন। এই সময়কালে তিনি অশুভ শক্তি ধ্বংস করেন। তিনি বলেন, এবার মায়ের কাছে শান্তি চেয়ে এবং সবাই যেন মিলেমিশে থাকা যায়, সেই প্রার্থনা করা হয়েছে।

এদিকে সিঁদুর খেলা শেষে দুপুর থেকে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া শুরু হয় রাজশাহীতে। বেলা তিনটার দিকে নগরের ফুদকিপাড়া এলাকায় পদ্মা নদীতে গিয়ে দেখা যায়, ভ্যানে-ট্রাকে করে প্রতিমা এনে পদ্মার পাড়ে রাখা হচ্ছে। কয়েকটি মন্দিরের প্রতিমা একত্রিত হলেই নৌকায় করে নিয়ে নদীতে বিসর্জন দেওয়া হচ্ছে। শেষবারের মতো বিদায় দিতে অনেকে নৌকায় উঠছেন।

স্থানীয় অখিল সরকার বলেন, দুপুরের পর থেকে প্রতিমা আসা শুরু হয়েছে। এটি রাত ১২টা পর্যন্ত চলতে পারে।

এদিকে ফুদকিপাড়া এলাকায় কয়েক স্তরে নিরাপত্তা দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নির্বিঘ্নে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য গতকাল বুধবার নগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী, আজ বিকেল পাঁচটা থেকে বিসর্জন শেষ না হওয়া পর্যন্ত নগরের কুমারপাড়া মোড় থেকে ২২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোড়, মধু ভ্যারাইটি স্টোর মোড়, আতিয়া স্টোর মোড়, মুন্নুজান স্কুল ও বড় মসজিদ থেকে বড়কুঠি কাস্টমসের গলি শুধু প্রতিমা বহনকারী যানবাহনের জন্য একমুখী চলাচল থাকবে। এ সময় অন্য সব ধরনের যান চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে।

মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) মো. গাজিউর রহমান বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে গত কয়েক দিনের নিরাপত্তা ছিল। আজ প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে বিশেষ ধরনের নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। নির্বিঘ্নে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাও ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। তাদের অনেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারাও মাঠে আছেন।

এবার রাজশাহী জেলায় সর্বমোট ৪৬২টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহী নগরে আছে ৮০টি মণ্ডপ।